কলকাতা, 22 অগস্ট: টানাটানির সংসারেও পুজো কমিটিগুলোর জন্য উপহার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্লাব পিছু অনুদান 50 হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে 60 হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে (Mamata Banerjee) ৷ মোট 43 হাজার পুজো কমিটিকে এই অনুদান দেওয়া হবে ৷ তালিকায় রয়েছে জেলার পুজো কমিটিগুলিও ৷ একই সঙ্গে সিইএসসি (Calcutta Electric Supply Corporation) এবং স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে, পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুৎ বিলে যেন 60 শতাংশ ছাড় দেওয়া হয় । গত বছর বিদ্যুতের খরচের ক্ষেত্রে 50 শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছিল ৷ একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এই সরকারের আমলে দুর্গাপুজো করতে গেলে পুজো কমিটিগুলিকে দমকলের খরচ, কর, বিজ্ঞাপন কর দিতে হয় না । গত বছরের মতো সেই ধারা বজায় থাকছে এবারও । আগের মতোই পুজোর আবেদন করা যাবে অনলাইনে ।
এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উপস্থিত পুজো উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশই তাকিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কী বলেন সেদিকে । করোনার কারণে এমনিতেই রাজকোষের অবস্থা ভালো নয় । সে অবস্থায় অনেকেই মনে করেছিলেন, এ বছর অনুদানের পরিমাণ কমতে পারে । কিন্তু অনুদানের পরিমাণ কমার বদলে মুখ্যমন্ত্রী বর্ধিত হারে অনুদানের কথা ঘোষণা করেন । আর তাতেই খুশি উদ্যোক্তারা । এদিন এক পুজো উদ্যোক্তা এই ঘোষণার পর বলেন, "এমনিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমরা যখনই চেয়েছি, কিছু না কিছু পেয়েছি । তাই এবারও আমরা আশা করেছিলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশ্চয়ই বাড়তি অনুদানের কথা ঘোষণা করবেন । দেখা গেল সেই ভাবনাই সত্যি হয়েছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ঝুলি উজাড় করে দিয়েছেন । আজকে দুর্গা পুজোকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পেছনে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর । তিনি যেভাবে পুজো কমিটিগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন, কীভাবে এগোতে হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশিকা দিয়েছেন তা অভাবনীয় ।"
এদিন ফোরাম ফর দুর্গা উৎসবের তরফ থেকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করা হয়েছে । ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্গাপুজো যে শুধু উৎসব নয়, বিশাল সংখ্যক মানুষের রুজিরুটি, সেটা যদি কেউ বুঝে থাকেন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর কারণেই গোটা বিশ্বের পর্যটকদের চোখ বাংলার দুর্গাপুজোর দিকে । এক্ষেত্রে আমাদেরও দায়িত্ব বাড়ল ৷ মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে আমাদের উপর ভরসা রেখেছেন তার মূল্য আমাদের চোকাতে হবে কাজ করে । বিদেশের মানুষের কাছে যাতে আমাদের দেশের মাথা না নত হয়ে যায় সেটাই নজরে রাখতে হবে আমাদের ।
পুজোর দিনক্ষণ ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 25 সেপ্টেম্বর মহালয়া, ওইদিন থেকে পুজো শুরু হবে । বিসর্জনের দিন ঠিক করা হয়েছে 5, 6, 7 এবং 8 অক্টোবর । সমস্ত জেলায় পুজো কার্নিভ্যাল হবে 7 অক্টোবর এবং কলকাতায় পুজো কার্নিভ্যাল হবে 8 অক্টোবর । রাজ্যে মোট 40 হাজার 92টি পুজো হয় । এর মধ্যে দু'হাজারের বেশি পুজো মহিলা পরিচালিত । কলকাতা পুলিশের আওতাধীন রয়েছে 27 হাজার পুজো মণ্ডপ । সবকিছু নিয়েই এদিন সামগ্রিকভাবে একটা সফল পুজো মরশুম যাতে সম্পন্ন করা যায়, তার জন্য চেষ্টা করার কথা বলেছেন তিনি ।
আরও পড়ুন : ফিরছে কুমারী পূজা, বেলুড় মঠের তরফে প্রকাশিত হল দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট
অন্যদিকে, ইউনেস্কোকে সংবর্ধনা জানাতে রাজপথে দুর্গাপুজোর কাঠামো নিয়ে মিছিল হবে 1 সেপ্টেম্বর (Durga Puja in West Bengal) ৷ ওইদিন সমস্ত অফিসকে 1টার মধ্যে ছুটি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এই মিছিলে অংশ নেওয়ার জন্য প্রায় 10 হাজার ছাত্রছাত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ৷ দুপুর 2টোয় মিছিল শুরু হবে জোড়াসাঁকো থেকে (Rally will be held to thank UNESCO) ৷ মিছিল শেষে ধর্মতলার অনুষ্ঠানে থাকবেন ইউনেস্কোর প্রতিনিধি ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা ৷
প্রসঙ্গত গত বছরই পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজোকে (Bengal tourism) স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো । সেই মতো এবার দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে পুজোর আগেই মেগা মিছিল করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মিছিলে থাকবে দুর্গাপুজোর নানান রঙ । উত্তর থেকে দক্ষিণ নানান ক্লাবের উপস্থিতি । থাকবে থিম ভাবনা, ধুনুচি নাচ, ঢাকির দল ।
আরও পড়ুন : ফিরছে কুমারী পূজা, বেলুড় মঠের তরফে প্রকাশিত হল দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বারবারই বলেন, দুর্গাপুজো যে শুধু বাঙালিদের সবচেয়ে বড় উৎসব তাই নয় । এর একটা ব্যবসায়িক দিকও আছে । দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যে কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা হয় । বহু মানুষের জন্য দুর্গাপুজো সারাবছরের মধ্যে আয়ের প্রধান স্থল । কাজেই আনন্দ-উৎসব-বনেদিয়ানা-বারোয়ারির লড়াই একটা দিক । এর বাইরেও একটা বৃহৎ অর্থনীতি, মানুষের পরিশ্রম এর সঙ্গে জড়িত । এবার 1 সেপ্টেম্বরের মিছিলে সেটাকেও উপস্থাপন করার চেষ্টা হবে ।