কলকাতা, 17 ফেব্রুয়ারি : আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে 2020 সালের মাধ্যমিক পরীক্ষা ৷ চলবে 27 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই বছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা 10 লাখ 15 হাজার 888 জন । গত বছরের তুলনায় যা 33 হাজার কম বলে জানাচ্ছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমার পিছনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের যুক্তি, প্রতি বছর পাশের হার বাড়ছে, তাই পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা কমেছে। যদিও এই যুক্তি কতটা বাস্তবসম্পন্ন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
পরীক্ষা ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ । আজ পর্ষদের তরফ থেকে সাংবাদিক বৈঠকে পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "মোট 2 হাজার 839টি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা হবে । এই বছর মোট 10 লাখ 15 হাজার 888 জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে । এরমধ্যে ছাত্র-পরীক্ষার্থীর সংখ্যা 4 লাখ 39 হাজার 879 জন । ছাত্রী-পরীক্ষার্থীর সংখ্যা 5 লাখ 76 হাজার 9 জন । প্রতি বছর ছাত্রী পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা ছাত্র পরীক্ষার্থীদের তুলনায় বাড়ছে । এ বছরও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে । তবে গত বছরের তুলনায় এবছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে । গত বছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল 10 লাখ 49 হাজার 513 জন । এই বছর তা 33 হাজার কমেছে ।"
পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পিছনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতির যুক্তি, প্রতি বছর পাশের হার বাড়ছে, তাই পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা কমেছে । কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "এই কমে যাওয়ার পিছনে কারণ হচ্ছে, আমাদের বিগত কয়েক বছরে পাশের হার বেড়েছে । 2016 সাল থেকে পাশের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে । 2016 সালে 85.74 শতাংশ, 2017 সালে 85.64 শতাংশ, 2018 সালে 85.49 শতাংশ এবং 2019 সালে সর্বাধিক 86.07 শতাংশ পাশের হার ছিল । ছাত্র-ছাত্রীদের পাশের হার প্রত্যেক বছর বেড়ে যাওয়ার জন্য আমাদের পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা কমেছে ।"
পর্ষদ সভাপতি জানান, আগামীকালের পরীক্ষার জন্য প্রশ্নপত্র ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে পৌঁছে গেছে । আগামীকাল সকাল সাড়ে 10 টার মধ্যে সমস্ত পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছে যাবে । প্রশ্নপত্রের প্যাকেট পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর পরে সেই প্যাকেট প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকার ঘরে খোলা হবে না । সরাসরি পরীক্ষার্থীদের সামনেই খোলা হবে । কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় আরও জানান, "সকাল 11টা 35 মিনিটে পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রত্যেকটা ঘরে প্রশ্নপত্রের সিল করা প্যাকেট বিতরণ করা হবে । 11টা 40 মিনিটে সেই প্যাকেট পরীক্ষার্থীদের সামনে খুলে সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ শুরু হবে যাতে 11 টা 45 মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র পেয়ে যায় । 11 টা 55 মিনিটে খাতা দেওয়া হবে । 12 টা থেকে লেখা শুরু করতে পারবে পরীক্ষার্থীরা । দুপুর 3টে পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে ।"
এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও প্রশাসনের তরফ থেকে । পর্ষদের তরফ থেকে এই বছর পরীক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মোবাইল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । পরীক্ষার্থীদের মোবাইল নিয়ে আসায় নিষেধাজ্ঞা বহু আগে থেকেই রয়েছে । এ বিষয়ে পর্ষদ সভাপতি বলেন, "টিচারদের বলা আছে, কেউ মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারবেন না । পরীক্ষার্থীরা কেউ মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ, কোনও ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, ক্যালকুলেটর পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারবেন না । যদি কোনও পরীক্ষার্থীর কাছে মোবাইল পাওয়া যায় তাহলে শুধু সেইদিনের নয়, তার পুরো পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।"
তিনি আরও বলেন, "রাজ্যের প্রতিটি জেলার প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে যাতে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারেন । আমরা সমস্ত জায়গায় প্রস্তুত পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ।" টালা ব্রিজকে ঘিরে যানজটের কথাও মাথায় রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি ৷ বলেন, "টালা এলাকাটা আগে থেকেই আমাদের নজরে ছিল । সেই জন্য টালা ব্রিজ এলাকার স্কুলগুলোর পরীক্ষাকেন্দ্র আমরা ওই এলাকাতেই ফেলেছি । যাতে পরীক্ষার্থীদের এই টালাব্রিজটা পারাপার করতে না হয়, সেই জন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুত আছি । কিন্তু, এখানেও সমস্যা আছে যে, পরীক্ষার্থী হয়ত টালা ব্রিজের একদিকে থাকে ৷ কিন্তু তার স্কুলটা অন্যদিকে । কিন্তু, সেই সংখ্যাটা খুব কম থাকবে । খুব মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে এদিক-ওদিক করতে হতে পারে । তবে, কলকাতা পুলিশ এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সজাগ ।"