কলকাতা, 25 অগস্ট : যত দিন যাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে সিপিএম ৷ 2011-য় ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ধীরে ধীরে ভেন্টিলেশনে চলে গিয়েছে এই দল । একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তো একেবারে শূন্যে পৌঁছেছে । কেন বারবার এমন হার, তা জানতে একাধিকবার আলোচনায় বসেছে আলিমুদ্দিন ।
সদ্য রাজ্য কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বঙ্গে দলকে চাঙ্গা করতে বৃদ্ধতন্ত্র সরিয়ে তারুণ্যে ভরিয়ে দিতে হবে । রাজ্য কমিটির সদস্যদের বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে 72 বছরে, জেলা কমিটির ক্ষেত্রে তা আরও কম । তবে এই সিদ্ধান্ত বুঝেও বুঝতে চাইছে না দল । তাই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে আলিমুদ্দিন । কোথাও যুব নেতাদের সামনে এগিয়ে দিয়েও ফের পিছনে টানছেন বিমানবাবুরা । বিশ্লেষকদের মতে, সিপিএম একটি অদ্ভুত দল । কারণ, কোথাও বিমানবাবুর মতো পক্বকেশ নেতা তৃণমূলের সঙ্গে একজোটে রাজি হওয়ার কথা ঘোষণা করছেন ৷ আবার উল্টোদিকে অনিলকন্যা অজন্তা বিশ্বাসকে "জাগো বাংলা"য় লেখার জন্য শাস্তি দিয়েছে সিপিএম । তাহলে কোন পথে হাঁটছে আলিমুদ্দিন ? তবে দলে তারুণ্যের জোয়ার আনার সিদ্ধান্ত শুধুই মুখের কথা !
আরও পড়ুন : BJP Meeting : আক্রান্ত কর্মীদের পাশে নেই জেলার নেতারা, সমাধান খুঁজতে পর্যালোচনা বিজেপির
বর্তমানে আলিমুদ্দিন নেতারা যা করতে চাইছেন, সেটা যে কোথাও মিল খায় না । কারণ, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ঐশী, মীনাক্ষীদের মুখ করেও তাঁদের লাগাম টেনে রেখেছিলেন দলের প্রবীণ নেতারা । এতে দলের চেতনা, বুদ্ধি ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে । খোদ রাজ্য কমিটির পর্যালোচনা রিপোর্টে সেই স্বীকারোক্তি করা হয়েছে । বলা হয়েছে, পার্টি সদস্যদের চেতনার মান ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে । রাজ্য কমিটির রিপোর্টে আরও একাধিক কারণ দেখানো হয়েছে ভোটে পার্টির ভরাডুবির ক্ষেত্রে । এই যেমন বেশিরভাগ জেলায় পার্টির মাসিক ও ত্রৈমাসিক রিপোর্ট পাঠানো হয় না, পার্টির কর্মসূচিগুলি ঠিকঠাক পালন করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে নজর দেওয়া হয় না। পাশাপাশি দলে মহিলা সদস্যদের সংখ্যাও কমে আসছে, সেই কারণে বাংলার মহিলাদের ভোট টানতে পারেনি সিপিএম ।
2016 সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত রাজ্য সাংগঠনিক প্লেনামে বারবার বলা হয়েছিল, যে কোনও শাখায় মহিলা ও 31 বছরের কম বয়সী যুবকের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করতে হবে । দলে মহিলা সদস্যের লক্ষ্যমাত্রা 25% করার কথা ভাবা হয় । পার্টি সদস্যের 20%-এর বয়স 31 বছরের কম করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । কিন্তু গত 5 বছরের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত কোথাও কার্যকর হয়নি । 2021-এর রাজ্য কমিটির বৈঠকে সেই স্বীকারোক্তি হয়েছে । রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে সিপিএমে মহিলা সদস্যদের সংখ্যা 11%-এরও নিচে । অন্যদিকে 2016-র কলকাতা প্লেনামে 31 বছরের কমবয়সীদের যে টার্গেট রাখা হয়, সেখানেও কার্যত ভরাডুবি হয় সিপিএমের । বর্তমানে দলে 31 বছরের কমবয়সী সদস্যের হার মাত্র 9% ।
আরও পড়ুন : Dilip Ghosh : বিজেপি বঙ্গভঙ্গ চায়নি, সোনার বাংলা চেয়েছে ; মন্তব্য দিলীপের
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে সিপিএম যতই দলের প্রথম সারিতে মীনাক্ষীদের মতো তরুণ মুখ রাখুক না কেন, তা বড় ঠুনকো । কারণ, রাজ্য কমিটির রিপোর্ট যা বলছে তাতে দলের পদ আঁকড়ে রয়েছে সেই বৃদ্ধতন্ত্র । অর্থাৎ আলিমুদ্দিন ভেন্টিলেশনে যাওয়া সিপিএমকে বাঁচাতে যে সব প্রবীণদের সরিয়ে নতুন রক্ত সঞ্চারের কথা ভাবছে, তা কার্যকর করতে গেলে বেশ কিছুটা বেগ পেতে হবে ।