কলকাতা, 10 মে : ঋতুস্রাব একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক জিনিস । নাবালিকার থেকে একজন পরিপূর্ণ নারী হয়ে ওঠার নিয়মের একটা স্বাভাবিক অঙ্গ হল পিরিয়ড । এই নিয়ে যে সংকুচিত হওয়া বা অস্বস্তিতে পড়ার মতো কিছু নেই, তা বারবার উঠেছে এসেছে বিজ্ঞাপন ও সিনেমার মধ্য দিয়ে । করা হয়েছে অনেক সচেতনতামূলক প্রচারও । তবে তাতে কি খুব একটা লাভ হয়েছে ? এই প্রশ্নই আরও একবার উঠে এসেছিল যখন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক হোটেলে বিছানার চাদরে ঋতুস্রাবের রক্ত লাগায় অধ্যাপিকাকে বিলের সঙ্গে দিতে হয়েছে অতিরিক্ত টাকা (professor fined at hotel for Period stains in bedsheet) ।
বিষয়টি নিয়ে সর্বপ্রথম ইটিভি ভারতে খবর প্রকাশিত হয় । এরপরেই খবরটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে । ইতিমধ্যেই যেই অ্যাপ নির্ভর হোটেল বুকিং সংস্থার মাধ্যমে মালবিকা দাস হোটেলে ঘর বুকিং করেছিলেন তাদের ইমেলে পুরো ঘটনাটি লিখে অভিযোগ জানিয়েছেন । মালবিকা দাস বলেন, "আপনাদের মাধ্যমে যে আরও পাঁচজন বিষয়টি জানতে পারলেন, এর ফলেই অনেকটা প্রচার ও সচেতনতা তৈরি করবে । এটাই আমার আশা । যেহেতু আমি ওই হোটেলের কোনও ইমেল খুঁজে পাইনি তাই অ্যাপ নির্ভর হোটেল বুকিং সংস্থার ইমেলে আমার অভিযোগ জানিয়েছি । যদিও তাদের তরফে এখনও কোনও উত্তর পাইনি ।"
পাশাপাশি রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় আজ বিষয়টির তীব্র নিন্দা করেন (Leena Gangopadhyay comments on Period Stains incident)। তিনি বলেন, "একবিংশ শতাব্দীতে এসে এরকম একটা ঘটনা একেবারেই অনভিপ্রেত । মহিলাদের শরীরের এটা একটা সাধারন ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । তবুও আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বহু পরিবার এবং সমাজের একাংশ এই বিষয়টিকে সংস্কারের মধ্যে বেঁধে রেখেছে । ঋতুস্রাব চলাকালীন অনেক শুভ কাজে মহিলারা যোগ দিতে পারেন না । এগুলো সোশ্যাল ট্যাবু ছাড়া আর কিছুই নয় । এর পেছনে যে বিজ্ঞানটা রয়েছে সেটা কেউ জানেনা বা জানতেও চান না । তাই একেবারে স্কুল পর্যায় থেকেই গড়ে তুলতে হবে সচেতনতা । সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বদলটা খুব দরকার ।"
উদাহরণ স্বরূপ তিনি আর বলেন, "যদি কোনও শিশু বিছানায় বাথরুম করে ফেলত সেই ক্ষেত্রে কি হোটেল শিশুর অভিভাবকের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিত । হোটেল কর্তৃপক্ষ যখন এই ব্যবসা এত দিন ধরে চালাচ্ছেন তখন এইসব বিষয়গুলি তো তাদের ভাবতেই হবে । আর এইটুকু ক্ষতি তাদের মেনে নিতে হবে । এটা তো ব্যবসার অঙ্গ । এই বিষয় মালবিকাদেবীকে তাঁর কাকা এবং অন্যান্যদের সামনে যেভাবে অপামানিত হতে হয়েছে তা একেবারেই কাম্য নয় ।" এর আগেও আমরা অনেক ঘটনায় নিজেরাই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছি । তবে তা ঘটনার গুরুত্ব বুঝে । মালবিকাদেবী যদি বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন বা করেন তাহলে আমরা নিশ্চই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব ।"
আরও পড়ুন : Professor Fined for Period Stains : চাদরে ঋতুস্রাবের দাগ ! অধ্যাপিকাকে 'জরিমানা' হোটেলের
অন্যদিকে মালবিকা দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপাতত বিষয়টি নিয়ে রাজ্য মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হবেন না তিনি ৷ কারণ ইতিমধ্যেই তিনি একটি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন যেই অ্যাপ নির্ভর হোটেল বুকিং সংস্থার মাধ্যমে ঘর বুক করেছেন সেখানে ।