কলকাতা, 6 ফেব্রুয়ারি: লতা মঙ্গেশকর জন্মগতভাবে বাঙালি ছিলেন না । বাংলা বুঝতেনও না । কিন্তু, ভাষাটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি (lata mangeshkar loved bengali language)। তাই শুধু বাংলা শিখবেন বলে বাড়িতে শিক্ষক রেখেছিলেন। শিক্ষকের নাম ছিল বাসু ভট্টাচার্য।
সারা সঙ্গীত জীবনে ২০০ টি'র কাছাকাছি বাংলা গান গেয়েছেন তিনি । ছায়াছবির গান হোক বা বাংলা আধুনিক, সবেতেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ । তাঁর গাওয়া সব গানই হিট । 'নিঝুম সন্ধ্যায় পান্থ পাখিরা', 'ও পলাশ ও শিমুল', 'ঝিলিক ঝিলিক ঝিনুক খুঁজে পেলাম', 'আমি যে কে তোমার তুমি তা বুঝে নাও', 'কৃষ্ণচূড়া শোন শোন শোন'-সহ একাধিক গান আছে তাঁর কণ্ঠে আজও জনপ্রিয় । তবে খুব বেশি রবীন্দ্র সঙ্গীত গাননি তিনি (Lata Mangeshkar sang a few Rabindra Sangeet)। মনে করতেন এই গান তাঁর কণ্ঠে মানায় না । এর থেকেই বোঝা যায় কতখানি নিজের সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা ছিল তাঁর । গেয়েছেন 'শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা', 'সখী ভাবনা কাহারে বলে', 'হৃদয় আমার নাচেরে'র মতো গুটিকয়েক রবীন্দ্র সঙ্গীত । সেগুলিই বাঙালি মনে রেখেছে আজও । বাঙালি শুধু তাঁর বাংলা গানই নয়, আজও ভালবাসেন তাঁর সুপারহিট সব হিন্দি গান । "দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা'র মতো গান তিনি গেয়েছেন প্রৌঢ় বয়সেই । তাতেই কেঁপেছে বলিউড । বহু বাঙালি সুরকার-গীতিকারের সঙ্গে কাজ করেছেন সুরসম্রাজ্ঞী । বাংলা সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি । হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মহঃ আজিজের সঙ্গে একাধিক বাংলা ছবিতে দ্বৈতকণ্ঠে গান গেয়েছেন তিনি । যে গান আজও বাঙালিকে প্রেমের ছোঁয়া দেয়, আবেগে ভাসায় । মাধবী মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, লিলি চক্রবর্তী, মহুয়া রায়চৌধুরী, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-সহ আরও বহু নাম আছে যাঁরা লিপ দিয়েছেন তাঁর কণ্ঠে । এই প্রসঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, " বহু নায়িকা তাঁর গলার জাদুতে এই ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিয়েছেন ।" হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী সূত্রে জানা যায়, শশধর মুখোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে তিনি তখন মুম্বইতে কাজ শুরু করেন, তখন 'আনন্দমঠ' ছবিতে 'বন্দেমাতরম' গানের সুর করতে হয় তাঁকে । গায়িকা হিসেবে হেমন্ত কুমারের প্রথম পছন্দ ছিলেন লতা মঙ্গেশকর । কথাটা শশধর মুখোপাধ্যায়কে জানালে তিনি বলেছিলেন," লতাজি গাইবেন না ।" সেদিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন মুম্বইয়ের হেমন্ত কুমার অর্থাৎ বাংলার হেমন্ত মুখোপাধ্যায় । লতা মঙ্গেশকর তখন থাকতেন নানাচকে । সেখানে গিয়ে সুরসম্রাজ্ঞীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি । আড্ডা, খাওয়াদাওয়া হয় । এরপর আসল কথাটা পাড়লে লতা মঙ্গেশকর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে বলেন," ফিল্মিস্তানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল নয়, গাইব না ঠিক করেছি ওদের সঙ্গে । তবে, আপনি যখন বলছেন গাইব । পারিশ্রমিকের প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, শুধু আপনার জন্যই গাইছি । পয়সার জন্য নয়।"
আরও পড়ুন: Lata Mangeshkar : বিনা পারিশ্রমিকে গাইলেন লতা, অর্থ গেল বিশ্বকাপজয়ী কপিলদের হাতে
সলিল চৌধুরীর সুরে বহু গান গেয়েছেন তিনি । একবার এক অনুষ্ঠানে গাইতে এসে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সলিল চৌধুরীর স্ত্রী স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী প্রয়াত সবিতা চৌধুরী সহাস্যে বলেন, "সব ভাল রোম্যান্টিক প্রেমের মিষ্টি গান উনি লতাজি'কে দিয়ে গাওয়াতেন । আর আমাকে দিয়ে গাওয়াতেন, 'ও বউ কথা কও বলে পাখি আর ডাকিস না'র মতো জ্ঞান দেওয়ার গান ।" সলিল চৌধুরীকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন লতা মঙ্গেশকর । সর্বসমক্ষে বলতেন, "সলিল চৌধুরী এক বিরল প্রতিভা ।"