কলকাতা, 22 জুলাই : পরীক্ষা না দিয়েও এবারের অধিকাংশ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীই প্রচুর নম্বর পেয়ে পাস করে গিয়েছে ৷ যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক ৷ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনও ৷ তাদের বক্তব্য, কোভিড আবহে এ বছর নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার ফল অনুসারেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়া হয়েছে ৷ সমস্য়া হল, নবম শ্রেণির পরীক্ষা নেয় স্কুল ৷ আর মাধ্যমিকের দায়িত্বে থাকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ৷ পরীক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্র স্কুলগুলি সবসময় নির্দিষ্ট মাপদণ্ড মেনে চলে না ৷ আর তার জেরেই এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অধিকাংশের কপালেই অতিরিক্ত নম্বর জুটে গিয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, এবারের না হওয়া মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা 90 শতাংশেরও বেশি ৷ একজনও অকৃতকার্য না হওয়ায় পাসের হার 100 শতাংশ ! যা এখনও পর্যন্ত একটা রেকর্ড ৷ এই ঘটনায় প্রমাদ গুণছেন শিক্ষকরাই ৷ তাঁরা বলছেন, যে সংখ্যক পরীক্ষার্থী এবার পাস করেছে, তাদের সকলকে একাদশ শ্রেণিতে জায়গা দেওয়াই সম্ভব নয় ৷ কারণ, একাদশ শ্রেণিতে ততগুলি আসনই নেই ৷
আরও পড়ুন : মাধ্যমিকে এবার পাশ 100 শতাংশ, সর্বোচ্চ নম্বর পেল 79 জন
শিক্ষক সংগঠনের সদস্যদের একাংশ মনে করছেন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ একটু কঠোর হলেই এই সমস্য়া এড়ানো যেত ৷ তাঁদের মতে, যেহেতু 2019 সালের অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার নম্বর দেখেই এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়া হয়েছে, তাই নবম শ্রেণির ওই মূল্যায়ন কঠোরভাবে হওয়া দরকার ছিল ৷ যা অধিকাংশ স্কুলই করেনি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সংগঠনগুলির সদস্যদের ৷
সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সংগঠনের এক প্রতিনিধি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ স্কুলই কঠোরভাবে মূল্যায়ন করেনি ৷ এবছর করোনা আবহের কারণে মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি ৷ বদলে অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার সময় পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর এবং দশম শ্রেণিতে পাঠরত অবস্থায় তার পারফরম্যান্স দেখে অভ্যন্তরীণ একটা মূল্যায়ন করা হয়েছে ৷ আর এই দুইয়ের ভিত্তিতে 50:50 অনুপাতে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়া হয়েছে ৷ এতে বহু ক্ষেত্রেই পরীক্ষার্থীরা সঠিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে ৷’’
এবছর সব মিলিয়ে 10 লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক পাস করেছে ৷ এদের মধ্যে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা 9 লাখেরও বেশি ৷ যাদের একটা বড় অংশই আবার যোগ্যতার তুলনায় অনেক বেশি নম্বর পেয়েছে ৷ এবার এই বিশাল সংখ্যক পড়ুয়াদের একাদশ শ্রেণিতে কীভাবে জায়গা দেওয়া হবে, সেই প্রশ্ন উঠছেই ৷
আরও পড়ুন : ফর্মে সই না থাকায় রেজাল্ট পাবে না 8 পরীক্ষার্থী, স্কুলে বিক্ষোভ
এবারে মাধ্যমিক পাস করা এমন বহু ছাত্রছাত্রী আছে, যারা বিভিন্ন বিষয়ে 70 থেকে 80 শতাংশ নম্বর পেয়েছে ৷ আদতে ওইসব বিষয়ে তাদের 40 থেকে 45 শতাংশের বেশি নম্বর পাওয়ারই কথা নয় ৷ এবার এই পড়ুয়ারাই একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করবে ৷ এদের মধ্যে যোগ্যতমদের বেছে কীভাবে সুযোগ দেওয়া সম্ভব, তা বুঝে উঠতে পারছেন না শিক্ষকরাই ৷
প্রবীণ শিক্ষক এবং পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সদস্য নবকুমার কর্মকার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কলকাতা শহরের প্রায় 35 হাজার এবং গোটা রাজ্যের 10 লাখেরও বেশি পড়ুয়ার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হয়তো খুব একটা সমস্য়া হবে না ৷ সমস্যা আসলে অন্য জায়গায় ৷ যোগ্য পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষার প্রথম ধাপেই স্কুল বেছে নেওয়ার ন্যায্য সুযোগ পাবে না ৷’’