কলকাতা, 5 নভেম্বর : বৃহস্পতিবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee) ৷ 75 বছর বয়সে চলে গেলেন রাজ্যের এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ । রাজ্যে তৃণমূল সরকারের আমলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলোনোর আগেও তিনি কংগ্রেস জমানায় সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন ৷ কিন্তু কলকাতার এক বড় অংশের মানুষের কাছে আজও তাঁর পরিচয় প্রাক্তন মেয়র হিসেবে ৷ তিনি ছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক ৷
তাই তাঁর চলে যাওয়া শোকের ছায়া নামিয়েছে কলকাতার বহু প্রবীণ নাগরিকের অন্তরে । তিনি কলকাতা পৌরনিগমে মেয়র পদে ছিলেন 2000 সাল থেকে 2005 সাল পর্যন্ত । বহু দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন । মেয়র হিসেবে তাঁর বেশকিছু সিদ্ধান্তে বিতর্ক থাকলেও সাহসী পদক্ষেপের জন্য বিপুল জনসমর্থনও পেয়েছিলেন তিনি । সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতা পৌরনিগমে বোর্ড গঠন করেছিল । শহর কলকাতার উন্নয়নে ও শহরকে পরিষ্কার রাখতে সেসময় বহু দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি ৷ প্রশাসনকে মানুষের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইতেন তিনি ৷ কিন্তু প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নিতেও পিছপা হতেন না মেয়র সুব্রত ৷
একবার কলকাতা শহরের এক পাঁচতারা হোটেলের বহুদিনের পুরকর বকেয়া ছিল । বকেয়া সেই পুরকর আদায় করার জন্য ওই পাঁচতারা হোটেলের জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল তাঁর নির্দেশে । ক্যামাক স্ট্রিটে এক বহুতল বেসরকারি সংস্থা দীর্ঘদিনের বকেয়া কর জমা না দেওয়ায় তাদের অফিসের সামনে আবর্জনার গাড়ি গিয়ে আবর্জনার স্তুপ ফেলে দিয়ে আসে । পরে বাধ্য হয় সেই সংস্থা বকেয়া পুরকর জমা দিতে । এছাড়াও শহরে প্রকাশ্যে মাংস কাটা অর্থাৎ রাস্তার উপর জনসমক্ষে জবাই করা বন্ধ করেছিলেন তিনি ।
আরও পড়ুন : Subrata Mukherjee : আজ বিকেলে শেষকৃত্য সুব্রতর
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আমলেই কলকাতা পৌরনিগমে কর্মসংস্কৃতি ফিরে এসেছিল । পুরকর্মীদের মধ্যে কর্মসংস্কৃতি তৈরিতে জোর দিতেন তিনি । পুরকর্মীদের নিয়মানুবর্তিতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পুর পরিষেবা দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিতেন তিনি । তাঁর আমলেই প্রথম আইন চালু করে বলা হয়েছিল, কলকাতা শহরের পুরানো বাড়িগুলিতে বাইরে থেকে ক্যাপসুল লিফট বসানো যাবে । বিরোধীদের সঙ্গেও অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের । তিনি মেয়র পদে থাকাকালীন সিপিএমের কাউন্সিলররা অবাধে তাঁর ঘরে যাতায়াত করতেন । বিরোধী কাউন্সিলরদের সঙ্গে গল্প করতেন, সময় কাটাতেন সুব্রতবাবু । বিরোধী কাউন্সিলরদের সমস্ত কথা শুনতেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেন ।
বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় তিনি যখন মেয়র পদ সামলাচ্ছেন, সেসময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও পুরমন্ত্রী ছিলেন অশোক ভট্টাচার্য । সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের । সেই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে কলকাতা শহরের জন্য বহু বকেয়া আদায় করেছিলেন তিনি ৷
কলকাতা পৌরনিগমের সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলতেন বর্ণময় ব্যক্তিত্বের সুব্রত ৷ তাঁর এই অকস্মাৎ প্রয়াণে কলকাতা পৌরনিগমের অন্দরেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া ৷