কলকাতা, 7 সেপ্টেম্বর : পর্ণশ্রীতে মা ও ছেলেকে গলা কেটে খুনের ঘটনায় এবার মনস্তাত্ত্বিকের সাহায্য নিচ্ছেন গোয়েন্দারা । ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় যাবতীয় সন্দেহ গিয়ে পড়েছে মৃতার স্বামী তপন মণ্ডলের উপর । পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁকে ইতিমধ্যেই লালবাজারে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দারা ৷ পাশাপাশি এই বিষয় একাধিক মনস্তাত্ত্বিকের সাহায্য নিচ্ছেন গোয়েন্দারা ।
লালবাজার সূত্রে খবর, তপন মণ্ডল গোয়েন্দাদের কাছে কিছু লুকিয়ে যাচ্ছেন । ফলে তাঁকে আবেগতাড়িতভাবে প্রশ্ন করে তাঁর কাছ থেকে গোটা ঘটনাটি জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা । কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা জানান, ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক দল নমুনা সংগ্রহ করেছে । সেই নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে । পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ দেখে মনে হচ্ছে আততায়ী একাধিক হলেও হতে পারে ।
আরও পড়ুন : Behala Murder : বেহালায় মা-ছেলের গলা কাটা দেহ উদ্ধার
ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে যে এলাকা ও সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটের সিসি ক্যামেরা বিকল । ফলে পর্ণশ্রীতে খুনের ঘটনায় আততায়ী সম্পর্কে কোনও তথ্যই পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা । এদিন ঘটনাস্থলে লালবাজারের স্নিফার ডগ নিয়ে তল্লাশি করানো হয় । গোয়েন্দা সূত্রের খবর, স্নিফার ডগ ফ্ল্যাটের সদর দরজা থেকে সোজা বেরিয়ে যাচ্ছে । পাশাপাশি ঘরের একাধিক জিনিসপত্রে যে হাত দিয়েছিল আততায়ী, তাও অনুধাবন করতে পারছেন তদন্তকারীরা ।
পুলিশের অনুমান, দুপুর 3টে থেকে বিকেল 5টার মধ্যেই খুন হয়েছেন পর্ণশ্রীর সুস্মিতা মণ্ডল ও তাঁর ছেলে তমোজিৎ । অন্তত প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই মনে করছে পুলিশ । এদিকে, দুপুর 2টো থেকে 4টে পর্যন্ত সুইচ অফ ছিল স্বামী তপন মণ্ডলের ফোন । পুলিশ যখন তমোজিতের দেহ উদ্ধার করেছে, তখন তার পরনে ছিল স্কুল ড্রেস । গলায় টাই বাঁধা ছিল ।
আরও পড়ুন : School Service Commission: স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপর কোনও ভরসা নেই, ক্ষোভে মামলা থেকে সরলেন বিচারপতি
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, যে সময় ঘটনাটি ঘটেছিল, তখন অনলাইনে ক্লাস করছিল তমোজিত । ঘটনার পর থেকে উধাও সেই মোবাইলও । পুলিশের তরফ থেকে তমোজিৎ মণ্ডলের স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে । অনলাইন ক্লাসের সময় তমোজিতের আচরণে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
পর্ণশ্রীর ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে 2010 সালে বেহালার ঠাকুরপুকুর থানা এলাকার অক্সিটাউনের হাড়হিম করা খুনের ঘটনাকে ৷ ঘটনায় অভিযুক্তদের যাব্বজীবন সাজার কথা শুনিয়েছিল আদালত । অক্সিটাউনে অভিযুক্ত স্বামী নিজের শ্বশুরকে ফোন করে জানায় যে রাতে নিউজ চ্যানেলগুলি দেখতে, সেখানেই নাকি ভয়ের ছবি দেখানো হবে ৷ মৃতার বাবা সেদিন রাত 9টায় খবরের চ্যানেল থেকে নিজের মেয়ের খুনের কথা জানতে পেরেছিলেন ।
আরও পড়ুন : Suvendu Adhikari : শুভেন্দুকে রক্ষাকবচ ! সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন রাজ্যের
2010 সালে 27 সেপ্টেম্বর রাতে অভিযুক্ত অভীক ঘোষের স্ত্রী মৌসুমী ঘোষ এবং তাঁদের পরিচারিকা পারুলবালা ঘোষের গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় । দুই মহিলাকেই হাত ও মুখচোখ বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নলি কেটে খুন করা হয়েছিল । তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, মৌসুমী-হত্যার ঘটনাটি দেখে ফেলায় সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করতে পরিচারিকাকেও খুন করা হয় । ওই সময় বাড়িতে মৌসুমীর দুই শিশুসন্তানও ছিল ।