কলকাতা, 25 অগস্ট : বোলপুরের প্রয়াত পদ্মশ্রী ডাক্তার সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় (Late Padmashree Doctor Susovan Banerjee), যিনি সাধারণ মানুষের কাছে এক টাকার ডাক্তার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন, মৃত্যুর পরও সাইবার দস্যুরা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জালিয়াতি করতে পিছপা হল না বলে অভিযোগ । তবে সাইবার ক্রাইমের (Cyber Crime) কিনারা করতে সিদ্ধহস্ত কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) আধিকারিকদের তদন্তে খোয়া যাওয়া টাকা হাতে পেলেন প্রয়াত চিকিৎসকের মেয়ে ড. মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনার সূত্রপাত কিছু মাস আগে । গত 26 জুলাই কিডনির সমস্যা নিয়ে 84 বছর বয়সে প্রয়াত হন এক টাকার চিকিৎসক পদ্মশ্রী সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় । তার আগে তাঁর মেয়ে মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় জুলাই মাস থেকে তাঁর বাবার চিকিৎসার জন্য অনলাইনে একটি হিমো ডায়ালিসিস মেশিন কেনার বন্দোবস্ত করেন ।
তাঁর অভিযোগ, রাধে কিডনি ইকুইপমেন্ট নামক একটি সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গে তিনি কথা বলেন এবং 13 জুলাই সেই বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে মোট 4 লক্ষ 65 হাজার টাকা বেশ কয়েক দফায় পাঠান ৷ সেই মেশিনটি 22 জুলাই ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু সেদিন মেশিনটি ডেলিভারি হয়নি ।
এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে বারংবার যোগাযোগ করেন ড. মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু তাঁর অভিযোগ ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট সংস্থার যে ক’টি ফোন নম্বর দেওয়া ছিল, সব ক’টি সুইচড অফ পান তিনি । ফলে যোগাযোগ করার আর কোনও রাস্তা তাঁর কাছে ছিল না । এরপরেই তিনি গোটা ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পারেন যে তিনি চরম সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন । ফলে স্থানীয় মানিকতলা থানায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । যেহেতু সাইবার ক্রাইম সম্পর্কিত ঘটনা ৷ তাই তদন্তভার সরাসরি চলে যায় কলকাতা পুলিশের ইস্ট সাভারবান ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম শাখায় । শুরু হয় তদন্ত প্রক্রিয়া ।
লালবাজার সূত্রের খবর, এর পরেই এরপরই তদন্তকারী আধিকারিকরা বিভিন্ন ব্যাংক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন । এরপরই যেই অ্যাকাউন্টগুলিতে ড. মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় টাকা পাঠিয়েছিলেন, সেই সকল অ্যাকাউন্টের মালিকানা খোঁজ করতে থাকেন তদন্তকারী আধিকারিকরা এবং কেওয়াইসির নথিপত্র ও অন্যান্য দলিল থেকে আরও অনেক তথ্য তাঁরা সংগ্রহ করতে থাকেন । এরপরেই সেই অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ অর্থাৎ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা পুলিশ ।
অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্তরা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৷ কেন অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হল, তা জানতে চায়৷ তখনই ব্যাংকের তরফে বিষয়টি গোয়েন্দাদের জানানো হয় ৷ এর পর পুলিশ তিনজনকে চিহ্নিত করে, যারা ওই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করল ৷
তার পর চলতি মাসের শুরুতেই গুজরাতের বরোদা ও সুরাত থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ৷ মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় খোয়া যাওয়া টাকাও ফেরত পেয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : সাইবার প্রতারণায় গ্রেফতার 2, ঝাড়খণ্ড থেকেই চলছিল চক্র দাবি পুলিশের