কলকাতা, 11 এপ্রিল : ফায়ার অডিট করতে চাইছে কলকাতা পৌরনিগম (Kolkata Municipal Corporation) ৷ তাই পৌরনিগমের বিভিন্ন বিভাগে থাকা নথিগুলিকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ কলকাতা পৌরনিগমের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের তরফে এক নির্দেশিকার মাধ্যমে একথা জানানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ কিন্তু সঙ্গে একটি মৌখিক নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ৷ সেখানে জানানো হয়েছে, যে সমস্ত ক্ষেত্রে নথি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা সম্ভব হচ্ছে না, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে সেগুলি নষ্ট করে ফেলতে হবে ৷
আর এই নির্দেশ নিয়েই তোলপাড় পৌরমহল । আধিকারিকদের অনেকেই এই নির্দেশ মানতে নারাজ । পৌরনিগমের অভ্যন্তরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ফায়ার অডিটকে ঢাল করেই কি বিভিন্ন বিভাগের নথি নষ্ট করার পরিকল্পনা করছে কলকাতা পৌরনিগম (Kolkata Municipal Corporation Fire Audit Controversy) ?
বর্তমানে একে একে নানা বিষয়ে শাসকদলের নেতা-কর্মীরা যখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জেরার মুখে পড়ছে বা নানা ঘটনায় নাম জড়িয়ে পড়ছে, তখন এই নির্দেশ নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য বলে জানাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা । তাঁদের কথায়, যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে বহু এমন নথির হদিস মিলবে না, যেগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
যেমন উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে, 2013 সালে 435 ডায়মন্ড হারবার রোড ঠিকানার একটি ঘরে কলকাতা পৌরনিগম সারদা চিটফান্ড সংস্থাকে একই ঠিকানায় 16টি লাইসেন্স দেয় । এছাড়াও বহু এমন ঘটনা যার সঙ্গে এই সমস্ত নথি থাকা গুরুত্বপূর্ণ । আবার কেউ কোনও বিষয় আরটিআই করলে, তিনি কোনও তথ্য পাবেন না ।
পাশাপাশি বহু পুলিশ কেস বা মামলা সংক্রান্ত নথি লাগতেই পারে, প্রয়োজন সেক্ষেত্রে নথি মিলবে কী করে ? ত্রিফলা অনিয়ম থেকে শুরু করে আরও নানা ধরনের অনিয়মের যে অভিযোগগুলি উঠেছিল, সেই সংক্রান্ত নথিগুলি কী হবে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ৷ এছাড়া একাধিক ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করছে । আর সেই আবহে এই পদক্ষেপ নজিরবিহীন ।
কলকাতা পৌরনিগম সূত্রে খবর, লাইসেন্স, কর মূল্যায়ন, বাজার, বস্তির মতো একাধিক একাধিক বিভাগকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । যত নথি আছে সব এ, বি এবং সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে হবে । সেটা করা না-গেলে নথিগুলো নষ্ট করে দিতে হবে । নিয়ম বলছে, গ্রেট এ ক্যাটাগরিতে থাকা নথি চিরকাল (60 বছর) সংরক্ষণ করে রাখতে হয় । বি ক্যাটাগরির নথি 20 বছর পর্যন্ত । সি ক্যাটাগরি ক্ষেত্রে 2 বছর । প্রশ্ন উঠছে, গুরুত্বপূর্ণ কোনটা বা কোনটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেটা কে খতিয়ে দেখবেন ?
প্রসঙ্গত, 2013 সারদাকে লাইসেন্স দিয়েছিল কলকাতা পৌরনিগম । তা 8-9 বছর পুরনো । রোজভ্যালি-সহ একাধিক ভুয়ো সংস্থার তদন্তে এই নথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এমন অনেক নথি যা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে ।
তবে পৌরনিগমের কোনও কর্তা এবিষয় প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি । একাংশের আধিকারিকরা বলছেন, এটা করা মানে নথি ধ্বংস । ক্যাটাগরি অনুসারে সব নথি এখন ভাগ সম্ভব নয় । তাই মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মাত্র পাঁচ বছর পুরনো নথি রেখে বাকি সব নষ্ট করে দেওয়া হয় ।
তাঁদের প্রশ্ন, বেআইনিভাবে কেন নথি নষ্ট করা হবে ? বহু আরটিআই কেস হতে পারে । পুলিশ কেস থাকতে পারে । এছাড়াও অন্য কোন কাজে সেই নথি লাগতে পারে । নথি সংরক্ষণ একটা প্রয়োজনীয় বিষয় ।
তবে এত জটিল করে বিষয়টি দেখছে না পৌর কর্তৃপক্ষ । তাঁদের দাবি, বিপুল পরিমাণ নথি ঘরের পর ঘর জুড়ে । এদিকে জায়গার অভাব। আবার আগুন লাগলে বিধ্বংসী হতে পারে । তাই এমন পরিকল্পনা। তবে কর্তৃপক্ষের যুক্তির পাল্টা আধিকারিকদের একাংশ বলছেন, যে সমস্ত নথি ডিজিটাল রেকর্ড তোলা হচ্ছে সেগুলোই নষ্ট করা যায় কি না দেখতে হবে । আবার যেগুলো বহু পুরোনো সেগুলো তাহলে জরুরি ভিত্তিতে ডিজিটাল রেকর্ড করুক । তবে যাই করুক এত বিপুল নথি ডিজিটাল করতে কয়েক বছর কেটে যাবে । তাই আসল গুলি সংরক্ষণে বিকল্প ভাবুক ।
আরও পড়ুন : KMC Expenditure : খরচে রাশ টানতে কমিটি গড়ল কলকাতা পৌরনিগম, মেয়র পারিষদরা পাবেন ট্যাবের টাকা