কলকাতা, 27 জানুয়ারি : রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সিডি সংক্রান্ত মামলায় আগামী 10 ফেব্রুয়ারি কালীঘাট থানায় মুকুল রায়কে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট ৷ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গোপন তথ্য রয়েছে, এমন একটি সিডি দেড় কোটি টাকার বদলে দেওয়া হবে বলে সুজিত শ্যাম নামে এক ব্যক্তিকে ফোন করেন এক অজানা ব্যক্তি ৷ ফোনে মুকল রায়ের নাম উল্লেখ করা হলে সুজিতের সন্দেহ হয় ৷ তিনি কালীঘাট থানায় মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ জানান ৷
মুকুল রায়ের আইনজীবী শুভাশিস দাশগুপ্ত বলেন, "18-02-2019 তারিখে কালীঘাট থানায় মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের হয় । সুজিত শ্যাম নামে ওই ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করেন ৷ তাঁর অভিযোগ, এক ভদ্রলোক ফোন করে তাঁকে বলেছে, দেড় কোটি টাকা দিলে তাঁকে একটি সিডি দিতে পারেন ৷ যে সিডিতে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা তৃণমূল সরকারকে বিপদে ফেলবে। তৃণমূল সরকারকে রাজ্য থেকে অপসারিত করা যাবে। ওই ব্যক্তি বলেন, এই সিডিটির বিষয়ে তিনি আগে BJP নেতা মুকুল রায়কে জানিয়েছিলেন । মুকুলবাবু বলেছিলেন দুই কোটি টাকা দিয়ে সিডিটা কিনে নেবেন ৷ কিন্তু পরে মুকুলবাবু আর উৎসাহ দেখাননি । এই ঘটনার পর সুজিত শ্যাম সন্দেহ করছেন যে মুকুল রায়ের কোনও সহকারীই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন । এসবই মুকুলবাবুর পরিকল্পনামাফিক করা হচ্ছে । মুকুল রায়ই ষড়যন্ত্রের মাথা । এই মর্মে তিনি কালীঘাট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুকুল রায়কে কালীঘাট থানায় ডাকা হয়েছিল । চলতি বছরের 18 জানুয়ারি তিনি কালীঘাট থানায় হাজিরা দিয়েছিলেন । দীর্ঘক্ষণ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । ফের 28 জানুয়ারি মুকুল রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল কালীঘাট থানা। আমরা সেইজন্যই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি । মিথ্যা মামলায় তাঁকে বারবার হেনস্থা করার জন্যই পরিকল্পনা করে এইসব করা হচ্ছে । আজ হাইকোর্টকে সে কথা জানানো হয়েছে । হাইকোর্ট আগামী 10 ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে এগারোটার সময় কালীঘাট থানায় গিয়ে তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দিয়েছেন মুকুল রায়কে । 12 ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে৷"
আজ হাইকোর্টে মামলার শুনানিতে মুকুল রায়ের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য । তিনি বলেন, "অকারণে শুধুমাত্র হেনস্থা করার জন্য এই ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে । পুনরায় যেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে থানায় না ডাকা হয় ৷" অন্যদিকে রাজ্যের তরফে আইনজীবী বলেন, "এই মামলার তদন্তকারী অফিসার মনে করেন এই ঘটনার এখনও তদন্ত প্রয়োজন । 18 জানুয়ারি মুকুলবাবু কালীঘাট থানায় হাজিরা দিলেও তিনি কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি । সেই জন্যই তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য 28 জানুয়ারি কালীঘাট থানায় ডাকা হয়েছে । ইতিমধ্যে তাঁকে মেইল করে এবং বাই পোস্টে চিঠিও পাঠানো হয়েছে ৷"
মুকুল রায়ের তরফে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "দিল্লিতে 8 ফেব্রুয়ারি বিধানসভা নির্বাচন । মুকুল রায় দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের কাজে নিযুক্ত । ফলে এখন কোনওভাবেই পুলিশের সঙ্গে দেখা করার সময় নেই তাঁর । শুধু শুধু তাঁকে কেন হেনস্থা করবে পুলিশ?" বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যর সওয়ালের জবাবে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, "আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে এই মামলার তদন্তকারী অফিসারের থেকে জানতে হবে । সেই জন্য আমি মুকুল রায়কে নির্দেশ দিচ্ছি আগামী 10 ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে এগারোটার সময় তিনি যেন তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন । সেই অনুযায়ী তদন্তকারী অফিসার রিপোর্ট দেবে হাইকোর্টকে । আগামী 12 ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।"
আইনজীবী শুভাশিস দাশগুপ্ত বলেন, FIR-এ একটি জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে এর আগে ইউটিউবে কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের ফাঁস হওয়া একটি কথোপকথনের উল্লেখ করা হয়েছে ৷ সেই চ্যানেলের মালিককে গুগলের মাধ্যমে একটি নোটিশ দিয়েছিলেন কিন্তু এখনও অবধি কোনও জবাব আসেনি৷ কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য প্রযুক্তি দপ্তরকেও পাঠানো নোটিশের কোনও জবাব আসেনি৷ তাই হাইকোর্ট কালীঘাট থানার OC-কে নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীকে একটি নোটিশ দিতে, যেখানে মামলার পরবর্তী শুনানির দিনে মুকুল রায়ের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা থাকবে৷"