কলকাতা 12 নভেম্বর: মল্লারপুরের 14 বছর বয়সি কিশোরের লকআপে মৃত্যুতে SP-র কাছে রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি হরিশ টেন্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ আজ এই নির্দেশ দিয়েছে ।
কয়েকদিন আগেই মল্লারপুরের বছর চোদ্দোর শুভম মেহেনার মৃত্যুর পর রাজনৈতিক চাপানউতোর তৈরি হয়েছিল। এই ঘটনা সংবাদপত্রে দেখার পর কলকাতা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে। SP এবং চাইল্ড রাইট কমিশনের রিপোর্ট তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু আজকে SP যে রিপোর্ট পেশ করে তাতে একাধিক ত্রুটি রয়েছে বলে অভিমত কলকাতা হাইকোর্টের। পাশাপাশি চাইল্ড কমিশন রিপোর্ট আদালতে যে রিপোর্ট দিয়েছে তা পুলিশেরই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। চাইল্ড রাইট কমিশনের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের স্বতন্ত্র তদন্তে কী উঠে আসছে তা জানাতে হবে। 25 নভেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে সব পক্ষকে। 25 নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি।
চুরির অভিযোগে মল্লারপুর থানার পুলিশ বাউরি পাড়ার শুভম মেহেনা নামে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে। ওই কিশোরের পুলিশ লকআপের মধ্যেই মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় মল্লারপুর এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলিও বিক্ষোভ দেখায় এবং পথ অবরোধ করে। BJP-র পক্ষ থেকে 12 ঘণ্টার বন্ধও ডাকা হয় ৷ মল্লারপুর থানার সামনেও বিক্ষোভ দেখায় এলাকার মানুষ ৷ মৃত ওই কিশোরের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন যে লকআপে পুলিশের অত্যাচারেই তার মৃত্যু হয়েছে ৷ কিশোরটিকে পুলিশ চুরির অপরাধে গ্রেপ্তার করলেও তাকে দিন তিনেক লকআপেই রাখে ৷ আদালতে তোলা হয়নি ৷ এই অভিযোদও এলাকার মানুষের পক্ষ থেকে করা হয় ৷এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে সব মহলেই ৷ এর পরেই কলকাতা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে। আদালত ওই মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের রির্পোট দিতে বলে SP এবং চাইল্ড রাইট কমিশনকে ৷ কিন্তু তাদের রির্পোটে খুশি নন বিচারপতি ৷ পুনরায় আলাদাভাবে রির্পোট দেওয়ার নির্দেশ দিল বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি হরিশ টেন্ডন ডিভিশন বেঞ্চ৷
SP যে রিপোর্ট দিয়েছেন আজ, তাতে বলা হয়েছে 19 অক্টোবর থেকে থানার CCTV খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। এই ব্যাপারে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য পুলিশের DG- কে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যে কোন কোন থানায় CCTV রয়েছে। কোথায় নেই এবং কোথায় খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে তার সমস্ত তথ্য রিপোর্ট আকারে পেশ করতে হবে হাইকোর্টে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রত্যেক থানায় একজন করে চাইল্ড ফ্রেন্ডলি অফিসার থাকার কথা এবং সেই অফিসার হবেন একজন সিনিয়র অফিসার। কিন্তু মল্লারপুরে সেই দায়িত্ব ছিল একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের উপর । এ ব্যাপারেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট । পাশাপাশি ইতিমধ্যেই বীরভূম জেলা ACJM নির্দেশ দিয়েছেন এই ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মুখবন্ধ খামে 25 নভেম্বরের মধ্যে সেই রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা করতে।
হাইকোর্ট সূত্রে জানা যাচ্ছে মোবাইল চুরি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনায় 29 অক্টোবর বেশ কয়েকজনকে মল্লারপুর থানার পুলিশ আটক করে। তার মধ্যে ছিল 14 বছরের কিশোর শুভম মেহেনা । ওই দিন রাতেই লকআপে মৃত্যু হয় শুভমের । BJP-র, দাবি পুলিশের অত্যাচারে মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরের । সেই দাবিতে মল্লারপুরে পর দিন 12 ঘণ্টা বন্ধ ডেকেছিল রাজ্য BJP।