কলকাতা, 24 জুলাই : আবাসিক বন্দিদের চাপে নাজেহাল দশা রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারের কারারক্ষী ও আধিকারিকদের ৷ নিয়ম হল, জেলের প্রত্যেক কারারক্ষীর দায়িত্বে থাকবেন সর্বাধিক পাঁচজন আসামী ৷ অথচ বাস্তবে প্রত্যেক কারারক্ষীকে অন্তত 35 জন আসামীর দেখভাল করতে হচ্ছে ৷ যাদের মধ্যে অনেকেই আবার রীতিমতো আক্রমণাত্মক ৷ সুযোগ পেলেই এইসব আবাসিকরা ঝাঁপিয়ে পড়ে কারারক্ষীদের উপর ৷ অন্যদিকে, হাতেগোনা কারারক্ষীদের একটা বড় অংশই বয়সে প্রৌঢ় ৷ কেউ কেউ আর কিছুদিনের মধ্যেই অবসর নেবেন ৷ ফলে তাঁদের পক্ষে এইসব ভয়ঙ্কর আসামীদের সামলানো আর জেনে বুঝে নিজেকে বিপদে ফেলার মধ্যে কোনও ফারাক নেই ৷
আরও পড়ুন : দশ বছর পর শিলিগুড়ি বিশেষ সংশোধনাগারে চালু হল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র
শুধুমাত্র কলকাতার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের হিসাব তুলে ধরলেই সমস্যা অনেকটা স্পষ্ট হয় ৷ এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে আবাসিক বন্দির সংখ্যা প্রায় 2200 ৷ আর কারারক্ষী রয়েছেন 250-র কাছাকাছি ৷ উপরন্তু, এই সংশোধনাগারেই বন্দি রয়েছে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে ধৃত কওসর শেখ, আইএস জঙ্গি মুসার মতো ভয়ঙ্কর সব অপরাধী ৷ সূত্রের খবর, এই কওসর, মুসারা ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার কারারক্ষীদের উপর হামলা চালিয়েছে ৷ তাতে এক কারারক্ষীর জীবন সংশয় পর্যন্ত তৈরি হয় ৷
এই অবস্থায় রাজ্যের সংশোধনাগারগুলিতে দ্রুত কারারক্ষী নিয়োগ দরকার বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷ কিন্তু সে গুড়ে বালি ৷ দীর্ঘদিন ধরেই এই পদে পর্যাপ্ত সংখ্যায় নিয়োগ হচ্ছে না ৷ যদিও আইজি পদমর্যাদার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সম্প্রতি 500 জনকে কারারক্ষী পদে নিয়োগ করা হয়েছে ৷ কিন্তু তাঁদের প্রশিক্ষণ এখনও শেষ হয়নি ৷ তার উপর এই 500 জনকে গোটা রাজ্যের নিরিখে নিয়োগ করা হয়েছে ৷ অর্থাৎ প্রশিক্ষণ শেষে এঁরা রাজ্যের যেকোনও সংশোধনাগারেই নিযুক্ত হতে পারেন ৷ সুতরাং, এই সামান্য নিয়োগে সমস্যার আশু সমাধান হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখছেন না সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা ৷
আরও পড়ুন : রায়গঞ্জ সংশোধনাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি 25 বন্দি
বর্তমান কারারক্ষীদের বয়সও চিন্তা বাড়াচ্ছে জেল কর্তৃপক্ষের ৷ বয়সের ভারে এঁদের অনেকেই ঠিক মতো হাঁটা-চলাটুকুও করতে পারেন না ৷ তাই, এঁদের পক্ষে দাগী অপরাধীদের সেলে ঢুকে তাদের খাবার দিতে যাওয়ার মানে হল, জেনে বুঝে নিজের বিপদ ডেকে আনা ৷ প্রেসিডেন্সি জেল সূত্রে খবর, খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃত কওসর শেখ একাধিকবার একাধিক কারারক্ষীকে খুনের চেষ্টা করেছে ৷ জঙ্গি মুসা একবার চামচের মুখের অংশটি ঘষে তাকে ব্লেডের মতো ধারাল করে তুলেছিল ৷ পরে এক কারারক্ষী যখন তাকে তার সেলে খাবার দিতে যান, তখনই সেই কারারক্ষীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মুসা ৷ ধারাল চামচ চালিয়ে দেয় ওই কারারক্ষীর গলায় ৷ তাতে গুরুতর জখম হন তিনি ৷ এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে অবিলম্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে কারারক্ষী নিয়োগের দাবি উঠছে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে ৷ কবে সেই দাবি পূরণ হয়, এখন সেটাই দেখার ৷