কলকাতা, 6 জুলাই : রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি রাজনৈতিক দল তার বিপক্ষের সমালোচনায় সরব হবে, এটাই স্বাভাবিক ৷ সেই বিরোধিতা কখনও হয় গঠনমূলক ৷ আবার কখনও তা হয়ে যায় শুধুই বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা ৷
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এখন ঠিক কোন অবস্থায় রয়েছে ? যুযুধান রাজনৈতিক দুই পক্ষ কি একে অপরের গঠনমূলক বিরোধিতা করছে, নাকি বিরোধিতা করতে হবে বলেই বিরোধিতা চলছে ? আপাতত এই প্রশ্নই উঠছে বঙ্গ রাজনীতির প্রধান কুশীলবদের বিরুদ্ধে ৷
আরও পড়ুন : বিধানসভায় পাস বিধান পরিষদ বিল
কারণ, বিধানসভা ভোট পর্ব মেটার পর তৃতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুছিয়ে সবকিছু শুরু করার আগেই এসে পড়ে নারদ কাণ্ডে চার হেভিওয়েটের গ্রেফতারি ৷ যা নিয়ে কয়েকদিন বেশ হইচই হয় রাজনৈতিক মহলে ৷ প্রতিশোধ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে ৷ সেই সময় করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে সবেমাত্র আত্ম-অনুশাসন শুরু হয়েছে রাজ্যে ৷ কার্যত লকডাউনের মতো পরিস্থিতি ৷ তখন শ’য়ে শ’য়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থক হাজির হয়ে যান কলকাতায় সিবিআই-এর দফতর নিজাম প্যালেসের সামনে ৷
তখনই প্রশ্ন উঠেছিল যে এমন অবস্থা হলে তো করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে ? কেন সেই সময় পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিল না ? যদিও এই বিক্ষোভের দায় তৃণমূল তাদের ঘাড়ে নিতে চায়নি ৷ নেতারা বারবার বলেছেন যে ওটা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ ছিল ৷
আরও পড়ুন : কাল নন্দীগ্রাম মামলায় বিচারপতির বেঞ্চ পরিবর্তনের মামলার রায়
সেই ধরনের আরও একটি বিক্ষোভের ছবি সোমবার মহানগরের রাজপথে দেখা গিয়েছে ৷ বিজেপির ডাকা ওই বিক্ষোভ মাঝপথেই পুলিশি হস্তক্ষেপে ভন্ডুল হয়ে যায় ৷ করোনা পরিস্থিতিতে কেন এমন একটি বিক্ষোভ দেখাতে বিজেপি রাস্তায় নামল, উঠেছে সেই প্রশ্নও ৷ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সোমবার অবশ্য বলেছিলেন যে মানুষের স্বার্থেই তাঁরা পথে নেমেছেন ৷ আবার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী নিজাম প্যালেসে তৃণমূলের বিক্ষোভ ও সোমবার বিজেপির বিক্ষোভের সময় পুলিশি আচরণের দ্বিচারিতা নিয়ে সরব হয়েছেন ৷
তবে ভুয়ো ভ্যাকসিন-কাণ্ড নিয়ে তদন্ত চলছে ৷ মূল অভিযুক্ত-সহ কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছে ৷ তাই তার পরও এই আন্দোলন কেন, উঠছে প্রশ্ন ৷ যদিও এই ‘ভুয়ো’ রাজনীতি রাজ্যে ক্রমশ বাড়ছে ৷ কারণ, একের পর প্রতারক গ্রেফতার হচ্ছে ৷ আর তাদের সঙ্গে কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছবি সামনে আসছে ৷ ফলে এই নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি, উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পালটা অভিযোগ তুলতে ব্যস্ত ৷
আরও পড়ুন : দেবাঞ্জন-কাণ্ড থেকে শিক্ষা ! সাধারণের সঙ্গে সেলফিতে 'না' উলুবেড়িয়া উত্তরের বিধায়ক নির্মলের
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস আবার দিল্লিতে তুষার মেহতার অপসারণের দাবিতে সরব ৷ দেশের সলিসিটার জেনারেলের বাসভবনে যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া যাওয়া যায় না, তা প্রমাণ করেত মঙ্গলবার সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ৷ তিনি তুষার মেহতার সাক্ষাৎ না পেয়ে দাবি করেছেন যে শুভেন্দু অধিকারীর নিশ্চয় আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা ছিল ৷
এই নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, সরাসরি মানুষের কথা বলছেন না ৷ প্রত্যেকেই রাজনৈতিক ফায়দা লাভের কথা ভাবছেন ৷ আর এর মাধ্যমে মানুষের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে বলে দাবি করছেন ৷ কিন্তু এতে কি আদৌ মানুষের স্বার্থ সুরক্ষিত হচ্ছে, উঠছে প্রশ্ন ৷
আরও পড়ুন : বিধানসভাতে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগে ওয়াকআউট বিজেপির