কলকাতা, 27 অক্টোবর : রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Alapan Bandyopadhyay) ও তাঁর স্ত্রী সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Sonali Chakravarti Bandyopadhyay) হুমকি চিঠি পাঠানোর ঘটনায় রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের কেমিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের এক কর্মচারী মহুয়া ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করল কলকাতা পুলিশ ৷
লালবাজার সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে পুলিশ ওই মহিলার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৷ প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, গৌরহরি মিশ্র নামে প্রাণনাশের এই চিঠি আসে ৷ যিনি রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের কেমিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের ল্যাবরেটরির কর্মী। চিঠিতে লেখা ছিল "গৌরহরি মিশ্র কেয়ার অফ মহুয়া ঘোষ"। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত, সেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী সোনালি বন্দ্যোপাধ্যায় ।
লালবাজার সূত্রের খবর, এদিন বেশ কয়েকজন মহিলা পুলিশ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে প্রাণনাশের হুমকি চিঠি পাঠানো নিয়ে মহুয়া ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন । জিজ্ঞাসাবাদে মহুয়া পুলিশকে জানান, তিনি এই ঘটনায় কোনওভাবেই যুক্ত নেই ৷ পুলিশ আধিকারীদের তিনি আরও জানান, তাঁকে ফাঁসানোর জন্যই চিঠিতে তাঁর নাম ব্যবহার করা হয়েছে ।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিবের স্ত্রীকে এক লাইনের হুমকি চিঠিটি লেখা হয়েছিল ইংরেজিতে ৷ বাংলায় যার তর্জমা করলে দাঁড়ায়, "আপনার স্বামীকে মেরে ফেলা হবে ৷ কেউ বাঁচাতে পারবে না ৷(Your husband will be killed. No body can save the life of your husband) ৷" চিঠিতে সই রয়েছে জনৈক গৌরহরি মিশ্রের নামে এক ব্যক্তির, কেয়ার অফ মহুয়া ঘোষ ।
আরও পড়ুন : আলাপন-মামলার রায়দান স্থগিত রাখল হাইকোর্ট
তাহলে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি পেশাগত সমস্যার কারণেই উপাচার্যের স্বামীকে প্রাণনাশের হুমকি ? কে বা কারা এই ঘটনায় যুক্ত, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। তদন্তের পাশপাশি আলাপনবাবু ও তাঁর স্ত্রী'র সুরক্ষা ব্যবস্থায় কোনও ফাঁক রাখতে চায়নি কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রাক্তন মুখ্যসচিবের জন্য বিশেষ সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ আলাপন বন্দোপাধ্যায় শুধু রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব নয়, বর্তমানে তিনি এখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য উপদেষ্টাও ৷
অন্যদিকে, বুধবার সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে প্রিন্সিপাল ব্যাঙ্কের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে গতকাল মামলা করেছিলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় । এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষ হয়েছে বুধবার । শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ । দ্রুতই মামলার রায়দান করা হবে বলেও জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ ।
গত 28 মে কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে গড়হাজির থাকার অভিযোগ ওঠে তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ৷ এই ঘটনায় তাঁকে শো-কজ করে কেন্দ্র ৷ এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগও আনা হয়। তদন্ত শুরু করে কর্মীবর্গমন্ত্রক ৷ কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া খারিজের দাবিতে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের কলকাতা বেঞ্চে সম্প্রতি মামলা করেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মামলাই কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের দিল্লি বেঞ্চ। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব ৷