কলকাতা, 1 জুন : দেশের সফল সন্তানদের নামে স্টেশনের নাম রাখার চল রয়েছে ভারতীয় রেলে ৷ সবক্ষেত্রেই এসেছে পুরুষের নাম ৷ তবে দেশের প্রথম মেয়েদের নামে হওয়া স্টেশনের নাম রাখা হয়েছিল একজন বঙ্গতনয়ার নামে ৷ তিনি বেলা বসু (Bela Bose) ৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইঝি ৷ স্টেশনটির নাম বেলানগর স্টেশন (Belanagar) ৷
'2441139, বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে ?' না, অঞ্জন দত্তের গানের সেই বেলা বোসের কথা বলছি না ৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সেজদা সুরেশচন্দ্র বসুর ছোট মেয়ের নাম বেলা বসু ৷ 1941 সালে গৃহবন্দি নেতাজির মহানিষ্ক্রমণে বিশেষ ভূমিকা পালন করা ইলা বসুর ছোট বোন ছিলেন বেলা ৷ কোদালিয়ায় পূর্বপূরুষের ভিটেতেই তাঁর জন্ম ৷
1940 সালে রামগড় কনক্লেভে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ৷ ব্রিটিশদের তাড়াতে কট্টর আন্দোলনের ডাক দেন তিনি ৷ 1936 সালে আজাদ হিন্দ ফৌজের চিফ অফ ইন্টেলিজেন্স হরিদাস মিত্রের সঙ্গে বিয়ে হয় বেলা বসুর ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হরিদাস ও তাঁর তিন সহযোগী স্বাধীনতা সংগ্রামী জ্যোতীশচন্দ্র বসু, পবিত্র রায় ও অমর সিং-কে গ্রেফতার করা হয় দেশদ্রোহের মামলায় ৷ 1945 সালের 11 সেপ্টেম্বর তাঁদের ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয় ৷ তবে মহাত্মা গান্ধির মধ্যস্থতায় তাঁদের মৃত্যুদণ্ড এড়ানো সম্ভব হয়েছিল ৷
আরও পড়ুন: রামদেবের অ্যালোপ্যাথি মন্তব্যের প্রতিবাদে দেশজুড়ে কালা দিবস পালন ডাক্তারদের
পূর্ব এশিয়া থেকে সময়ে সময়ে ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য নেতাজির পাঠানো আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্যের সঙ্গে বিচক্ষণতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ও তাঁদের দেখাশোনার গুরুদায়িত্ব ছিল বেলা বসুর কাঁধে ৷ 1944 সালে একটি গোপন ট্রান্সমিশন সার্ভিস গঠন করা হয়, তার মাধ্যমে কলকাতার কেন্দ্র থেকে সিঙ্গাপুরে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠানো হত ৷ জানুয়ারি মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই পরিষেবা চলে ৷ কলকাতায় এই ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব দিতেন বেলা বসু ৷ এই সময়কালে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়াতেও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন ৷ তাঁর স্বামী হরিদাস মিত্র গ্রেফতার হওয়ার পরই এই যাবতীয় দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন নেতাজির ভাইঝি ৷ ওডিশার উপকূল এলাকায় এসে পৌঁছনো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিরাপদ জায়গা করে দিতে প্রবল ঝুঁকি নিয়েছিলেন বেলা বসু ৷
স্বাধীনতার পর হরিদাস মিত্র কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ভোটে জিতে বিধানসভার উপাধ্যক্ষ হন ৷ তবে তাঁর স্ত্রী বেলা রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেননি ৷ তার বদলে ঝাঁসি রানি নামে একটি দল গঠন করে সমাজসেবা চালিয়ে যেতে থাকেন ৷ অক্লান্ত পরিশ্রমে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর পুনর্বাসনে কাজ করে গিয়েছেন বেলা বসু ৷ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই কাজ করার জন্য বালি-ডানকুনি লাইনের অভয়নগরে তিনি ক্যাম্প তৈরি করে সেখানেই থাকতেন ৷ নিরলস পরিশ্রমে ক্রমে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে ৷ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি ৷ 1952 সালের জুলাই মাসে তাঁর জীবনাবসান হয় ৷
আরও পড়ুন: মদের হোম ডেলিভারিতে ছাড়পত্র দিল্লি সরকারের
বরারবর প্রচারের আড়ালে থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করে গিয়েছেন বেলা বসু ৷ তাঁর অবদান অনেকেই মনে রাখেননি ৷ যোগ্য জায়গা পাননি ইতিহাসের পাতায় ৷ তবে দেশের এই মহীয়সী সন্তানকে কুর্নিশ জানিয়ে তাঁর নামে একটি রেলস্টেশন তৈরি করেছে ভারতীয় রেলওয়ে ৷ অভয়নগরে তাঁর একসময়ের শরণার্থী শিবিরের কাছেই বর্ধমান কর্ড লাইনে রয়েছে বেলানগর স্টেশন ৷ এই প্রথমবার দেশের কোনও কন্যাসন্তানের নামে স্টেশনের নাম রাখে ভারতীয় রেল ৷ বেলা বসুর ছেলে বর্তমানে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ৷