ETV Bharat / city

গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে অপরিচ্ছন্ন দাঁত-মাড়ি !

অপরিচ্ছন্ন দাঁত ও মাড়ি থেকে জীবাণু পৌঁছে যেতে পারে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে ৷ ফলে গর্ভস্থ সন্তানের গঠনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে ৷ সন্তান কম ওজনের হতে পারে ৷ বা সময়ের আগে সন্তানের জন্ম হতে পারে ৷ এমনকী মৃত্যুও হতে পারে ৷ তাই গর্ভস্থ অবস্থায় দাঁত ও মাড়ির বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন ৷

ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Oct 24, 2019, 1:57 PM IST

কলকাতা, 24 অক্টোবর : দাঁত বা মাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখলে বাসা বাঁধতে পারে জীবাণু । সেই জীবাণু পৌঁছে যেতে পারে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে । যার জেরে, গর্ভস্থ সন্তানের গঠনে সমস্যা দেখা দিতে পারে । কম ওজনের অথবা সময়ের আগে গর্ভস্থ সন্তানের জন্ম হতে পারে । এমনকী, মৃত্যুও হতে পারে । প্রেগনেন্সির সময় দাঁত-মাড়ির যত্ন না নিলে কেন এমন হতে পারে? এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হাসপিটালের পেরিয়োডন্টোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, চিকিৎসক তীর্থঙ্কর দেবনাথ ।

প্রেগনেন্সি একটি সম্পূর্ণ বায়োলজিক, সায়েন্টিফিক সিস্টেম । সন্তান যখন গর্ভে আসে তখন থেকে ৯ মাস ধরে মায়ের পেটের মধ্যে বিভিন্ন রকম গতিপ্রকৃতি চলতে থাকে । এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে তার গঠন হয় । পরের তিন মাসে ধীরে ধীরে ওজন বাড়ে । তারপরের তিন মাসের শেষে সন্তানের জন্ম হয় । প্রেগনেন্সির সময় এবং তার আগে মায়েদের যে পরিচর্যা করা হয়, সেই অ্যান্টিনেটাল কেয়ার ৷ সেখানে তার শারীরিক বিভিন্ন রকমের পরিচর্যা করা হয় । হর্মোনাল লেভেল দেখা হয় । রক্তাল্পতা, রক্তচাপ দেখা হয় । কিন্তু, দাঁতের পরিচর্যা কী সঠিকভাবে করা হয়? এ কথা জানিয়ে ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের পেরিয়োডন্টোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাক্তার তীর্থঙ্কর দেবনাথ বলেন, " বিষয়টি সায়েন্টিস্টরা দেখছেন । অ্যান্টিনেটাল কেয়ারের মধ্যে এটা এখনও সে ভাবে আমাদের দেশে, আমাদের পরিবেশে আমরা করে থাকি না । কারণ আমাদের মধ্যে সেই সচেতনতা এখনও নেই । এটা সত্যি কথা, যদি তাঁর দাঁতে বা মাড়িতে কোনও রোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই কম ওজনের অথবা, সময়ের আগে সন্তানের জন্ম হতেই পারে ।"

এক্ষেত্রে শিশুকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও তো অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে ?

তীর্থঙ্করবাবু বলেন, " অবশ্যই ।" তাঁর কথায়, "যে সময়ে সন্তানের জন্ম হওয়ার কথা, তার আগেই যদি সন্তানের জন্ম হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে যে সম্পূর্ণ ডেভলপমেন্ট হয়নি । যখন সম্পূর্ণ ডেভলপমেন্ট হবে না বা শিশুর শরীরের মধ্যে কোনও ইনফ্ল‍্যামেটরি মিডিয়েটর বা, যেগুলি দাঁতের রোগ থেকে শরীরের মধ্যে ফিটাসের মধ্যে যদি থাকে, তা হলে তার গঠনগত সমস্যা তো অবশ্যই থাকবে ।" তিনি বলেন, " প্রি-টার্ম খুব বিপজ্জনক বিষয় । কমপ্লিট টার্ম না হওয়ার আগেই যদি সন্তানের জন্ম হয়, তখন শিশুকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা নিতে হয় । SNCU, ICU সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া আছে । এই অবস্থায় 100 শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুকে বাঁচানোর কথা বলা খুবই মুশকিল ।"

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য...

শুধুমাত্র দাঁতের যত্ন না নেওয়ার জন্য এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়?

তীর্থঙ্করবাবু বলেন, "আমি তো বলব, প্রথম কথা সচেতনতা । আমরা নিজেরা সাধারণ অবস্থায় খাওয়ার পরে কতজন ব্রাশ করি? আমরা অনেকেই করি না । দু'বার হয়তো অনেকে করেন । তিনবার কেউ করেন কি না জানি না । কতক্ষণ ধরে ব্রাশ করতে হবে সেটা আমাদের অনেকেরই জানা নেই । একটি ব্রাশ ক'দিন ব্যবহার করব, সেটাও আমাদের জানা নেই । প্রেগনেন্সির সময় শারীরিক পরিবর্তনগুলির সময় গাইনোকোলজিস্টের কাছে অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন । কিন্তু এর সঙ্গে দাঁতের পরিচর্যা, মাড়ির পরিচর্যা, এ'টা কতজন করান, তা জানা নেই । কারণ এই সচেতনতা আমাদের মধ্যে আসেনি । এটা কিন্তু ধনী-গরিবের বিষয়ে নয় ৷ দাঁতের এই রোগগুলি সবার ক্ষেত্রেই সমান ।"

তা হলে, কীভাবে প্রতিরোধ সম্ভব?

তীর্থঙ্করবাবু বলেন, " ছ'মাস অন্তর দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে । যখন প্রেগনেন্সি আসবে বা প্ল্যান করা হচ্ছে, তখন যেমন থ্যালাসেমিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করানো হয়, সে রকমভাবে দাঁতের রোগ প্রতিরোধের জন্য সচেতন হওয়া জরুরি । প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।"

চিকিৎসা কী রয়েছে?

তীর্থঙ্করবাবু বলেন, " সাধারণত দাঁতের একটি রোগ হয় যেটা দন্তক্ষয় । মাড়িতে হয় জিনজিবাইটিস । দন্তক্ষয় বা জিনজিবাইটিস-এর শুরুর দিকে কোনও যন্ত্রণা হয় না । দাঁত কালো হয়ে গেল, মাড়ি হয়ে গেল লাল । মাড়ি থেকে হয়ত রক্ত বের হল । সাধারণত প্রায় সকলেই এটাকে অবহেলা করেন । অবহেলা করা চলবে না । দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সঠিক পরামর্শ নিতে হবে । দন্তক্ষয়ের শুরুতে চিকিৎসা করলে সহজে সেরে যায় । একটু বেশি হলে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করা হয় । জিনজিবাইটিস সঠিক পদ্ধতিতে দুই-তিনবার করে ব্রাশ করলে খুব সহজে সেরে যায় । না হলে ম্যানুয়াল বা আল্ট্রাসনিক স্কেলিং করলে হয়ে যায় । তারপরেও সমস্যা হলে চিকিৎসা রয়েছে । এখনই দাঁত খুলে ফেলে দিতে হবে, বিষয়টা এমন নয় । যদি দেখা যায় মাড়িতে রক্ত বা পুঁজ জমেছে, তারও চিকিৎসা হয় ।"

মানুষ সচেতন নন । পরিস্থিতি তা হলে কেমন?

তীর্থঙ্করবাবু বলেন, "আমাদের আউটডোরে বা ক্লিনিকে দেখি প্রেগনেন্সি নিয়ে মানুষ হয়ত খুব উচ্ছ্বসিত । কিন্তু তার বেসিক যে ওরাল ক্যাভিটি বা দাঁত বা মাড়ি এটা ওপেন টু দ্যা এনভায়রনমেন্ট ৷ মানে যে কোনও সময় এখান থেকে জীবাণু মুখের মধ্যে ঢুকতে পারে । মুখের মধ্যে এমনিতেই জীবাণু থাকে । ধরা যাক কেউ কিছু খেলেন । কিন্তু দাঁত সে ভাবে পরিষ্কার করলেন না । সাধারণ অবস্থায় যখন প্রেগনেন্সি নেই এর ফলে তখন হয়ত কোনও অসুবিধা হবে না । কিন্তু প্রেগনেন্সির সময় জিনজিবাল যে টিস্যুগুলি রয়েছে, কোষগুলি রয়েছে, তাদের ক্যারিস্টিক পালটে যায় । শরীরে যেহেতু হরমোনাল লেভেলে চেঞ্জ হয়, হয়ত সাধারণ স্টিমুলাসই হয়ত তারজন্য রক্ত পড়ার কারণ হতে পারে । "

তিনি আরও বলেন, "এ জন্য সচেতনতা খুবই দরকার ৷ প্রেগনেন্সির আগে বা প্রেগনেন্সির সময় গাইনোকোলজিস্টের পাশাপাশি ডেন্টিস্টের পরামর্শ প্রয়োজন ।" এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করে চলেছেন । এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "ধরুন, কারও দাঁতে বা, মাড়িতে সংক্রমণ হল । দন্তক্ষয় হল বা, জিনজিভাইটিস হল‌ । তখন তাঁর রক্তে ট্রানজিয়েন্ট ভাবে, মানে ব্যাকটেরিয়াগুলি রক্তে ঘুরতে থাকে । সন্তান যখন গর্ভে আছে এই রক্ত সেই ফিটাসের শরীরে যাচ্ছে । যথারীতি, সেই ফিটাসের শরীরে না জেনে একটি সংক্রমণ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে । আপনি নিজে হয়তো খুব হাইজিন মেন্টেন করছেন । নিজে খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছেন । হয়ত আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন বা, যে সাপ্লিমেন্ট দরকার সে সব খাচ্ছেন । অথচ, আপনার দাঁত বা মাড়ি পরিষ্কার রাখছেন না । সে ক্ষেত্রে আপনি না জেনে, আপনি আপনার হবু সন্তানের ক্ষতি করছেন । এ জন্য সচেতনতাটা খুবই জরুরি ।"

কলকাতা, 24 অক্টোবর : দাঁত বা মাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখলে বাসা বাঁধতে পারে জীবাণু । সেই জীবাণু পৌঁছে যেতে পারে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে । যার জেরে, গর্ভস্থ সন্তানের গঠনে সমস্যা দেখা দিতে পারে । কম ওজনের অথবা সময়ের আগে গর্ভস্থ সন্তানের জন্ম হতে পারে । এমনকী, মৃত্যুও হতে পারে । প্রেগনেন্সির সময় দাঁত-মাড়ির যত্ন না নিলে কেন এমন হতে পারে? এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হাসপিটালের পেরিয়োডন্টোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, চিকিৎসক তীর্থঙ্কর দেবনাথ ।

প্রেগনেন্সি একটি সম্পূর্ণ বায়োলজিক, সায়েন্টিফিক সিস্টেম । সন্তান যখন গর্ভে আসে তখন থেকে ৯ মাস ধরে মায়ের পেটের মধ্যে বিভিন্ন রকম গতিপ্রকৃতি চলতে থাকে । এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে তার গঠন হয় । পরের তিন মাসে ধীরে ধীরে ওজন বাড়ে । তারপরের তিন মাসের শেষে সন্তানের জন্ম হয় । প্রেগনেন্সির সময় এবং তার আগে মায়েদের যে পরিচর্যা করা হয়, সেই অ্যান্টিনেটাল কেয়ার ৷ সেখানে তার শারীরিক বিভিন্ন রকমের পরিচর্যা করা হয় । হর্মোনাল লেভেল দেখা হয় । রক্তাল্পতা, রক্তচাপ দেখা হয় । কিন্তু, দাঁতের পরিচর্যা কী সঠিকভাবে করা হয়? এ কথা জানিয়ে ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের পেরিয়োডন্টোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাক্তার তীর্থঙ্কর দেবনাথ বলেন, " বিষয়টি সায়েন্টিস্টরা দেখছেন । অ্যান্টিনেটাল কেয়ারের মধ্যে এটা এখনও সে ভাবে আমাদের দেশে, আমাদের পরিবেশে আমরা করে থাকি না । কারণ আমাদের মধ্যে সেই সচেতনতা এখনও নেই । এটা সত্যি কথা, যদি তাঁর দাঁতে বা মাড়িতে কোনও রোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই কম ওজনের অথবা, সময়ের আগে সন্তানের জন্ম হতেই পারে ।"

এক্ষেত্রে শিশুকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও তো অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে ?

তীর্থঙ্করবাবু বলেন, " অবশ্যই ।" তাঁর কথায়, "যে সময়ে সন্তানের জন্ম হওয়ার কথা, তার আগেই যদি সন্তানের জন্ম হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে যে সম্পূর্ণ ডেভলপমেন্ট হয়নি । যখন সম্পূর্ণ ডেভলপমেন্ট হবে না বা শিশুর শরীরের মধ্যে কোনও ইনফ্ল‍্যামেটরি মিডিয়েটর বা, যেগুলি দাঁতের রোগ থেকে শরীরের মধ্যে ফিটাসের মধ্যে যদি থাকে, তা হলে তার গঠনগত সমস্যা তো অবশ্যই থাকবে ।" তিনি বলেন, " প্রি-টার্ম খুব বিপজ্জনক বিষয় । কমপ্লিট টার্ম না হওয়ার আগেই যদি সন্তানের জন্ম হয়, তখন শিশুকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা নিতে হয় । SNCU, ICU সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া আছে । এই অবস্থায় 100 শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুকে বাঁচানোর কথা বলা খুবই মুশকিল ।"

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য...

শুধুমাত্র দাঁতের যত্ন না নেওয়ার জন্য এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়?

তীর্থঙ্করবাবু বলেন, "আমি তো বলব, প্রথম কথা সচেতনতা । আমরা নিজেরা সাধারণ অবস্থায় খাওয়ার পরে কতজন ব্রাশ করি? আমরা অনেকেই করি না । দু'বার হয়তো অনেকে করেন । তিনবার কেউ করেন কি না জানি না । কতক্ষণ ধরে ব্রাশ করতে হবে সেটা আমাদের অনেকেরই জানা নেই । একটি ব্রাশ ক'দিন ব্যবহার করব, সেটাও আমাদের জানা নেই । প্রেগনেন্সির সময় শারীরিক পরিবর্তনগুলির সময় গাইনোকোলজিস্টের কাছে অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন । কিন্তু এর সঙ্গে দাঁতের পরিচর্যা, মাড়ির পরিচর্যা, এ'টা কতজন করান, তা জানা নেই । কারণ এই সচেতনতা আমাদের মধ্যে আসেনি । এটা কিন্তু ধনী-গরিবের বিষয়ে নয় ৷ দাঁতের এই রোগগুলি সবার ক্ষেত্রেই সমান ।"

তা হলে, কীভাবে প্রতিরোধ সম্ভব?

তীর্থঙ্করবাবু বলেন, " ছ'মাস অন্তর দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে । যখন প্রেগনেন্সি আসবে বা প্ল্যান করা হচ্ছে, তখন যেমন থ্যালাসেমিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করানো হয়, সে রকমভাবে দাঁতের রোগ প্রতিরোধের জন্য সচেতন হওয়া জরুরি । প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।"

চিকিৎসা কী রয়েছে?

তীর্থঙ্করবাবু বলেন, " সাধারণত দাঁতের একটি রোগ হয় যেটা দন্তক্ষয় । মাড়িতে হয় জিনজিবাইটিস । দন্তক্ষয় বা জিনজিবাইটিস-এর শুরুর দিকে কোনও যন্ত্রণা হয় না । দাঁত কালো হয়ে গেল, মাড়ি হয়ে গেল লাল । মাড়ি থেকে হয়ত রক্ত বের হল । সাধারণত প্রায় সকলেই এটাকে অবহেলা করেন । অবহেলা করা চলবে না । দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সঠিক পরামর্শ নিতে হবে । দন্তক্ষয়ের শুরুতে চিকিৎসা করলে সহজে সেরে যায় । একটু বেশি হলে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করা হয় । জিনজিবাইটিস সঠিক পদ্ধতিতে দুই-তিনবার করে ব্রাশ করলে খুব সহজে সেরে যায় । না হলে ম্যানুয়াল বা আল্ট্রাসনিক স্কেলিং করলে হয়ে যায় । তারপরেও সমস্যা হলে চিকিৎসা রয়েছে । এখনই দাঁত খুলে ফেলে দিতে হবে, বিষয়টা এমন নয় । যদি দেখা যায় মাড়িতে রক্ত বা পুঁজ জমেছে, তারও চিকিৎসা হয় ।"

মানুষ সচেতন নন । পরিস্থিতি তা হলে কেমন?

তীর্থঙ্করবাবু বলেন, "আমাদের আউটডোরে বা ক্লিনিকে দেখি প্রেগনেন্সি নিয়ে মানুষ হয়ত খুব উচ্ছ্বসিত । কিন্তু তার বেসিক যে ওরাল ক্যাভিটি বা দাঁত বা মাড়ি এটা ওপেন টু দ্যা এনভায়রনমেন্ট ৷ মানে যে কোনও সময় এখান থেকে জীবাণু মুখের মধ্যে ঢুকতে পারে । মুখের মধ্যে এমনিতেই জীবাণু থাকে । ধরা যাক কেউ কিছু খেলেন । কিন্তু দাঁত সে ভাবে পরিষ্কার করলেন না । সাধারণ অবস্থায় যখন প্রেগনেন্সি নেই এর ফলে তখন হয়ত কোনও অসুবিধা হবে না । কিন্তু প্রেগনেন্সির সময় জিনজিবাল যে টিস্যুগুলি রয়েছে, কোষগুলি রয়েছে, তাদের ক্যারিস্টিক পালটে যায় । শরীরে যেহেতু হরমোনাল লেভেলে চেঞ্জ হয়, হয়ত সাধারণ স্টিমুলাসই হয়ত তারজন্য রক্ত পড়ার কারণ হতে পারে । "

তিনি আরও বলেন, "এ জন্য সচেতনতা খুবই দরকার ৷ প্রেগনেন্সির আগে বা প্রেগনেন্সির সময় গাইনোকোলজিস্টের পাশাপাশি ডেন্টিস্টের পরামর্শ প্রয়োজন ।" এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করে চলেছেন । এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "ধরুন, কারও দাঁতে বা, মাড়িতে সংক্রমণ হল । দন্তক্ষয় হল বা, জিনজিভাইটিস হল‌ । তখন তাঁর রক্তে ট্রানজিয়েন্ট ভাবে, মানে ব্যাকটেরিয়াগুলি রক্তে ঘুরতে থাকে । সন্তান যখন গর্ভে আছে এই রক্ত সেই ফিটাসের শরীরে যাচ্ছে । যথারীতি, সেই ফিটাসের শরীরে না জেনে একটি সংক্রমণ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে । আপনি নিজে হয়তো খুব হাইজিন মেন্টেন করছেন । নিজে খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছেন । হয়ত আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন বা, যে সাপ্লিমেন্ট দরকার সে সব খাচ্ছেন । অথচ, আপনার দাঁত বা মাড়ি পরিষ্কার রাখছেন না । সে ক্ষেত্রে আপনি না জেনে, আপনি আপনার হবু সন্তানের ক্ষতি করছেন । এ জন্য সচেতনতাটা খুবই জরুরি ।"

Intro:কলকাতা, ২৩ অক্টোবর: দাঁত বা মাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখলে, বাসা বাঁধতে পারে জীবাণু। যে জীবাণু পৌঁছে যেতে পারে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে। যার জেরে, গর্ভস্থ সন্তানের গঠনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কম ওজনের অথবা, সময়ের আগে গর্ভস্থ সন্তানের জন্ম হতে পারে। এমনকী, মৃত্যুও হতে পারে। প্রেগনেন্সির সময় দাঁত-মাড়ির যত্ন না নিলে কেন এমন হতে পারে? এই বিষয় নিয়ে বলেছেন ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের পেরিয়োডন্টোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ডাক্তার তীর্থংকর দেবনাথ।


Body:অনেকে দৈবিক ব‍্যাপার মনে করেন। প্রেগনেন্সি সম্পূর্ণ একটি বায়োলজিক, সায়েন্টিফিক সিস্টেম। সন্তান যখন গর্ভে আসে তখন থেকে ৯ মাস ধরে মায়ের পেটের মধ্যে বিভিন্ন রকম গতিপ্রকৃতি চলতে থাকে। এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে তার গঠন হয়। পরের তিন মাসে ধীরে ধীরে ওজন বাড়ে। তার পরের তিন মাসের শেষে সন্তানের জন্ম হয়। প্রেগনেন্সির সময় এবং তার আগে মায়েদের যে পরিচর্যা করা হয়, সেই অ্যান্টিনেটাল কেয়ার, সেখানে তার শারীরিক বিভিন্ন রকমের পরিচর্যা করা হয়। হর্মোনাল লেভেল দেখা হয়। রক্তাল্পতা, রক্তচাপ দেখা হয়। কিন্তু, দাঁতের পরিচর্যা কি সঠিক হয়? এ কথা জানিয়ে ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের পেরিয়োডন্টোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাক্তার তীর্থংকর দেবনাথ বলেন, "বিষয়টি সায়েন্টিস্টরা দেখছেন। অ্যান্টিনেটাল কেয়ারের মধ্যে এটা এখনও সেভাবে আমাদের দেশে, আমাদের পরিবেশে আমরা করে থাকি না। কারণ আমাদের মধ্যে সেই সচেতনতা এখনও নেই।" তিনি বলেন, "এটা সত্যি কথা, যদি তাঁর দাঁতে বা মাড়িতে কোনও রোগ থাকে, তা হলে অবশ্যই কম ওজনের অথবা, সময়ের আগে সন্তানের জন্ম হতেই পারে।"

এক্ষেত্রে শিশুকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও তো অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে...। এই দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "অবশ্যই।" তাঁর কথায়, "যে সময়ে সন্তানের জন্ম হওয়ার কথা, তার আগেই যদি সন্তানের জন্ম হয়, তা হলে বুঝে নিতে হবে যে সম্পূর্ণ ডেভলপমেন্ট হয়নি। যখন তার সম্পূর্ণ ডেভলপমেন্ট হবে না বা, তার শরীরের মধ্যে কোনও ইনফ্ল‍্যামেটরি মিডিয়েটর বা, যেগুলি দাঁতের রোগ থেকে শরীরের মধ্যে ফিটাসের মধ্যে যদি থাকে, তা হলে তার গঠনগত সমস্যা তো অবশ্যই থাকবে।" তিনি বলেন, "প্রি-টার্ম খুব বিপজ্জনক বিষয়। কমপ্লিট টার্ম না হওয়ার আগেই যদি সন্তানের জন্ম হয়, তখন শিশুকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা নিতে হয়। SNCU, ICU সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া আছে। এই অবস্থায় ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুকে বাঁচানোর কথা বলা খুবই মুশকিল।"

শুধুমাত্র দাঁতের যত্ন না নেওয়ার জন্য এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়? ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের এই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বলেন, "আমি তো বলব, প্রথম কথা সচেতনতা। আমরা নিজেরা সাধারণ অবস্থায় খাওয়ার পরে কতজন ব্রাশ করি? এটাই আমরা অনেকেই করি না। দুইবার হয়তো অনেকে করেন। তিনবার কেউ করেন কি না জানি না। কতক্ষণ ধরে ব্রাশ করতে হবে, সেটা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। একটি ব্রাশ কদিন ব্যবহার করব, সেটাও আমাদের জানা নেই।" তিনি বলেন, "প্রেগনেন্সির সময়, শারীরিক পরিবর্তনগুলির সময় গাইনোকোলজিস্টের কাছে অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু, এর সঙ্গে দাঁতের পরিচর্যা, মাড়ির পরিচর্যা, এটা কতজন করান, তা জানা নেই। কারণ, এই সচেতনতা আমাদের মধ্যে আসেনি। এটা কিন্তু, ধনী-গরিবের বিষয়ে নয়, দাঁতের এই রোগগুলি সবার ক্ষেত্রেই সমান।"

তা হলে, কীভাবে প্রতিরোধ সম্ভব? ডাক্তার তীর্থংকর দেবনাথ বলেন, "ছয় মাস অন্তর দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যখন প্রেগনেন্সি আসবে, প্ল্যান করা হচ্ছে, তখন যেমন থ‍্যালাসেমিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করানো হয়, সেরকমভাবে দাঁতের রোগ প্রতিরোধের জন্য সচেতন হওয়া জরুরি। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।" চিকিৎসা কী রয়েছে? তিনি বলেন, "সাধারণত, দাঁতের একটি রোগ হয়, যেটা দন্তক্ষয়। মাড়িতে হয় জিনজিবাইটিস। দন্তক্ষয় বা জিনজিবাইটিস-এর শুরুর দিকে কোনও যন্ত্রণা হয় না। দাঁত কালো হয়ে গেল, মাড়ি হয়ে গেল লাল। মাড়ি থেকে হয়তো রক্ত বের হল। সাধারণত প্রায় সকলেই এটাকে অবহেলা করেন। অবহেলা করা চলবে না। দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সঠিক পরামর্শ নিতে হবে।" তাঁর কথায়, "দন্তক্ষয়ের শুরুতে চিকিৎসা করলে সহজে সেরে যায়। একটু বেশি হলে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করা হয়। জিনজিবাইটিস সঠিক পদ্ধতিতে দু'-তিনবার করে ব্রাশ করলে খুব সহজে সেরে যায়। না হলে ম্যানুয়াল বা আল্ট্রাসনিক স্কেলিং করলে হয়ে যায়। তার পরেও সমস্যা হলে চিকিৎসা রয়েছে। এখনই দাঁত খুলে ফেলে দিতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। যদি দেখা যায় মাড়িতে রক্ত বা পুঁজ জমেছে, তারও চিকিৎসা হয়।"


Conclusion:মানুষ সচেতন নন। পরিস্থিতি তা হলে কেমন? ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের এই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বলেন, "আমাদের আউটডোরে বা ক্লিনিকে দেখি, প্রেগনেন্সি নিয়ে মানুষ হয়তো খুব উচ্ছ্বসিত আছেন। কিন্তু, তাঁর বেসিক যে ওরাল ক্যাভিটি বা দাঁত বা মাড়ি এটা ওপেন টু দ‍্য এনভায়রনমেন্ট অর্থাৎ, কিছু খাবার বা জল খাওয়া হচ্ছে, সব সময় এটা এক্সপোজড টু দ‍্য এনভায়রনমেন্ট। মানে যে কোনও সময় এখান থেকে জীবাণু মুখের মধ্যে ঢুকতে পারে। মুখের মধ্যে এমনিতেই জীবাণু থাকে। ধরা যাক, কেউ কিছু খেলেন। কিন্তু, দাঁত সেভাবে পরিষ্কার করলেন না।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "সাধারণ অবস্থায় যখন প্রেগনেন্সি নেই, এর ফলে তখন হয়তো কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু, প্রেগনেন্সির সময় জিনজিবাল যে টিস‍্যুগুলি রয়েছে, কোষগুলি রয়েছে, তাদের ক‍্যারিস্টিক পালটে যায়। শরীরে যেহেতু হরমোনাল লেভেলে চেঞ্জ হয়, হয়তো সাধারণ স্টিমুলাসই হয়তো তার জন্য রক্ত পড়ার কারণ হতে পারে।"

এই দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, " এই জন্য সচেতনতা খুবই দরকার যে, প্রেগনেন্সির আগে বা, প্রেগনেন্সির সময় গাইনোকোলজিস্টের পাশাপাশি ডেন্টিস্টের পরামর্শ প্রয়োজন।" এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করে চলেছেন। এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "ধরুন, কারও দাঁতে বা, মাড়িতে সংক্রমণ হল। দন্তক্ষয় হল বা, জিনজিভাইটিস হল‌। তখন তাঁর রক্তে ট্রানজিয়েন্ট ভাবে, মানে ব্যাকটেরিয়াগুলি রক্তে ঘুরতে থাকে। সন্তান যখন গর্ভে আছে এই রক্ত সেই ফিটাসের শরীরে যাচ্ছে। যথারীতি, সেই ফিটাসের শরীরে না জেনে একটি সংক্রমণ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনি নিজে হয়তো খুব হাইজিন মেন্টেন করছেন। নিজে খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছেন। হয়তো আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন বা, যে সাপ্লিমেন্ট দরকার সে সব খাচ্ছেন। অথচ, আপনার দাঁত বা মাড়ি পরিষ্কার রাখছেন না। সেক্ষেত্রে আপনি না জেনে, আপনি আপনার হবু সন্তানের ক্ষতি করছেন। এজন্য সচেতনতাটা খুবই জরুরি।"
_______


বাইট:
wb_kol_01a_pregnancy_dental_prob_bite_7203421
ডাক্তার তীর্থংকর দেবনাথ, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ডিপার্টমেন্ট অফ পেরিয়োডন্টোলজি, ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল।

_______
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.