কলকাতা, 3 মে: অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ ও যাত্রী সুরক্ষার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য পরিবহণ দফতরের তরফে যে 'এগ্রিগেটর গাইডলাইন' আজ থেকে রাজ্যে চালু হওয়ার কথা ছিল আবারও তা পিছল । অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এই দেরি বলে অভিযোগ অ্যাপ ক্যাব মালিক ও চালক পক্ষের (App cab aggregator guidelines)।
অ্যাপ ক্যাপ সংস্থাগুলির উপরে রাশ টানতে রাজ্যে 'এগ্রিগেটর আইন' চালু হতে চলেছে, এই বলে রাজ্য পরিবহণ দফতর গত 3 মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে । বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পুরো বিষয়টিকে কী ভাবে বলবৎ করা হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে অ্যাপ ক্যাব সংস্থা এবং অ্যাপ ক্যাব সংগঠনগুলিকে 60 দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল । অর্থাৎ সেই আইন আজ থেকে রাজ্যে চালু হওয়ার কথা ছিল (implementation of App cab aggregator guidelines again got delayed)।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে কতটা কাজ এগলো তা নিয়ে একটি বৈঠক হয় পরিবহণ ভবনে । পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বৈঠক করেন ক্যাব সংস্থা ও ক্যাব সংগঠনগুলির সঙ্গে ।
সিটু অনুমোদিত কলকাতা ওলা উবের ক্যাব অপারেটর অ্যান্ড ড্রাইভার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, "আমরা আশা করেছিলাম যে অ্যাপ ক্যাব কোম্পানিগুলি যে এতদিন খোলা মাঠে দেদার ব্যবসা করছিল, তার উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসবে । কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, রাজ্য সরকার সেই রাশ টানতে অক্ষম । কারণ কথা ছিল যে, রাজ্য পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে অ্যাপ ক্যাবের বেস ফেয়ার বেঁধে দেওয়া হবে ৷ কিন্তু তা এখনও করা হল না । কেন এই দেরি ? তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে ।"
তিনি আরও বলেন যে এই এগ্রিগেটর আইন চালু হতে যত দেরি হবে, ততই লোকসান বাড়বে অ্যাপ ক্যাব মালিক ও চালকদের । কারণ এখন সংস্থাগুলি 30 শতাংশ কমিশন কেটে নিচ্ছে । কিন্তু একবার এগ্রিগেটর আইন চালু হয়ে গেলে 20 শতাংশর বেশি কমিশন কাটা যাবে না । শুধু চালক বা মালিকদের ক্ষেত্রেই নয়, যাত্রীদের থেকেও অনেক বেশি ইচ্ছেমতো ভাড়া নিয়ে নিচ্ছে সংস্থাগুলি । তাই রাজ্য সরকার এই আইনটি প্রণয়ন করতে যত দেরি করবে, তত বেশি সমস্যায় পড়বেন চালক, মালিক ও যাত্রীরা ।" ইন্দ্রজিৎ ঘোষ জানান যে, যদি এক মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে সংগঠন (Bengal Transport department)।
এই একই কথা বলেন এআইটিইউসি অনুমোদিত ওয়েস্টবেঙ্গল ট্যাক্সি অপারেটরস কোর্ডিনেশন কমিটির কনভেনার নাওয়াল কিশোর শ্রীবাস্তবও । তিনি বলেন, "এগ্রিগেটর আইন আজ থেকে চালু হওয়ার কথা ছিল, যা হল না ৷ এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমরা । আগামিকাল সংগঠনের পক্ষ থেকে পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে আমরা চিঠি দিতে চলেছি । এটা আর কিছুই নয়, এই ভাবে রাজ্য সরকার ঘুরপথে সংস্থাগুলিকে সুবিধা পাইয়ে দিল । এর ফলে অ্যাপ ক্যাবচালক ও মালিকরা আরও বেশি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন । আমরা সরকারের উপরে আশা করেছিলাম যে আজ থেকে এই নিয়মটি চালু হলে হয়তো আর্থিক ভাবে আমাদের কিছুটা সুরাহা হবে । তবে তা হল না । সরকার কথা রাখতে পারল না ।"
জানা গিয়েছে, এই তিনটি বড় অ্যাপ ক্যাব সংস্থা এখনও পর্যন্ত এগ্রিগেটের লাইসেন্স নবীকরণের ট্যাক্স দিয়ে উঠতে পারেনি । তাই সংস্থাগুলি রাজ্য সরকারের থেকে আরও কিছুটা সময় চেয়ে নিয়েছে । তাই রাজ্য সরকার গাইডলাইন প্রণয়নের মেয়াদ বাড়িয়েছে । বহুদিন ধরেই অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলির উপর আস্থা হারিয়েছে মালিক ও চালকেরা । বেশি ভাড়া নেওয়ায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরাও । কম কমিশন থেকে আইডি ব্লকের মতো একাধিক অভিযোগ উঠেছে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ।
কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক অনেক আগেই এই আইন এনেছিল । তবে রাজ্যে অনেক দেরি করে হলেও এই আইনটি চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।
কী আছে নতুন নির্দেশিকায় ?
- বেঁধে দেওয়া হবে সর্বোচ্চ ভাড়া
- চালকদের ন্যূনতম 30 ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নিতে হবে
- প্রত্যেকটি গাড়িতে বাধ্যতামূলক ভাবে প্যানিক বাটন ও এআইএস 180 ট্র্যাকিং সিস্টেম থাকতে হবে
- মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে জিরো টলারেন্স
- অ্যাপে যাত্রীদের লোকেশন শেয়ার করার ব্যবস্থা রাখতে হবে
- চালক রাইড বাতিল করলে জরিমানা 100 টাকা । সেই জরিমানার টাকা চলে যাবে যাত্রীর অ্যাকাউন্টে
- যাত্রী যদি নির্দিষ্ট অপেক্ষার সময়ের আগেই রাইড বাতিল করেন, তবে সে ক্ষেত্রে যাত্রীকে 100 টাকা জরিমানা দিতে হবে ৷ সেই টাকা চলে যাবে চালকের অ্যাকাউন্টে
- অ্যাপ চালককে ন্যূনতম 5 লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা ও 10 লক্ষ টাকার মেয়াদী বিমার ব্যবস্থা করে দিতে হবে