কলকাতা, 12 জুলাই: সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই ৷ মানবিকতা সবচেয়ে দামি, তার সঙ্গে ধর্ম বা সম্প্রদায়ের কোনও যোগ নেই ৷ এটাই যেন আরও একবার প্রমাণ করে দিল কলকাতার টালা পার্কের মানুষজন ৷ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ - সব সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিত হয়ে 55 বছরের পুরনো শিব মন্দির সংস্কারের কাজ শেষ করলেন (Message of Communal Harmony) ৷
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যখন হানাহানি ঘাত-প্রতিঘাতের ঘটনা ঘটছে, তখন টালা পার্কে ধরা পড়ল একটু আলাদা ছবি ৷ প্রতি সোমবার এই শিব মন্দিরে ভোগ বিতরণ হয় । পাড়ার হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ তা গ্রহণ করেন । অফিস, কাজ সেরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে উপস্থিত হন । নানা আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে । মন্দির কমিটিতেও বিভিন্ন পদে আছেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষজন ।
55 বছরের পুরনো কলকাতার টালা পার্কের ওই শিবমন্দির নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে । আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন দিন কয়েক আগে হলেও এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে । আর এই সংস্কারে এখনও পর্যন্ত প্রায় 25 লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে । সেই অর্থ জোগাড় করেছেন আফতাব খান, ফিরোজ, অমৃত লিম্ব, বিনয় পাঠকরা । এলাকার সমস্ত ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থাকার পাশাপশি মন্দির সংস্কারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়েছেন তাঁরা ।
সোমবার সন্ধেয় শিব মন্দিরে পৌঁছে দেখা গেল, মন্দির চত্বরে গোল করে বসে সংস্কারের খরচ হিসাব করছেন আফতাব খান, বিকে পাঠক ও অমিত লিম্ব-রা । কিছুক্ষণ পরে ভোগ বিতরণ শুরু করেন আফতাব খান ও বাকিরা । স্থানীয় বাচ্চা থেকে বয়স্ক - সকলেই লাইন দিয়ে সেই ভোগ গ্রহণ করছেন । দেশে যখন ধর্মের নামে অশান্তি ছড়াচ্ছে, ঠিক তখন টালাপার্কের কাছে ইন্দ্র বিশ্বাস রোডের শিব শক্তি সমিতি সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের কাছে এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠেছে(Hindu Muslim Buddhist community united in renovation of Shiv temple in Tala Park) ।
শিব শক্তি সমিতির সহ-সভাপতি আফতাব খান বলেন, "শিব মন্দিরটি 54 বছরের পুরনো । পাশের রাস্তা সংস্কারের পর মন্দিরটি তুলনামূলক ভাবে নিচু হয়ে যায় । মন্দিরের সৌন্দর্যও হারাতে থাকে । তাই আমরা সংস্কার করার পরিকল্পনা নিই । স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসনের তরফে অনুমতি পাওয়ার পরই কাজ শুরু হয় । কিন্তু বাধ সাধে বিপুল অর্থের প্রয়োজন । তড়িঘড়ি নিজের ঘর থেকে অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি পাড়ার সকলের থেকে সাহায্য চাওয়া হয় । সকলে এগিয়ে আসেন ।"
আরও পড়ুন : ঈদে ওয়াসিমদের সমস্যায় পাশে দাঁড়াতে এলাকায় টহল রুদ্রেন্দুদের
মন্দির কমিটির সহ-সম্পাদক বিকে পাঠক বলেন, "মন্দিরের নানা অনুষ্ঠানে এক-দুই হাজার টাকা জোগাড় করতেই হিমশিম অবস্থা হত । কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মন্দির সংস্কারের খবর শুনেই এলাকার মানুষ যে যার সাধ্যমতো বহু টাকা দান করেছেন । এটাই আমাদের পাড়ার পরিচয় । তাই দেশের কে কোথায় ধর্মীয় ভেদাভেদ নিয়ে পড়ে আছে, তা নিয়ে আমাদের ভাববার সময় নেই । আমরা একসঙ্গে ছিলাম, একসঙ্গেই থাকব ।"