কলকাতা, 1 ডিসেম্বর : প্রধান শিক্ষকদের প্রতি বিভিন্ন বঞ্চনার অভিযোগে এবার সংঘবদ্ধভাবে প্রতিবাদের আওয়াজ তুললেন রাজ্যের প্রধান শিক্ষকদের এক সংগঠন। স্টেট ফোরাম অফ হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের তরফে আজ একটি সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলোচনায় বসার জন্য 10 দিন সময় দেওয়া হয়েছে । তার মধ্যে যদি রাজ্যের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি বঞ্চনার কথা শুনতে মুখ্যমন্ত্রী দেখা না করেন, তাহলে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস অর্থাৎ, 10 ডিসেম্বর বিকাশ ভবনের সামনে ধরনায় বসার হুঁশিয়ারি দিয়েছে এই সংগঠন ।
স্টেট ফোরাম অফ হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের সাধারণ সম্পাদক চন্দনকুমার মাইতি প্রধান শিক্ষকদের প্রতি বঞ্চনা নিয়ে জানান, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পদ একটি সিঙ্গল ক্যাডার পোস্ট। যা অন্য কোনও পদের সঙ্গে যুক্ত করা যায় না। তা সত্ত্বেও 'বাংলার শিক্ষা' পোর্টালে 'অনলাইন স্টাফ প্যাটার্ন মডিউলে' নন-টিচিং স্টাফদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা পদকে যুক্ত করা হয়েছে। যা অত্যন্ত অবমাননাকর । নিজেদের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, ঐক্যশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজসাথীর মতো বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পালন করেন রাজ্যের প্রধান শিক্ষকরা। কিন্তু, তার জন্য তাঁরা কোনও স্বীকৃতি পান না । এমনকি কোরোনা পরিস্থিতিতে স্কুলের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে 6 জন প্রধান শিক্ষকের কোরোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি স্টেট ফোরাম অফ হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের । চন্দনকুমার মাইতি বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে কয়েকজন কোরোনা অতিমারির পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় স্তরে সরকারি প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করতে গিয়ে কোরোনার শিকার হয়ে মারা গেছেন। এমনকি তাঁরা বিশেষ স্বাস্থ্যবিমার সুবিধাও পাননি ৷ তাঁদের দেওয়া হয়নি 'কোরোনা যোদ্ধার' সরকারি স্বীকৃতিও । আমরা সেই স্বীকৃতি চাইছি।’’
এর উপর রয়েছে বেতন বঞ্চনা। স্টেট ফোরাম অফ হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের অভিযোগ, 1957 থেকে 2008 সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সহকারি শিক্ষকদের থেকে আলাদা ছিল। কিন্তু, ROPA 2009-এ সেই পার্থক্য তুলে দিয়ে বেতন স্কেল একই করে দেওয়া হয়। ROPA 2019-এ প্রধান শিক্ষকদের AGP প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের 500 টাকার অতিরিক্ত সান্মানিক দেওয়া হয় না ৷ যা উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকরা পান। এই ধরনের একাধিক বঞ্চনার কথা এদিন সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে প্রধান শিক্ষকদের এই সংগঠন।
তুলে ধরা হয় এই সকল বঞ্চনা দূর করতে একধিক দাবিও। এই দাবিগুলি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় স্টেট ফোরাম অফ হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস। তাঁরা এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 10 দিন সময় দিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। সেই সময় অতিক্রমের পরেও মুখ্যমন্ত্রী দেখা না করলে প্রথমে ধরনা ও তাতে কাজ না হলে আইনি পথেও হাঁটার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষকরা।