কলকাতা, 15 জুন : প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইকে বিশেষ টিম গঠন করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (HC orders CBI to form SIT to probe TET Recruitment Scam)৷ এদিন এই নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)।
নির্দেশে তিনি জানান,
- সিবিআই তদন্ত করছে 'রঞ্জন' ওরফে চন্দন মণ্ডল ও সৌমেন নন্দী মামলা ৷ এই বার থেকে সেই মামলা আদালতের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হবে ।
- সিবিআই উপযুক্ত অফিসারের একটা টিম গঠন করবে । তাঁদের নাম আদালতকে জানাতে হবে 17 জুন । সৌমেন নন্দী ও চন্দন মণ্ডল মামলায় একজন জয়েন্ট ডিরেক্টর কলকাতা ব্রাঞ্চের টিমের প্রধান হিসাবে দায়িত্বে থাকবেন । তাঁর নাম জানাতে হবে আদালতে । তদন্ত চলাকালীন তাঁকে কলকাতা থেকে স্থানান্তর করা যাবে না ।
- অন্যান্য মামলায় সিবিআই তদন্ত আদালতের কাছে সন্তোষ জনক নয় । এখন পর্যন্ত কোনও উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না ৷ এই মামলাগুলোতে জানালেন বিচারপতি।
- বিচারপতি বলেন, "আমি ডিপ্রেসড সিবিআই যেভাবে তদন্ত করছে । স্কুল শিক্ষক নিয়োগ মামলায় যেভাবে দুর্নীতি হয়েছে, তার গভীর প্রভাব আছে সমাজে ।" সিবিআইকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি । 17 জুন ফের মামলার শুনানি ।
- পর্ষদ যে রিপোর্ট পেশ করেছে সেখানে 269 জনকে নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে । কিন্তু সেই নিয়োগ আইনগত দিক থেকে কতটা যথাযথ, তাই নিয়ে প্রশ্ন আছে বলে উল্লেখ করলেন বিচারপতি । রিপোর্টটা একটা সাজানো গল্প বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি । সেকেণ্ড প্যানেলের ব্যাপারে কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি ।
এদিন মামলার শুনানিতে সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী বিল্বদল ভট্রাচার্য বলেন, "নতুন জয়েন ডিরেক্টরের সঙ্গে তদন্তে গতি আনার ব্যাপারে আমি আলোচনা করেছি । যাতে পড়ে থাকা মামলাগুলি দ্রুত তদন্তের কাজ হয় ।" কিন্তু বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "তবু আমার সন্দেহ আছে তদন্ত কতদূর ঠিকঠাক হবে ।" সিবিআইয়ের আইনজীবী ফের জানান, দায়িত্ব নিয়ে বলছি আগামী সপ্তাহটা খুবই ঘটনা বহুল হতে চলেছে ৷" বিচারপতি বলেন, "এখন পর্যন্ত কিছু হয়নি । আমি চাই ইতিবাচক কিছু হোক ৷
আদালতের নির্দেশে এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে প্রাক্তন সিবিআই আধিকারিক ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসকে । তাঁকে বিচারপতি বলেন, "আপনি সরাসরি আদালতে না বলে কেন সোশ্যাল মিডিয়াতে জানাতে গেলেন চাকরি টাকার বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে বলে ।" উপেন বিশ্বাস এর উত্তরে বলেন, "সিবিআইয়ের জয়েন ডিরেক্টর সবে গতকাল দায়িত্ব নিয়েছে । আমি ডিরেক্টরকে অনুরোধ করবো যাতে কলকাতা অফিসে পর্যাপ্ত অফিসার নিয়োগ করা হয় । সিবিআইয়ের উচিত বিশেষ টিম (সিট)গঠন করে তদন্তের কাজ করা । না-হলে কিংপিনকে ধরা তো দুরের কথা পিনকেও ধরতে পারবে না । সিবিআইয়ের টিম আপনার বেঞ্চে রিপোর্ট পেশ করবে । "
তিনি আরও বলেন, "চন্দন মণ্ডলই 'সৎ রঞ্জন' ৷ আমাকে সিবিআই যখন জিজ্ঞাসা করবে আমি তখন হাজির হব । কিন্তু তদন্ত হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ । 'রঞ্জন' হাজার হাজার এই রকম ব্যক্তির একজন । সারা রাজ্যে এই রকম ব্যক্তি প্রচুর আছে ।" বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মামলাকারীর তরফে বলেন, " সিবিআইয়ের যে অফিসাররা এই নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্ত করবে তাদের কোনওভাবেই বরখাস্ত করা চলবে না । "
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে আইনজীবী লক্ষী গুপ্তা আজ ফের বলেন, "269 জন নিয়োগের অভিযোগের বিষয়ে রিপোর্ট দিয়েছি আদালতে । সেই রিপোর্ট দেখার পরই নির্দেশ দেওয়া হোক । আরও একাধিক মামলায় দুর্নীতি হয়েছে কিন্তু তা নিয়ে মামলাকারীরা না কিছু করে, হটাৎ করে কেন এই নিয়োগ নিয়ে হইচই শুরু করেছে ! যেখানে ক্রিমিনাল কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না । এখানে দুর্নীতি হয়নি বলেই আমি ব্যাক্তিগতভাবেও মনে করছি । সেখানে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ কতটা যুক্তিপূর্ণ । "
উপেন বিশ্বাস ফের বলেন, " এটা একটা সংগঠিত ক্রাইম । কোনও একজন নয়, এখানে একাধিক ব্যাক্তি জড়িত ।" রাজ্যের তরফে আইনজীবী জয়দীপ কর বলেন, 'রঞ্জন' ইস্যুর সঙ্গে আদৌ এই নিয়োগ প্রক্রিয়া যুক্ত আছে কি না, সেটা আগে ক্ষতিয়ে দেখা হোক । 1 নম্বর দেওয়ার পর যে নিয়োগ হয়েছে তার সঙ্গে রঞ্জন ইস্যু জড়িত কি না, সেটা দেখার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের রিপোর্ট খতিয়ে দেখা প্রয়োজন । " সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি নির্দেশ দেন সিবিআইকে একটা বিশেষ টিম গঠন করে তদন্ত করার ।