কলকাতা, 24 এপ্রিল: হরিদেবপুর কাণ্ডে (Haridevpur bomb recovery) বিস্ফোরক-সহ অটো প্রায় চার দিন ধরে পড়েছিল সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তীর বাড়ির প্রায় 50 মিটারের মধ্যে । কীভাবে এটা সম্ভব হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক প্রশ্ন উঠেছে । তার উপর প্রকাশ্যে আসা সিসিটিভি ফুটেজে (cctv footage of Haridevpur) আরও কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে ৷
হরিদেবপুর থানা এলাকার 41 পল্লি ক্লাবের সামনে একটি পরিত্যক্ত অটোর মধ্যে থাকা প্লাস্টিকের ব্যাগের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় 19টি তাজা বোমা । এছাড়াও একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং দু’টি কার্তুজ উদ্ধার হয় । প্রথমে স্থানীয়রাই তা দেখতে পান । খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় হরিদেবপুর থানার পুলিশ । বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র এবং কার্তুজ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় । বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র কীভাবে ওই জায়গায় এল, সেই রহস্যের সন্ধানে মাঠে নামে পুলিশ । কেউ আগে থেকে মজুত করে রেখেছিল কি না বা কোথাও হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না, তারও খোঁজ শুরু হয় ৷
তদন্তে নেমে ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ ৷ তাতেই চাঞ্চল্যকর ছবি ধরা পড়েছে । 18 এপ্রিল গভীর রাতে একটি বাইকে চেপে দু’জন সেখানে এসেছিল । বাইকের পিছনে সম্ভবত একজন মহিলা ছিলেন বলে অনুমান গোয়েন্দাদের । দেখা যাচ্ছে, বাইকের পিছনে বসা ওই মহিলা কালো রঙের পোশাক পরে নেমে গিয়ে একটি গলির মধ্যে ঢুকে পড়লেন । সেই সময় তার হাতে একটি ব্যাগ ছিল । কিন্তু গলি থেকে বেরিয়ে ফের বাইকে ওঠার সময় তাঁর হাতে সেই ব্যাগটি ছিল না ৷ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে, সেই মহিলা একটি প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে কিছু রেখেছেন সেই অটোতে ৷
আরও পড়ুন: 8 arrested in Haridevpur bomb recovery case: হরিদেবপুরে অটোয় বিস্ফোরক রাখার ঘটনায় গ্রেফতার 8
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, একজন পুলিশ আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে মুখ ঢাকা এক যুবক সেই রাস্তায় কিছু বোঝাতে বোঝাতে যাচ্ছেন । দেখে মনে হয়েছে, আচমকাই ওই অটোর সামনে এসে কিছু একটা ইশারা করে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে গেলেন ওই যুবক । প্রশ্ন উঠেছে ওই যুবক কে ? সে পুলিশকে ইশারা করে কী দেখাল ? প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি পুলিশ গোটা ঘটনাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল ? গোটাটাই কি সাজানো ?
পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী একজন মহিলাকে ছাড়তে রাস্তায় বেরোলেন । কিন্তু কাকতালীয় ভাবে ঠিক ওই বিস্ফোরক বোঝাই অটোর সামনের রাস্তায় তাঁকে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে ৷ সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পর আরও যে প্রশ্নগুলি দানা বেঁধেছে সেগুলি হল,
1) তদন্তে নেমে কেন এখনও পর্যন্ত ওই পুলিশ আধিকারিককে লালবাজারে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি গোয়েন্দারা ?
2) কেন ওই যুবকের পরিচয় জানার চেষ্টা করা হল না ?
3) সাংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের গোটা ঘটনাটি কীভাবে চোখ এড়িয়ে গেল ?
4) রাস্তায় সাংসদের সঙ্গে কেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের দেখা গেল না ?
এমনই একাধিক প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠছে হরিদেবপুর কাণ্ডে । যদিও এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের তরফে কোনও মন্তব্য করা হচ্ছে না ।
আরও পড়ুন: Bombs recovered from Auto : হরিদেবপুরে অটো থেকে উদ্ধার 19টি বোমা-সহ আগ্নেয়াস্ত্র
ইতিমধ্যেই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে গোয়েন্দারা এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে 8 জনকে গ্রেফতার করেছেন । ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক মোবাইল ফোন । পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজে যে বাইকটি দেখা যাচ্ছে, তার নম্বর প্লেট স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে না । ফলে তদন্তে বেগ পেতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের ৷
গত 22 তারিখ রাত পর্যন্ত 41 পল্লি হরিদেবপুর থানার সামনে ওই অটোকে কেন্দ্র করে একাধিক যুবক জড়ো হয়েছিল । পরে তারা এলাকা ছেড়ে চলে যায় । প্রথম দিকে ব্যাপারটি গুরুত্ব দেননি বাসিন্দারা । পরে তাঁদের সন্দেহ হওয়ায় পুলিশে খবর দিলে গোটা ঘটনাটি স্পষ্ট হয় ।