বউবাজার (কলকাতা), 14 মে : বউবাজারের স্যাঁকরা পাড়া লেন ৷ আদি কলকাতার এক ঐতিহ্যবাহী এবং জমজমাট এলাকা এটি ৷ কিন্তু, সেই স্যাঁকরা পাড়া লেন আজ জনশূন্য (Empty Houses in Syakrapara Lane of Bowbazar Due to Metro Incident) ৷ মেট্রোর কাজের জন্য ধস ও ফাটলের জেরে 12টি বাড়ি আজ বিলীন হয়ে গিয়েছে (Bowbazar Metro Incident) ৷ চারদিকে ধ্বংসের চিহ্নটাও এখন বিলোপ হতে বসেছে বউবাজারের স্যাঁকরা পাড়া লেনে ৷ আর তার এক কোণে কোনও মতে দাঁড়িয়ে আছে মাত্র তিনটি বাড়ি ৷ বাড়িগুলোর বয়স কোনোটাই একশোর নিচে নয় ৷ সময়ের সঙ্গে জীর্ণ হয়েছে ক্রমশ ৷ আর সেই জীর্ণতায় বড় ধাক্কা আড়াই বছর আগে মেট্রোর বিপর্যয় ৷ বাকি দু’টি বাড়িতেই তালা মারা ৷
দু’দিন আগের ফাটলের ঘটনায় ঘর ছেড়েছেন তাঁরা ৷ একটি মাত্র বাড়িতে এখন রয়েছেন দত্ত পরিবার ৷ হ্যাঁ দু-দু’বার মেট্রো বিপর্যয়ের জেরে এই স্যাঁকরা পাড়ার গোটাটাই এখন অবলুপ্ত হওয়ার পথে ৷ এই পাড়ায় 15টি বাড়ি ছিল ৷ মেট্রোর বিপর্যয়ের জেরে এখন তিনটি বাড়ি কোনও মতে দাঁড়িয়ে ৷ সেগুলিও অদূর ভবিষ্যতে আর কোনও দিন থাকবে না ৷ এই পরিস্থিতিতে একটা আস্ত পাড়া অবলুপ্ত হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে ৷
আরও পড়ুন : Bowbazar House Crack : মেট্রোর কাজে বাড়িতে ফাটল, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তায় ভিটে ছাড়ছেন স্থানীয়রা
আগে যেখানে 12টি বাড়ি ছিল সেখানে, তার চিহ্ন টুকু নেই ৷ সেখানে বড় বড় লোহার দেওয়াল দিয়ে ঘিরে চলছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ ৷ আর এক কোনে তিনটি বাড়ি গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ৷ সেগুলিতেও দেখা দিয়েছে ফাটল ৷ যাতায়াতের পথ বলতে একটা দেড় ফুটের গলি ৷ অন্য দু’টি বাড়ির বাসিন্দারা সম্প্রতি নতুন করে ফাটল ধরায় জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন ৷ এমনই এক ভগ্ন বাড়ির দোতলার জীর্ণ বারান্দার ধারে দাঁড়িয়ে পুরনো দিনের সুখকর স্মৃতি আর বিপর্যয়ের যন্ত্রণার কথাই বললেন বছর 76-র বৃদ্ধ গোরাচাঁদ দত্ত এবং তাঁর স্ত্রী বছর 70’র শুভ্রা দত্ত ৷
আরও পড়ুন : Bowbazar Metro Work : বউবাজারে বাড়ির ফাটলের জন্য দায়ী সুড়ঙ্গে জলের প্রবেশ, জানাল কেএমআরসিএল
এদিন ভগ্ন বাড়ির দোতলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃদ্ধা শুভ্রা দত্ত জানান, ‘‘এখন খুব কষ্ট হয় ৷ এত সুন্দর আমাদের মিল ছিল পাড়ায় ৷ সকলেই এক সঙ্গে হাসি গল্প করতাম ৷ ওদের খুব মনে পড়ছে ৷ পাড়ার সকলেই একে অপরকে খুবই ভালবাসত ৷ পাড়ায় 15টা বাড়ি ছিল ৷ রাস্তায় বেরলে প্রতিবেশী বলতেন ও বৌদি চা খাব ৷ আমিও খুশি হয়ে চা করে খাওয়াতাম ৷ এখন শ্মশান হয়ে গেছে ৷’’ এ ভাবেই বলতে বলতে যেন তাঁর গলা ধরে আসছিল ৷
গৃহকর্তা গোরাচাঁদ দত্ত জানান, ‘‘কারও কোনও অসুবিধা হলে পাড়ার বাকিরা ঝাঁপিয়ে পড়তেন ৷ এখন তিনটে বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ৷ আমাদের বাড়িও ভেঙে পড়তে পারে ৷ বাড়িগুলি নিশ্চিহ্ন করে দিল মেট্রো ৷’’