কলকাতা, 14 জুলাই: যে ভাবে বিভিন্ন শব্দকে সংসদে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তাতে জরুরি অবস্থার আভাস পাচ্ছে তৃণমূল (Emergency like situation)। বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার আরও একধাপ এগিয়ে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে জরুরি অবস্থার কালো দিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন । সাধারণ বিশেষণ বোধক শব্দগুলিকে অসংসদীয় আখ্যা দেওয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (TMC on Unparliamentary Words)।
এমনিতে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য ও ভাষা নিয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর আলোচনা হতে পারে । কেউ কেউ তো রাজনৈতিক নেতাদের ভাষা নিয়ে বলতে গিয়ে ভাষা সন্ত্রাসের কথাও বলেন । কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কোনটা সংসদীয় ভাষা আর কোনটা অসংসদীয় তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে । সোমবার থেকে দিল্লিতে বসতে চলেছে সংসদের বাদল অধিবেশন । তার আগে কয়েকটি শব্দকে অসংসদীয় আখ্যা দিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে লোকসভার সচিবালয় । আর এই অসংসদীয় ভাষার তালিকায় এ বার যুক্ত হয়েছে একের পর এক বহু ব্যবহৃত শব্দ । লোকসভার অধিবেশন চলাকালীন আর ব্যবহার করা যাবে না 'লজ্জাজনক', 'নাটক', দুর্নীতিগ্রস্ত, 'নির্যাতন', 'নৈরাজ্যবাদী', 'অপব্যবহার', 'বিশ্বাসঘাতকতা', 'দুর্নীতিগ্রস্ত', 'ভণ্ডামি', 'অযোগ্য'- শব্দগুলো । এই বিষয় নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি । এই নিয়ে এ বার সরব হল ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসও (TMC slams the decision of Banning words In Parliament)।
এ দিন এই শব্দগুলির ব্যবহার নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh on Unparliamentary Words) বলেন, "বিষয়টি আমাদেরও চোখে এসেছে । রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই নিয়ে যেখানে যেখানে প্রতিবাদ জানানোর প্রয়োজন রয়েছে প্রতিবাদ জানাবে ।" তিনি বলেন, বিজেপি ভীত, এখন বিরোধীদের বক্তৃতাকেও ভয় পাচ্ছে । আর সেই কারণেই এই শব্দ সন্ত্রাস । বিরোধীদের জিহ্বাতে বেড়ি পরাতে চাইছে । তিনি আরও বলেন, "এখন কেন্দ্রের শাসক দল বিরোধীরা কী শব্দ বলবেন তার উপরও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে । যে শব্দগুলি বিজেপি নিষিদ্ধ করতে চাইছে তার একটিও অশালীন শব্দ নয় । কিছু ক্ষেত্রে তা বক্তৃতার মধ্যে ব্যবহৃত বিশেষণ । কিছু প্রতীকী আক্রমণের জন্য আসে । কিছু কিছু শব্দ আবার ভালো বক্তৃতার সময় রসিকতা হিসেবে ব্যবহার করা হয় । যদি জুমলাবাজি না বলা যায়, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে যদি লজ্জাজনক নাটক শব্দগুলির না ব্যবহার করা যায়, তা হলে কি ব্যবহার করা হবে ! বিজেপির মন্ত্রীর ছেলে মানুষের উপর গাড়ি তুলে মেরে দেবে এই কাজকে লজ্জাজনক বলা যাবে না । তারা জনগণকে একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূরণ করবেন না, একে বিশ্বাসঘাতকতা বলা যাবে না । এমনটা যদি করা হয় আদতে তা গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ হবে ।"
আরও পড়ুন: "...আমায় সাসপেন্ড করুন", সংসদের অসাংবিধানিক শব্দতালিকাকে চ্যালেঞ্জ ডেরেকের
এ দিন শুধু কুণাল ঘোষ নন, একইভাবে এই বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারও । তিনি বলেন, "জরুরি অবস্থার কালো দিন আবার ফিরে এসেছে । একটা অযোগ্য ভণ্ড ও দুর্নীতিবাজ সরকার বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ করতে একতরফা ভাবে সেন্সরশিপ চালু করছে ।"
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের এই বক্তব্যের পাল্টা হিসাবে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, মাত্র তো কয়েকটি শব্দ, ওই শব্দগুলিকে ব্যবহারের জন্য কেন এত ব্যাগ্রতা তৃণমূলের । এই শব্দগুলি যদি ব্যবহার করতে চায় তাহলে তো বাইরের প্রচুর জায়গা পড়ে রয়েছে, রাজনৈতিক মঞ্চে ব্যবহার করুন না । তিনি একইসঙ্গে এও বলেন, এই শব্দগুলি ব্যবহার বন্ধ শুধুমাত্র বিরোধী দলের জন্য এমন নয় । প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সমস্ত শাসক দলের সদস্যরাও এই শব্দগুলি ব্যবহার করতে পারবেন না । এটা মেনে নিতে অসুবিধা কোথায় !