কলকাতা/নয়াদিল্লি, 9 মার্চ: কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোডের বহুতলে পূর্ব রেলের অফিসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আনা অভিযোগ ঠারেঠোরে মেনেই নিল রেল ৷ রেলমন্ত্রকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগে সরব হয়েছেন মমতা ৷ তাঁর অভিযোগ, বিল্ডিং-এর ম্যাপ চাওয়া হলেও তা দেয়নি রেল দফতর ৷ ম্যাপ পাওয়া গেলে মৃত্যুর ঘটনা এড়ানো যেত বলে দাবি তাঁর ৷ ঘটনাস্থলে রেলের কোনও আধিকারিক ছিলেন না বলেও তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ম্যাপ যে দেওয়া হয়নি, সেটা মেনে নিয়ে রেল জানিয়েছে, ম্যাপ সেই মুহূর্তে পাওয়া না-গেলেও রেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ৷
দমকলের রাতভর চেষ্টার পর সকালের দিকে নিয়ন্ত্রণে এসেছে স্ট্র্যান্ড রোডের বহুতলের আগুন ৷ যদিও আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছে তরতাজা 9টি প্রাণ ৷ আগুন নেভাতে বহুতলে ঢুকে মৃত্যু হয়েছে দুজন রেলকর্মী, চারজন দমকলকর্মী ও হেয়ার স্ট্রিট থানার এএসআই-এর । রেলের অসহযোগিতার জন্যই মর্মান্তিক এই মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয়নি বলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বিল্ডিংয়ের ম্যাপ পেলে মৃত্যু এড়ানো যেত বলে রেলকে দুষেছেন তিনি ৷ মমতার অভিযোগ, রেল মন্ত্রকের কোনও আধিকারিক খবর পাওয়ার পরও ঘটনাস্থলে আসেননি ৷ তিনি বলেন, "জায়গাটা রেলের ৷ তাই রেলের আধিকারিকদের উপর দায়িত্ব বর্তায় ৷" তাঁর আরও অভিযোগ, "দমকল দফতর থেকে বহুতলের ম্যাপ চাওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু রেলের তরফে কোনও সহযোগিতা করা হয়নি ৷" মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিল্ডিংয়ের প্ল্যানটা কাছে থাকলে দমকলকর্মীদের সুবিধা হত ৷ তবে দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে চান না বলেও উল্লেখ করেন মমতা ৷
আরও পড়ুন: স্ট্র্যান্ড রোডের ঘটনায় শোকাহত প্রধানমন্ত্রী, মৃত ও আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা
যদিও ইস্টার্ন রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার মনোজ যোশির দাবি, "রেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ৷ যেখানে যেটা প্রয়োজন তা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ হতে পারে সঙ্গে সঙ্গে ম্যাপ দেওয়া সম্ভব হয়নি ৷ তবে বহুতলের বিষয়ে গাইড করার জন্য রেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে ছিলেন ৷" রাজ্য সরকার তদন্ত করলে রেলের তরফে সবরকম সাহায্য করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ইস্টার্ন রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার ৷ অগ্নিকাণ্ডের পর উদ্ধারকাজ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলও ৷
রেলের বহুতলে আগুন লাগার ঘটনায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিশ । ভারতীয় দণ্ডবিধি 304 এ অর্থাত্ গাফিলতির কারণে মৃত্যু ধারায় মামলা রুজু করল কলকাতা পুলিশ । লালবাজার সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট বহুতলে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না । 12 তলায় ইলেকট্রনিক তারের কুণ্ডলী ছিল । তা আগুন ছড়াতে সাহায্য করে । পাশাপাশি 13 তলায় প্রচুর প্লাইউড ছিল । তার থেকেও আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে । পাশাপাশি দমকলের তরফে সংশ্লিষ্ট বহুতলের ম্যাপ চাওয়া হয় । কিন্তু সেই ম্যাপ দিতে পারেনি রেল । ফলে সব মিলিয়ে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে । আর সেই মতোই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিশ।