কলকাতা, 11 মে : এতদিন লড়াইটা ছিল নবান্ন বনাম রাজভবনের । এবার প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে সুর সপ্তমে চড়ালেন মমতা । রাজভবনের গণ্ডি টপকে লড়াই এবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে । ভিডিয়ো কনফারেন্স চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "তৈরি করা চিত্রনাট্য আওড়ে যাচ্ছে কেন্দ্র "।
ভিডিয়ো কনফারেন্স চলাকালীন তিনি আরও বলেন, "এটা রাজনীতির সময় নয়, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ভাঙবেন না ।" ধাপে ধাপে লকডাউন শিথিল করা, ভিনরাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিক এবং সর্বোপরি দেশ তথা রাজ্যগুলির আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী ।
কেন্দ্র যখন আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে শুরু করে ট্রেন, বিমান সবই চালু করে দিচ্ছে, তখন আর খামোখা লকডাউন বাড়ানোর কী দরকার? আজকের ভিডিয়ো কনফারেন্সে এইভাবেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেন, "দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাড়ু, জম্মু ও কাশ্মীর, পঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, তেলাঙ্গানা, হরিয়াণা ও পশ্চিমবঙ্গ । এই রাজ্যগুলিতে কোরোনার সংক্রমণ বেশি । আমরা সবাই আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করা সম্ভব, তা করছি । কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগছে এটা বলতে যে, কেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের সঙ্গেই এই বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে ? কেন সংবাদমাধ্যমের কাছে যা খুশি তাই বলা হচ্ছে ?"
তিনি আরও বলেন, "আমরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি, আর কিছু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বসে বসে রাজনীতি করছেন । এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর জন্য একেবারেই ঠিক নয় । রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে কোরোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছি । এটা আমাদের কর্তব্য । এখনও পর্যন্ত যে বৈঠকগুলি হয়েছে, তাতে আমি রাজ্যের জন্য যা যা প্রয়োজন, তা চেয়েছি । কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সাহায্য পাইনি ।"
এদিকে, যে দশটি রাজ্যে কোরোনার সংক্রমণ সবথেকে বেশি, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে দশম স্থানে । পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ ও নেপালের সীমান্ত রয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "সবকিছুর একসঙ্গে মোকাবিলা করাটা কঠিন । লকডাউন শেষ হওয়ার পর কী হবে, তা নিয়ে কেন্দ্রের কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই । রাজ্যগুলি কেন্দ্রের নির্দেশ মতোই চলছে । কিন্তু কেন্দ্র যদি যখন তখন পরিকল্পনা বদলায়, বা নোটিশ ছাড়াই রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠায়, তবে রাজ্য কাজ করবে? না কি কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে বৈঠক করবে? কেন্দ্রের কাছে আমার আবেদন, রাজ্যকে বিশ্বাস করুন । এখন নীতিগত বা আদর্শগত লড়াইয়ের সময় নয় ।"
কেন্দ্র এখন রেল ও বিমান পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েও মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী । বলেন, "রেল বা বিমান চালু করতে চাইলে, তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই । কিন্তু যাঁরা যাঁরা ট্রেন বা বিমানে উঠবেন, তাঁদের যথাযথ স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হোক ।"
এমনটা যা হতে পারে, তার কিছুটা আন্দাজ পাওয়া গেছিল আগে থেকেই । মার্চে যখন রাজ্যের কোরোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এসেছিল পশ্চিমবঙ্গে । সেই থেকেই শুরু কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর । রাজ্যে লকডাউন ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না এবং কোরোনা সংক্রান্ত সঠিক রিপোর্টও প্রকাশিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছিল কেন্দ্র ।
আজকের বৈঠকে শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন রণং দেহি মূর্তিতে । কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের রাজ্যে আসা নিয়েও ক্ষোভ উগড়ে দেন বৈঠকে । বলেন, " কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল যে আসবে, সে বিষয়ে রাজ্যকে কিছু জানানো হয়নি ।"
পাশাপাশি কেন পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল পাঠানোর দরকার পড়ল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী । এদিকে তৃণমূলের তরফে বিগত কিছুদিন ধরেই অভিযোগ আসছে, রাজ্য প্রশাসন যখন কোরোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখন কেন্দ্র নির্দিষ্ট কিছু রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন গত সপ্তাহে কোরোনা পরিস্থিতি সবথেকে খারাপের দিক থেকে যে দশটি রাজ্যের নাম উল্লেখ করেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল পশ্চিমবঙ্গ ।