ETV Bharat / city

লকডাউনে বেড়েছে গার্হস্থ্য হিংসা, সাহায্য চেয়ে মহিলা কমিশনে আর্জি

লকডাউনে বেড়েছে মহিলাদের উপর অত্যাচার । মহিলা কমিশনের কাছে ফোন এসেছে অনেক মহিলার ।

domestic violence
domestic violence
author img

By

Published : Jun 14, 2020, 3:16 AM IST

Updated : Jul 30, 2020, 2:07 PM IST

কলকাতা, 13 জুন : "বাঁচার বড় ইচ্ছে ছিল স্যার । কিন্তু এই অত্যাচার আর সহ্য করা যায় না । দিনের পর দিন স্বামী মারধর করত । লকডাউনে সেই অত্যাচার বেড়ে গিয়েছিল অনেকটা । সারাদিন বাড়িতে থাকত, আর নানাভাবে অত্যাচার । তাই নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম । গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে দেশলাই দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছিলাম ।" আরজি কর হাসপাতালে শুয়ে নিজের পোড়া শরীরের জ্বালার মাঝে কথাগুলো তদন্তকারী অফিসারকে বলেছিলেন প্রিয়াঙ্কা সাহা । যমে-মানুষে ছয়দিনের লড়াই শেষ হয়ে যায় 27 মে । রাজ্যে গার্হস্থ্য হিংসার কারণে মৃত্যুর তালিকায় যোগ হয় আরও একটা নাম ।

সাড়ে ছয় বছর আগে বিয়ে হয়েছিল প্রিয়াঙ্কার । ওর বয়স তখন কুড়ির কোঠায় । বয়সে কয়েকবছরের বড় সমর সাহা বিয়ের পর থেকেই পণের জন্য নানাভাবে চাপ দিত । চলত শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন । অথচ প্রিয়াঙ্কা চেয়েছিল সুন্দর একটা সংসার । আর পাঁচটা মেয়ের মতোই । হয়নি । 21 মে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হয় 26 বছরের প্রিয়াঙ্কা সাহার দেহ । তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আরজি কর হাসপাতালে । 22 মে চিৎপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রিয়াঙ্কার আত্মীয়রা । তাঁদের অভিযোগ, গত সাড়ে ছয় বছর ধরে প্রিয়াঙ্কার উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালাচ্ছিল তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন । বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা । অত্যাচার সইতে না পেরে রীতিমত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা । সেই অত্যাচার অনেকটা বেড়ে যায় লকডাউন শুরুর পর থেকে । 27 মে মৃত্যু হয় প্রিয়াঙ্কার । এই ঘটনার পর থেকে প্রিয়াঙ্কার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি পলাতক ছিল । পরে বারাসাত থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় ।

লকডাউনের মাঝে অত্যাচারের ফলে কলকাতায় মহিলার মৃত্যুর এই একটা ঘটনাই ঘটেছে । কিন্তু, না । তথ্য বলছে, গোটা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যাচার কম হয়নি এ'রাজ্যেও । রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছে প্রায় 200টি অভিযোগ জমা পড়েছে লকডাউনের মাঝের সময়টায় । মহিলা কমিশনের সদস্যরা একটি ফোন পেয়ে রীতিমতো চমকে উঠেছিলেন । এক মহিলা ফোনের ও'প্রান্ত থেকে বলছেন, "দিদি মদ কোথায় পেতে পারি বলতে পারেন? লকডাউনে মদ পাওয়া যাচ্ছে না, তার জন্য নাকি আমি দায়ি । আর সেই কারণে স্বামী আমায় মারধর করছে । বাঁচান আমায় ।"

লকডাউনে বেড়েছে গার্হস্থ্য হিংসা...

ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি (NALSA) 24 মার্চ থেকে 15 মে পর্যন্ত 28টি স্টেট লিগাল সার্ভিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একটি তালিকা প্রকাশ করে । মূলত লকডাউনের সময়টায় ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কতটা বেড়েছে তা জানার জন্যই চালানো হয় সেই সমীক্ষা । সেই তালিকায় প্রথম নাম উত্তরাখণ্ড । সে'রাজ্যে 144টি গার্হস্থ্য হিংসার রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছিল । হরিয়ানায় মহিলাদের উপর অত্যাচারের 79টি ঘটনার রিপোর্ট দিয়েছিল স্টেট লিগাল সার্ভিস । তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল হরিয়ানার নাম । তৃতীয় স্থানে ছিল দিল্লি । মোট 69টি কেস নথিভুক্ত হয়েছিল বলে জানাচ্ছে NALSA। এই খবর সামনে আসার পর মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে । তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের নাম ছিল তলার দিকে । কিন্তু, বাস্তব তথ্য বলছে, শুধুমাত্র কলকাতাতেই মার্চ মাসে 87টি গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা ঘটেছিল । এপ্রিল মাসে অবশ্য সংখ্যাটা অনেক কমে যায় । কলকাতা পুলিশ এলাকায় এপ্রিল মাসে মোট দশটি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে । মে মাসে 19টি কেস নথিভুক্ত হয়েছে বলে খবর । লালবাজারের তথ্য বলছে, লকডাউনের আগে জানুয়ারি মাসে মোট মহিলাদের উপর অত্যাচারের 74টি মামলা রুজু হয় । ফেব্রুয়ারিতে সংখ্যাটা দাঁড়ায় 78 । অর্থাৎ লকডাউনের পর দেশের অন্যান্য শহরে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের ঘটনা বাড়লেও কলকাতায় তা অনেকটাই কম ।

এ'প্রসঙ্গে যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ) মুরলিধর শর্মা বলেন, "কলকাতায় মহিলাদের উপর অত্যাচার ঠেকাতে তৎপর পুলিশ । আমাদের 100 ডায়াল কাজ করেছে সবসময় । প্রতিটি ফোনের ভিত্তিতে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছি । লকডাউনের কারণে যেখানে মহিলারা পৌঁছতে পারেননি, পুলিশ নিজে গিয়েছে তাঁদের বাড়িতে ।"

রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গাঙ্গুলি আবার বলছেন অন্য কথা । তিনি বলেন, "মহিলা কমিশনের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে লকডাউনের প্রথম দিকে মহিলাদের উপর অত্যাচার কম ছিল । কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে তত বেড়েছে অত্যাচার । আমরা দু'মাসে প্রায় 200টি ফোন পেয়েছি ।"

কিন্তু, এমনটা হচ্ছে কেন? কেন লকডাউনে মহিলাদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে? মনোবিদ কেদার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আসলে লকডাউনের প্রথম দিকটায় সংসারে সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে পেরে খুশি হয়েছিলেন । কিন্তু, দিন যত গড়িয়েছে তত একে অপরের খারাপ দিকগুলো বেশি করে দেখতে পেয়েছেন । সাধারণত বাড়ির পুরুষেরা বেশিরভাগ সময়টাই বাইরে থাকেন । আবার, অনেক মহিলারাও বাইরে থাকেন কাজের জন্য । ফলে সংসারে একে-অপরের জন্য সময় খুব কম দিতে পারেন । কম সময়ের জন্য কোয়ালিটি টাইম কাটাতে পারেন । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে থাকতে থাকতে স্পেসটা এতটাই কমে গিয়েছিল যে তার বহিঃপ্রকাশ হয় ভায়োলেন্সের মাধ্যমে ।"

কলকাতা, 13 জুন : "বাঁচার বড় ইচ্ছে ছিল স্যার । কিন্তু এই অত্যাচার আর সহ্য করা যায় না । দিনের পর দিন স্বামী মারধর করত । লকডাউনে সেই অত্যাচার বেড়ে গিয়েছিল অনেকটা । সারাদিন বাড়িতে থাকত, আর নানাভাবে অত্যাচার । তাই নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম । গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে দেশলাই দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছিলাম ।" আরজি কর হাসপাতালে শুয়ে নিজের পোড়া শরীরের জ্বালার মাঝে কথাগুলো তদন্তকারী অফিসারকে বলেছিলেন প্রিয়াঙ্কা সাহা । যমে-মানুষে ছয়দিনের লড়াই শেষ হয়ে যায় 27 মে । রাজ্যে গার্হস্থ্য হিংসার কারণে মৃত্যুর তালিকায় যোগ হয় আরও একটা নাম ।

সাড়ে ছয় বছর আগে বিয়ে হয়েছিল প্রিয়াঙ্কার । ওর বয়স তখন কুড়ির কোঠায় । বয়সে কয়েকবছরের বড় সমর সাহা বিয়ের পর থেকেই পণের জন্য নানাভাবে চাপ দিত । চলত শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন । অথচ প্রিয়াঙ্কা চেয়েছিল সুন্দর একটা সংসার । আর পাঁচটা মেয়ের মতোই । হয়নি । 21 মে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হয় 26 বছরের প্রিয়াঙ্কা সাহার দেহ । তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আরজি কর হাসপাতালে । 22 মে চিৎপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রিয়াঙ্কার আত্মীয়রা । তাঁদের অভিযোগ, গত সাড়ে ছয় বছর ধরে প্রিয়াঙ্কার উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালাচ্ছিল তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন । বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা । অত্যাচার সইতে না পেরে রীতিমত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা । সেই অত্যাচার অনেকটা বেড়ে যায় লকডাউন শুরুর পর থেকে । 27 মে মৃত্যু হয় প্রিয়াঙ্কার । এই ঘটনার পর থেকে প্রিয়াঙ্কার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি পলাতক ছিল । পরে বারাসাত থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় ।

লকডাউনের মাঝে অত্যাচারের ফলে কলকাতায় মহিলার মৃত্যুর এই একটা ঘটনাই ঘটেছে । কিন্তু, না । তথ্য বলছে, গোটা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যাচার কম হয়নি এ'রাজ্যেও । রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছে প্রায় 200টি অভিযোগ জমা পড়েছে লকডাউনের মাঝের সময়টায় । মহিলা কমিশনের সদস্যরা একটি ফোন পেয়ে রীতিমতো চমকে উঠেছিলেন । এক মহিলা ফোনের ও'প্রান্ত থেকে বলছেন, "দিদি মদ কোথায় পেতে পারি বলতে পারেন? লকডাউনে মদ পাওয়া যাচ্ছে না, তার জন্য নাকি আমি দায়ি । আর সেই কারণে স্বামী আমায় মারধর করছে । বাঁচান আমায় ।"

লকডাউনে বেড়েছে গার্হস্থ্য হিংসা...

ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি (NALSA) 24 মার্চ থেকে 15 মে পর্যন্ত 28টি স্টেট লিগাল সার্ভিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একটি তালিকা প্রকাশ করে । মূলত লকডাউনের সময়টায় ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কতটা বেড়েছে তা জানার জন্যই চালানো হয় সেই সমীক্ষা । সেই তালিকায় প্রথম নাম উত্তরাখণ্ড । সে'রাজ্যে 144টি গার্হস্থ্য হিংসার রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছিল । হরিয়ানায় মহিলাদের উপর অত্যাচারের 79টি ঘটনার রিপোর্ট দিয়েছিল স্টেট লিগাল সার্ভিস । তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল হরিয়ানার নাম । তৃতীয় স্থানে ছিল দিল্লি । মোট 69টি কেস নথিভুক্ত হয়েছিল বলে জানাচ্ছে NALSA। এই খবর সামনে আসার পর মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে । তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের নাম ছিল তলার দিকে । কিন্তু, বাস্তব তথ্য বলছে, শুধুমাত্র কলকাতাতেই মার্চ মাসে 87টি গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা ঘটেছিল । এপ্রিল মাসে অবশ্য সংখ্যাটা অনেক কমে যায় । কলকাতা পুলিশ এলাকায় এপ্রিল মাসে মোট দশটি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে । মে মাসে 19টি কেস নথিভুক্ত হয়েছে বলে খবর । লালবাজারের তথ্য বলছে, লকডাউনের আগে জানুয়ারি মাসে মোট মহিলাদের উপর অত্যাচারের 74টি মামলা রুজু হয় । ফেব্রুয়ারিতে সংখ্যাটা দাঁড়ায় 78 । অর্থাৎ লকডাউনের পর দেশের অন্যান্য শহরে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের ঘটনা বাড়লেও কলকাতায় তা অনেকটাই কম ।

এ'প্রসঙ্গে যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ) মুরলিধর শর্মা বলেন, "কলকাতায় মহিলাদের উপর অত্যাচার ঠেকাতে তৎপর পুলিশ । আমাদের 100 ডায়াল কাজ করেছে সবসময় । প্রতিটি ফোনের ভিত্তিতে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছি । লকডাউনের কারণে যেখানে মহিলারা পৌঁছতে পারেননি, পুলিশ নিজে গিয়েছে তাঁদের বাড়িতে ।"

রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গাঙ্গুলি আবার বলছেন অন্য কথা । তিনি বলেন, "মহিলা কমিশনের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে লকডাউনের প্রথম দিকে মহিলাদের উপর অত্যাচার কম ছিল । কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে তত বেড়েছে অত্যাচার । আমরা দু'মাসে প্রায় 200টি ফোন পেয়েছি ।"

কিন্তু, এমনটা হচ্ছে কেন? কেন লকডাউনে মহিলাদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে? মনোবিদ কেদার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আসলে লকডাউনের প্রথম দিকটায় সংসারে সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে পেরে খুশি হয়েছিলেন । কিন্তু, দিন যত গড়িয়েছে তত একে অপরের খারাপ দিকগুলো বেশি করে দেখতে পেয়েছেন । সাধারণত বাড়ির পুরুষেরা বেশিরভাগ সময়টাই বাইরে থাকেন । আবার, অনেক মহিলারাও বাইরে থাকেন কাজের জন্য । ফলে সংসারে একে-অপরের জন্য সময় খুব কম দিতে পারেন । কম সময়ের জন্য কোয়ালিটি টাইম কাটাতে পারেন । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে থাকতে থাকতে স্পেসটা এতটাই কমে গিয়েছিল যে তার বহিঃপ্রকাশ হয় ভায়োলেন্সের মাধ্যমে ।"

Last Updated : Jul 30, 2020, 2:07 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.