কলকাতা, 1 জুলাই: সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের ঠিক উল্টোদিকে রাজ্যর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের বাড়ি । বাড়িটি হেরিটেজ কমিশনের তালিকাভুক্ত । বাড়ির নীচের তলে এখন ক্লিনিক চলে (Doctors' Day 2022)। ফলে, সেই অংশটুকু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয় । কিন্তু তিনতলা বাড়িটির বাকি অংশ কার্যত গোডাউনে পরিণত হয়েছে । বিল্ডিংয়ের ও বিল্ডিংয়ের ভিতরকার জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে । রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের বক্তব্য, ওই বিল্ডিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের (Bidhan Chandra Roy house)। এ দিকে, বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পাল্টা বক্তব্য, দেখভালের দায়িত্ব হেরিটেজ কমিশনের (Bidhan Chandra Roy birthday)।
শুক্রবার ড. বিধানচন্দ্র রায়ের 141তম জন্মদিন । তিনি এমআরসিপি এবং এফআরসিএস ডিগ্রিধারী বিশিষ্ট চিকিত্সক ছিলেন । পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীও । বিধানচন্দ্র রায় অত্যন্ত ঘটনাবহুল জীবন যাপন করেছেন এবং তিনি নিজের প্রতিটি পেশায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন । কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশ হিসাবে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন । মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেই আসনেই ছিলেন তিনি । ডা. বিধানচন্দ্র রায় প্রতি বছর 1 জুলাই (তাঁর জন্ম ও মৃত্যু দিবস) জাতীয় চিকিৎসক দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন । দেশজুড়ে মহাসমারোহে এই দিন তাঁকে স্মরণ করা হয় । অথচ, তাঁর কলকাতার বাড়ি পড়ে রয়েছে বড় অনাদরে ।
এই বাড়িতেই বিধানচন্দ্র রায় চিকিৎসা করতেন বিনামূল্যে ৷ বাড়ির মধ্যেই গড়ে তুলেছিলেন একটি ল্যাবরেটরি । সেকালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ভিড় জমত এখানে । তাঁর দৌলতেই পরিচয় এ বাড়ির । চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের বাড়ি হিসেবে একে চেনেন, এমন এলাকাবাসীর সংখ্যা এখন নেহাৎই হাতে গোনা । অথচ এ বাড়ি হেরিটেজ বিল্ডিং বলে ঘোষিত । তারপরও বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বললেই চলে । বিশেষ করে তৃতীয় তলটি । সেখানেই ধুলো, আবর্জনার মধ্যে মেডিক্যাল সামগ্রী, পুরনো অক্সিজেন সিলিন্ডার, একাধিক আসবাব পত্র ডাঁই করে পড়ে রয়েছে । যা অত্যন্ত উদ্বেগের । বলছেন সমাজের বিশিষ্ট জনেরা ।
আরও পড়ুন: তিনি ধন্বন্তরী, পশ্চিমবঙ্গের রূপকার; 'পথের পাঁচালী' তৈরির পিছনেও তিনি
শুধু উদ্বেগেরই নয়, সরকারি গাফিলতিও বটে । কারণ, ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের বাড়িটি হেরিটেজ তালিকাভুক্ত । তাহলে কেন হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণ হয় না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । যা নিয়ে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের ও বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলির পর্ব শুরু হয়েছে ।
এ তো গেল বাড়ির ভিতরের হাল । বাড়ির বাইরের দেওয়ালের হাল দেখলে আঁতকে উঠতে হবে । স্থানীয়দের দাবি, সেখানে দিনের পর দিন মূত্রত্যাগ করছেন এলাকার দোকানদাররা । বহুবার বারণ করা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি, অভিযোগ করছেন ক্লিনিকের লোকজন । দ্বিতল ও তৃতীয় তলের ঝুলন্ত বারান্দার বেশ কিছু জায়গায় প্লাস্টার খসে পড়েছে । কয়েকটি জায়গায় প্লাস্টারে ফাটল দেখা দিয়েছে ।
এ বিষয়ে কথা বলতে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যকে ফোন করেছিল ইটিভি ভারত । বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিনে ছোটবেলার স্মৃতিচারণা করে শুভাপ্রসন্ন বললেন, "বিষয়টি দুঃখজনক । বাড়িটি হেরিটেজ তালিকাভুক্ত হয়েও কমিশনের কিছু করার নেই । কারণ দেখভালের দায়িত্ব বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের । আপনাদের মাধ্যমে তাদের অনুরোধ করব বিষয়টি দেখার জন্য ।" কিন্তু, এ ব্যাপারে দায় এড়িয়েছে বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ৷ তাদের বক্তব্য, এর দায়িত্ব কমিশনের ৷ বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শিখা মিত্র বলেছেন, "আমাদের দায়িত্ব নয় । বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হেরিটেজ কমিশনের ।"