কলকাতা, 31 ডিসেম্বর : রাজ্যে করোনা গ্রাফ আবারও ঊর্ধ্বমুখী ৷ সঙ্গে দোসর হয়েছে ওমিক্রন (West Bengal Covid Fear) ৷ দেশের প্রতিদিন যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা ৷ তেমনই প্রতিদিন সংক্রমণ ঝড়ের বেগে বাড়ছে রাজ্যেও ৷ বাড়ছে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা (Covid Third Wave Fear) ৷ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত 24 ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় দু’হাজার জন ৷ তবে, গঙ্গাসাগর থেকে ফেরার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, করোনা পরিস্থিতির দিকে রাজ্য সরকারের নজর রয়েছে ৷ তবে এখনই স্কুল বা কলেজগুলি বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি ৷ পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেই দিকে নজর থাকবে রাজ্য প্রশাসনের ৷
এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুর শোনা গেল রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গলায় ৷ শিশু চিকিৎসকরাও মনে করেন ঠিক সময় টিকার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালনই আপাতত যথেষ্ট (Doctors and Teachers are not agree to close schools and colleges) ৷
সোসাইটি ফর হেডমাস্টার এন্ড হেড মিস্ট্রেসেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘আমরা চাইছি কোভিডবিধি বজায় রেখে যেমন মেলা থেকে খেলা সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে ৷ তেমনভাবেই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক সহ সমস্ত শিক্ষা বিভাগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি চলুক ৷’’
আরও পড়ুন : West Bengal Corona : লাগামহীন সংক্রমণে রাজ্যে তৃতীয় ঢেউয়ের সংকেত, কলকাতায় গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা
শিক্ষক শিক্ষা কর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পরে আবার যখন স্কুল-কলেজ চালু হল, তাতে কি পড়ুয়াদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়েছে ? তেমনটা তো হয়নি ৷ তাই করোনা পরিস্থিতি আবারও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে বলে অফিস-কাছারি সব কিছু খোলা রেখে, শুধু স্কুল ও কলেজ বন্ধ করে দেওয়াটা কোন কাজের কথা হবে কি ? এখন আমাদের করোনাকে নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে ৷ আগামী 10 বছর যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, তাহলে কি বারে বারে স্কুল বন্ধ হতে থাকবে ? এভাবে তো ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা একেবারে লাটে উঠবে ৷ যেভাবেই হোক শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখতেই হবে ৷ তবে, পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে রাজ্য সরকার নিশ্চয় অনুরূপ ব্যবস্থা নেবে ৷’’
আরও পড়ুন : Omicron Death in India : মহারাষ্ট্রে ওমিক্রন আক্রান্তের মৃত্যু
শিশু চিকিৎসক মলয় সরকার মনে করেন, ‘‘করোনা তথা ওমিক্রন- এই দুয়েরই গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী ৷ বাড়ছে সংক্রমণ ৷ এই কথাটা যেমন সত্যি, তেমন এটাও মাথায় রাখতে হবে যে স্কুল কলেজ বন্ধ করে দিলেই যে খুব উপকার হবে তেমনটা নয় ৷ বরং একটা সমন্বয় বজায় রাখতে হবে ৷ অল্প বয়সীদের দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ৷ টিকা দিলে যেমন প্রাথমিক পর্যায় সংক্রমণকে ঠেকানো সম্ভব ৷ তেমনই কঠরভাবে মানতে হবে করোনা সংক্রান্ত স্বাথ্যবিধি ৷ তবে, খুব ছোট বাচ্চাদের এখনই স্কুলে না পাঠিয়ে, আরও কিছুদিন বাড়িতে রেখে অনলাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই শ্রেয় ৷ তবে, পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে হবে ৷ আর যদি দেখা যায় যে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে সে ক্ষেত্রে আবার কিছুদিন স্কুল বন্ধ রাখা যেতে পারে ৷ কারণ এর আগেও দীর্ঘদিন বন্ধ থেকেছে স্কুল-কলেজ ৷’’
আরও পড়ুন : Corona Update in Bengal : দুয়ারে তৃতীয় ঢেউ, দ্বিগুণ লাফে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা 2 হাজার পেরল
আরও এক শিশু চিকিৎসক জয়দেব রায় বলেন, ‘‘কোভিড বাড়ছে বলে যদি স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিতে হয় তবে অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রই বন্ধ করতে হবে ৷ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিকে স্বাভাবিকভাবে ছাড় দিয়ে, শুধু স্কুল-কলেজ বন্ধ করে রাখলে যে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ কম হবে তা কিন্তু নয় ৷ কারণ, বড়দের থেকেই ছোটরা সংক্রমিত হয় ৷ বড়দের অফিস যাওয়া বা বাইরে বেরনো বন্ধ করা সম্ভব নয় ৷ বরং স্কুলে আরও কঠোরভাবে মানতে হবে করোনাবিধি ৷ যদি কোনও পড়ুয়ার সর্দি-কাশি বা জ্বর আসে তাহলে তাকে স্কুলে আসতে দেওয়া যাবে না ৷ দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে ৷ এই ক্ষেত্রে স্কুলগুলিকে উপস্থিতির হারের ক্ষেত্রে শিথিলতা আনতে হবে ৷ স্কুলে আসতেই হবে বলে জ্বর বা সর্দির কথা না জানিয়ে স্কুলে চলে এলাম, তা করলে অন্যান্য বাচ্চাদের ভয় থেকে যায় ৷ তবে, যদি কোন স্কুলে সংক্রমিত পড়ুয়াদের সংখ্যা অনেক বেশি হচ্ছে বলে দেখা যায় ৷ সেই ক্ষেত্রে সেই স্কুলটি বন্ধ রাখতে হবে ৷’’