কলকাতা, 28 এপ্রিল : COVID-19-এ আক্রান্ত হওয়ার প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল শুকনো কাশি । বর্তমানে কাশির শব্দ যে মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে তা সত্যি । কোনও মানুষকে কাশতে শুনলে তাঁর দিকে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছেন আশেপাশের লোকজন । ভয় পাচ্ছেন । কিন্তু সেই ব্যক্তি কোরোনা আক্রান্ত কি না তার কোনও নিশ্চয়তা পাওয়া মুশকিল ছিল। এই মুশকিল আসানের পথ দেখালেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা । তাঁরা আবিষ্কার করলেন একটি যন্ত্র । যে যন্ত্র কাশির শব্দেই বলে দেবে নির্দিষ্ট ব্যক্তি কোরোনা আক্রান্ত কি না ।
সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এই যন্ত্র আবিষ্কারের বিষয়ে জানানো হয়েছে । যন্ত্রটি তৈরি করেছেন ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পড়ুয়ারা । এই বিভাগের অধ্যাপক পি ভেঙ্কটেশ্বরন, থার্ড ইয়ারের ছাত্রী অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং থার্ড ইয়ারের ছাত্র অচল নিহালনী মিলে যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছেন । এর আগে লো-কস্ট ভেন্টিলেটর বানিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের আয়োজিত হ্যাকাথনে অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অধিকার করে নিয়েছিলেন অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অচল নিহালনী । এবার তাঁদের নতুন আবিষ্কার কলকাতার ICMR শাখার প্রশংসা পেয়েছে বলে জানাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ।
কীভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র ? কাশছেন এমন মানুষকে চিহ্নিত করতে পারবে এই বুদ্ধিমান যন্ত্রটি । সেই কাশি শুনে নির্ধারণ করবে মানুষটি COVID-19-এর সম্ভাব্য আক্রান্ত কি না । এই যন্ত্রটিতে ইমেজ ও সাউন্ড সেন্সরের দেখা ও শোনার ক্ষমতা আছে । যা সম্ভাব্য COVID-19 আক্রান্তকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে । এই যন্ত্রটি স্পর্শ ছাড়াই কাজ করে । ফলে কাশি হচ্ছে এমন মানুষ দূরে থাকলেও যন্ত্রটি কাজ করবে । পাশাপাশি যন্ত্রটি কাশি হচ্ছে এমন বহু মানুষকে একসঙ্গে একই সময়ে চিহ্নিত করতে পারে । কোয়ারানটিন সেন্টার, অফিস, ক্লাসরুমের মতো যে কোনও জায়গায় থাকা মানুষকে মনিটর করার জন্য এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা যেতে পারে ।
একটি কোয়ারানটিন সেন্টারে যন্ত্রটি থাকলে, সেখানে কাশির উপসর্গ সহ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে থাকবে । কেউ কাশলে এই যন্ত্রটি সেই সময় তাঁর ছবি তুলে নেবে । একই সঙ্গে অ্যানালাইজ় করবে সেই কাশি COVID-19-এ আক্রান্ত হওয়ার ইঙ্গিত কি না । তারপরে সেই ফলাফল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেবে ।
বিশ্ববিদ্যালয় জানাচ্ছে, COVID-19 সম্ভাব্য আক্রান্ত নির্ধারণ করার জন্য প্রথম ধাপের স্ক্রিনিং সিস্টেম হিসেবে এই যন্ত্রটির ব্যবহারে উপযোগিতা দেখা গেছে । লকডাউন উঠে যাওয়ার পর এই যন্ত্রটি ইনডোর ও গণ পরিসরেও ব্যবহার করলে COVID-19-এ সম্ভাব্য আক্রান্তদের সফলভাবে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে । শুধু ইনডোরে নয়, ড্রোনের মধ্যে এই যন্ত্রটি বসিয়ে বাইরেও মনিটর করা যাবে । এই যন্ত্রটির অ্যাডভান্স ডেভেলপমেন্টের পরামর্শ দিয়েছেন COVID-19-এ আক্রান্তদের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন চিকিৎসক । যাদবপুরের পড়ুয়াদের তৈরি এই যন্ত্র খুব শীঘ্রই COVID-19-এ আক্রান্তদের নিয়ে ক্লিনিক্যাল টেস্টের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে । সবুজ সংকেত পেলেই বাজারজাত করা হবে যন্ত্রটিকে ।
কোরোনা ভাইরাসের প্রভাব রাজ্যে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার মোকাবিলায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, প্রাক্তনী, অধ্যাপক, কর্তৃপক্ষ সকলেই নিজেদের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসের ভিতর কমিউনিটি কিচেন তৈরি করেছেন । রান্না করে প্রতিদিন পথবাসী, ভিনরাজ্যের মানুষদের খাওয়াচ্ছেন । কেউ কেউ আবার ফান্ড তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুস্থ পড়ুয়া ও আশপাশের দোকানিদের সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছেন । তৈরি করা হচ্ছে লো-কস্ট মাস্ক, বিলি করা হয়েছে স্যানিটাইজ়ার ।
প্রতিদিনই কোরোনা মোকাবিলায় নতুন নতুন গবেষণা করছেন অধ্যাপক থেকে পড়ুয়া সকলেই । যাদবপুরের বিভিন্ন অধ্যাপক সংগঠন আলাদা আলাদাভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেছে । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও নিজেদের ফান্ড থেকে এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিল । সোমবার আরও ২০ লাখ টাকা ত্রাণ তহবিলে জমা দিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ।