কলকাতা, 27 নভেম্বর : ক্ষিতি গোস্বামী ৷ বামফ্রন্ট আমলের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত এই বাম নেতার নাম আজও উচ্চারিত হয় রাজ্যের বহু বাম নেতা-কর্মীদের মুখে ৷ রাজ্যে বামফ্রন্টের শাসনকালে দীর্ঘদিন মন্ত্রী ছিলেন তিনি ৷ আদন্ত ইস্টবেঙ্গল অন্তপ্রাণ প্রয়াত ক্ষিতি গোস্বামী আমৃত্যু আরএসপির পতাকা বহন করেছেন ।
কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরেই ছবিটি বদলে গিয়েছে । লেনিন সরণির আরএসপি-র রাজ্য দফতরের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে গোস্বামী বাড়ির। ক্ষিতিবাবুর জীবদ্দশাতেই 2011 সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর রাজ্য মহিলা কমিশনের শীর্ষপদাধিকারী হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। তারও আগে অবশ্য নয়ের দশক থেকেই সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল আরএসপি'র ৷ দলে তাঁর সদস্যপদ আর নবীকরণ হয়নি ৷ বছর কয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন ক্ষিতি গোস্বামী৷ এরমধ্য়েই এল নয়া চমক ৷ একেবারে বামপন্থী পরিবার থেকে উঠে আসা ক্ষিতি গোস্বামীর কন্যা বসুন্ধরা গোস্বামীকে (Daughter of Kshiti Goswami Basundhara Goswami ) এবারের কলকাতা পৌরভোটের নির্বাচনে 96 ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC Candidate in Kolkata Municipal Election) ৷
বামপন্থী পরিবার থেকে এসে একেবারে দক্ষিণপন্থী তৃণমূলের হয়ে নির্বাচনে এই লড়াইয়ের প্রসঙ্গে ইটিভি ভারতকে বসুন্ধরা গোস্বামী বলছেন,"কারণ কিছুই নয়, দিদি ডাকলেন চলে গেলাম। বামপন্থী দল আমি নিজে কখনও করিনি। বাবা করেছেন ঠিকই। আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। আর এটা কিরকম মানসিকতা, বাড়ির লোকেরা যা করেছে তা আমাকে করতে হবে ! এইভাবে কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া যায় ? আমি একজন স্বতন্ত্র মানুষ নই কি ? বাম ঘরানায় বেড়ে উঠলেও আমার কোনও কদর ছিল না। আমাকে কোনও রাজনৈতিক দল কখনও ডাকেনি ৷ সেসবের মধ্যেও আমি ছিলাম না। হতে পারে আমি ওদের এত কাছে ছিলাম যে, আমার সম্পর্কে অন্ধ ছিল। কাছ থেকে মানুষকে তো দেখা যায় না।"
বসুন্ধরা জানিয়েছেন, তিনি মুক্ত মানসিকতার মধ্যে মানুষ হয়েছেন৷ সেখানে চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা ছিল না৷ অন্তত তাঁর বাবা প্রয়াত ক্ষিতি গোস্বামী তাঁকে সেভাবে বড় করেননি বলে জানিয়েছেন বসুন্ধরা। তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে বসুন্ধরা বলেন, "দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ফোন করেছিলেন, কথা বলবেন বলে । তারপর গাড়ি করে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় তাঁর দলে যোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন । ওনার কোনও পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না, আমারও ছিল না । আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন পুরোটাই অভিষন্ধিমূলক। যদিও তা ভিত্তিহীন। আমার তো কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য ছিল না। সদস্য পদ ছিল না। তাই সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়নি ।"
প্রায় একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, "আর বামেরা চলে যাওয়ার পরে রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত অনেক বদলে গিয়েছে । একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে আমি ভিন্নভাবে ভাবতে পারি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা বামপন্থী তা নিজে প্রমাণ করে দিয়েছেন । যদি তাঁকে অবাম মনে হত, বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক মনে হত তাহলে হয় তো পারতাম না।" শনিবার মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে আসন্ন পুরভোটের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয়েছে বসুন্ধরার । বাবার বিশ্বাসকে আগলে রেখেই নতুনভাবে পথচলা শুরু ক্ষিতি কন্যার ৷