কলকাতা, 9 মে: দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে হাজার হাজার কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ । 150 বছর ধরে অব্যাহত সেবায়েতদের আইনি বিবাদ (Dakshineswar Kali Temple 150 year old case)। মন্দির যাতে ঠিকঠাক পরিচালিত হয় তার জন্য 2021 সালের মার্চে বিচারপতি শেখর ববি শরাফ সেবায়েতদের নিয়ে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন । সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নতুন করে ঝামেলা । মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত কুশল চৌধুরী এবং তাঁর সঙ্গীসাথীরা নির্বাচন ভেস্তে দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে পুরনো মামলায় যুক্ত হলেন একাধিক সেবায়েত ।
আদালত সূত্রে (oldest case in Calcutta High Court) জানা যাচ্ছে, মন্দির পরিচালনার জন্য রানি রাসমণি দেবী মৃত্যুর একদিন আগে 1831 সালের 18 ফেব্রুয়ারি তাঁর আট নাতি গণেশ দাস, বলরাম দাস, সীতারাম দাস, যদুনাথ চৌধুরী, ভূপালচন্দ্র বিশ্বাস, দ্বারিকা বিশ্বাস, ত্রৈলোক্য বিশ্বাস ও ঠাকুরদাস বিশ্বাসকে সেবায়েত নিয়োগ করে মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে যান । তারপরই তাঁর মৃত্যু হয় । কিন্তু তাঁর মৃত্যুর বছর দশেক অতিক্রান্ত হতেই অর্পণনামাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে যায় সেবায়েতদের মধ্যে বিবাদ । মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে ।
1872 সালে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন বলরাম দাস ও গুরুচরণ বিশ্বাস নামে দুই সেবায়েত । এখানে মূল বক্তব্য ছিল, রানি রাসমণি অর্পণনামা করে গেলেও মন্দির কিভাবে পরিচালিত হবে তার উল্লেখ তিনি করেননি । এরপর কলকাতা হাইকোর্ট 1912 সালে মন্দির পরিচালনার একটা গাইডলাইন তৈরি করে দেয় । পরে মন্দির পরিচালনার জন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয় । কিন্তু ধীরে ধীরে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে ৷ দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দিরের সেবায়েত সংখ্যা ক্রমে বেড়ে বর্তমানে প্রায় ছয় শতাধিক সেবায়েত রয়েছেন ।
শেষমেষ 1986 তে কলকাতা হাইকোর্ট একটি নির্দেশ দেয় (Dakshineswar Kali Temple case)৷ যেখানে বলা হয়, আদালত ও বিশেষ অফিসারের নজরদারিতে তিন বছর অন্তর ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাচন হবে । অভিযোগ, তার পর থেকে প্রায় 30 বছর ধরে ট্রাস্টি বোর্ড চালাচ্ছেন কুশল চৌধুরী এবং তাঁর সমর্থক কিছু সেবায়েত । এ ব্যাপারে আইনজীবী বিজয় অধিকারী জানালেন, "হাইকোর্ট মন্দির পরিচালনার জন্য গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছিল, পাশাপাশি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে দিয়েছিল । কিন্তু সেই ট্রাস্টি বোর্ড বর্তমানে চালাচ্ছেন কুশল চৌধুরী এবং তাঁর সমর্থক কয়েকজন সেবায়েত, যাঁরা হাজার হাজার কোটি টাকা নয়ছয় করছেন । মন্দিরে যাঁরা সাধারণ পূজা দিতে আসেন, তাঁরা যে সোনাদানা দান করেন, সেগুলোর কোনও হিসেব থাকে না । সেগুলো বউবাজার বা অন্য কোথাও বিক্রি হয়ে যায় ।"
কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছিল । সেই অনুযায়ী 2022 সালে ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাচন হওয়ার কথা । কিন্তু কুশল চৌধুরী ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা নির্বাচন প্রক্রিয়া ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলে অভিযোগ । এই নিয়েই মামলাটি ফের উঠেছিল বিচারপতি রবি কিষান কাপুরের বেঞ্চে । কিন্তু এর আগে যেহেতু বিচারপতি শেখর ববি শরাফ কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দেবজ্যোতি ভট্টাচার্যর তত্ত্বাবধানে এই মন্দিরের নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই কারণে বিচারপতি রবি কিষান কাপুর মামলাটি প্রায় এক মাস ধরে শোনার পর ফের বিচারপতির শেখর ববি শরাফের বেঞ্চে ফেরত পাঠিয়েছেন । আগামী এগারো মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে ।