কলকাতা, 29 এপ্রিল : সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির দু’দিনের সভা শেষ হল শুক্রবার । বৃহস্পতিবার রামচন্দ্র ডোমের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে আলোচনা হয় । সভায় রাজ্য সম্মেলন পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি ও নির্বাচনী লড়াইয়ের পর্যালোচনা করা হয় । এছাড়াও দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়েছে সিপিএম রাজ্য কমিটির এই বৈঠকে ৷
বৈঠকে বিশেষ রিপোর্ট পেশ করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (CPM State Secretary MD Salim) । এই সম্মেলনের প্রথম দিনে 15 জনের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী গঠন করা হয়েছে । নবগঠিত সম্পাদকমন্ডলীতে মহম্মদ সেলিম, রামচন্দ্র ডোম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, অমিয় পাত্র, সুজন চক্রবর্তী, আভাস রায়চৌধুরী, শমীক লাহিড়ী, সুমিত দে, অনাদি সাহু, কল্লোল মজুমদার, পলাশ দাশ যেমন রয়েছেন তেমনই দেবব্রত ঘোষ, দেবলীনা হেমব্রম, জিয়াউল আলম, জীবেশ সরকারকেও জায়গা দেওয়া হয়েছে ৷ শেষের এই চারজন সিপিএম রাজ্য কমিটিতে নতুন মুখ ৷ যদিও সম্পাদকমন্ডলীতে জায়গা পাওয়া বেশ কিছু নাম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে । কারণ দলে নতুন প্রজন্মকে জায়গা দেওয়ার কথা বলা হলেও বেশকিছু পক্ককেশ রয়ে গিয়েছেন বলে সিপিএমের অন্দরেই গুঞ্জন উঠেছে ৷
আরও পড়ুন : শাহী-সফরের জন্যই কি কেন্দ্রীয় নির্দেশে বঙ্গ বিজেপিতে ঐক্যের ছবি ?
যদিও সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম নতুনভাবে গঠিত সম্পাদকমন্ডলীকে স্বাগত জানিয়ে আগামীর আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করার কথা জানিয়েছেন । সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এদিন বলেন,“সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আগামী দু'মাস কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে । আইনশৃঙ্খলা, পরিবেশ, নিয়োগ দুর্নীতি, দেউচা-পচামি-সহ সবকিছু নিয়ে আন্দোলন হবে । রাস্তায় নেমে আন্দোলন করব ও আদালতে আইনি পথে সব লড়াই হবে ।” একই সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, রাজ্যের শাসক দল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতি অপরাধের মাত্রা লঘু করে দেখাতে নানাভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন এবং বিরোধীতায় কখনও মাওবাদীদের কথা, কখনও আপের কথা নিয়ে আসছেন । সবকিছুই করছেন বিভ্রান্ত করতে । সেলিমের কথায়, “এখন কোথাও মরিচঝাঁপি থেকে মাও, কোথাও আপ । বিরোধীদের বিভাজন করতে চাইছেন । ইচ্ছা করেই এসব করা হচ্ছে । মানুষ সব বুঝতে পারছে । ধরা পড়ে যাচ্ছেন । বামেরাই একমাত্র মানুষের সমস্যা বোঝে, সেটা আগের মত এখনও পরিষ্কার,”।
নিজেদের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে সিপিএম যে ঝাঁপাবে দেবে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন সেলিম ৷ বলছেন, “এক বছর পরে পঞ্চায়েত ভোট হবে । নতুন শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে আমরা লড়ব । যারা দলবদল করে গিয়েছে তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন প্রজন্মকে সঙ্গী করেই আমরা এগোব । নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানাচ্ছি এই লড়াই অংশ নিতে ।” রাজ্যের একের পর এক অসামাজিক ঘটনা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক ৷ তাঁর প্রশ্ন,“এই রাজ্যে মানবাধিকার কমিশন কোথায় ? যারা মানবাধিকার মানে না, তারা মানবাধিকার কমিশনও মানে না । তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি এই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে যা বলেছেন সেই কথার প্রতিবাদ করছি । সাংবিধানিক পদে থেকে এসব বলা যায় না । তবে যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের ভাবতে হবে এতদিন তো এসব শুনতে হয়নি ।” উত্তরাখণ্ডে দেওয়ানি বিধি লাগু করা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মহম্মদ সেলিম । তাঁর মতে, "যারা মানুষের অধিকার মানে না, তারা কীভাবে অভিন্ন দেওয়ানী বিধির কথা বলছেন । আমরা রামমোহন রায়ের রাজ্যের লোক । এখন রামমোহন থাকলে হয়তো তাঁকে শাস্তির মুখে পড়তে হত । সংবিধানে বলা আছে কেন্দ্র অভিন্ন দেওয়ানী বিধি করবে । সেই নির্দেশ যদি তারা মানেন, তার আগে সকলের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । সেই কথাও সংবিধানে বলা আছে । যারা মানুষে মানুষে বিভেদ করে তারা কী করে করবে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি ? মানুষের মৌলিক অধিকার যেখানে প্রতি মুহূর্তে আক্রান্ত, সেখানে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি!”
আরও পড়ুন : সর্বভারতীয় স্তরে বাঙালির নেতৃত্বেই ফের আস্থা রাখতে চলেছে ডিওয়াইএফআই
এদিন বাংলাভাগ প্রসঙ্গেও বিজেপির সমালোচনা করেছেন মহম্মদ সেলিম ৷ বলছেন,“বাংলা ভাঙার কথা যারা বলছেন, তাঁরা বলার সাহস কোথা থেকে পাচ্ছেন । তারা কি তৃণমুল কংগ্রসে ফিরে যেতে চাইছেন? এসব বলে বাংলার ঐক্য ভাঙতে চাইছেন তারা । এটা বলার সাহস পেল কোথা থেকে ? এরা নেতা হলেন কীভাবে? তৃণমূলের এই শাসনের জন্যই এই সমস্ত নেতারা এমন বক্তব্য রাখছেন ।"