কলকাতা, 26 সেপ্টেম্বর : মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে "টানাটানির চোরাস্রোত" বইতে শুরু করেছে বলে কটাক্ষ করলেন বামনেতা সুজন চক্রবর্তী । গত 24 সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের (Rajesh Bindal) বেঞ্চে ভবানীপুর উপনির্বাচন (Bhabanipur Bye election) সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয় ৷ আদালতে শুধুমাত্র ভবানীপুরেই উপনির্বাচনের অনুমতি দেওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India) হলফনামা পেশ করেছিল ৷ তাতে উল্টে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, "শুধুমাত্র একটি কেন্দ্রে কেন নির্বাচন করা হবে ? বাকি সব কেন্দ্রে নির্বাচন করা হবে না কেন ?" ৷ মামলার শুনানি শেষ হলেও আপাতত মামলার রায়দান প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি ৷ এদিকে নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসছে ৷ প্রচার তুঙ্গে ৷
সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামে হেরে গিয়ে ভবানীপুরে এসে জিততে চান । মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আমি এমএলএ না থাকলে মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারব না ।" এই উপনির্বাচন নিয়ে আদালত ভর্ৎসনা করেছে বলে জানান বামনেতা ৷ মুখ্যমন্ত্রীর ভবানীপুরে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ফিরে আসা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "তৃণমূলের বহু নেতা তাদের বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছেন । মুখ্যমন্ত্রী না জিতলে, ভোট না হলে, আর কার কার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রয়েছে ।" অনেক নেতা অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, "এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও কেউ কেউ অপেক্ষায় আছেন কি না, এখন সেটাই দেখার বিষয় ৷"
আরও পড়ুন : Calcutta High Court : জয়ী প্রার্থী পদত্যাগ করলে উপনির্বাচনের খরচের দায় কার ? প্রশ্ন আদালতের
মুখ্যমন্ত্রী প্রচারে দাবি করেছেন তৃণমূল সবচেয়ে সৎ পার্টি ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের এহেন দাবিকে আক্রমণ করে সুজন চক্রবর্তী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর লজ্জা হওয়া উচিত । তাঁর দলের যত বড় নেতা, তিনি তত বড় দুর্নীতিগ্রস্ত । প্রত্যেক দিন একটার পর একটা সমন খাচ্ছেন । উনি বলছেন, সব চাইতে সৎ পার্টি না কি তৃণমূল ৷" তিনি প্রশ্ন করেন, "সততার প্রতীক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এই লেখাটা উড়ে গেল কোথায় ?"
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র 'জাগোবাংলা'র সম্পাদকীয়তে কংগ্রেসকে 'পচা ডোবা' বলে কটাক্ষ করেছে মুখ্যমন্ত্রীর দল ৷ এই প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী জানান, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর রাগ আছে, সেটা বোঝা গেল । তিনি প্রশ্ন তোলেন, "লড়াইটা বিজেপির বিরুদ্ধে নাকি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, সেটা উনি আগে ঠিক করুন । বিজেপি তাঁর এই অবস্থানে খুশি হবে ।" বরং এটা মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির লাভের জন্য করছেন, বলে জানান বামনেতা ৷
পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করে বলেন , "সিপিএম সম্পর্কে বলার হিম্মত ওনাকে কে দিয়েছে । 34 বছর বামফ্রন্ট সরকার ছিল রাজ্যে ৷ একটা কালো কালির দাগ যারা লাগাতে পারেনি, তারা লম্বা চওড়া কথা বলছে ।" তিনি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস, বিজেপি দুই সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন । সিবিআই, ইডি শত চেষ্টা করেও কোনও বাম নেতার বিরুদ্ধে কিছু খুঁজে বের করতে পারেনি । তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী সব চেষ্টা করেছেন । 10 বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী আছেন । কমিশন গড়ে টাকার শ্রাদ্ধ করেছেন । একটা কাগজ বের করতে পারেননি, কমিশনের রিপোর্ট সামনে আনতে পারেননি । সিআইডি লম্পঝম্প করলেও আজ পর্যন্ত কোনও কালো দাগ খুঁজে বের করতে পারেনি ।"
আরও পড়ুন : Jago Bangla : তৃণমূলই আসল কংগ্রেস, রাহুলের দল পচা ডোবা ; কটাক্ষ জাগোবাংলায়
বামনেতা বলেন, "গোটা ভারতের মানুষ জানে রাজনীতি মানে সততা, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা ৷ আর এটা বামপন্থীরা পারে । এই সব শিখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দশজন্ম ঘুরে আসতে হবে ।" ভবানীপুর উপনির্বাচনে 3 জন প্রার্থীর মধ্যে অন্যতম বামপ্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাসের প্রচারে তেজ অন্যদের তুলনায় কম ৷ মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মোদাশ্বার হোসেন ৷ তাঁর হয়ে প্রচারে গিয়ে এই কথাগুলি বলেন বামনেতা ৷