কলকাতা, 22 ফেব্রুয়ারি : দেশের পাঁচটি রাজ্যে নতুন করে বাড়ছে কোভিড-19-এর সংক্রমণ। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে অবিলম্বে প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, যে কোনও সময় এ রাজ্যেও কোভিড-19-এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে কোভিড-19-এর এই সংক্রমণ। পরিস্থিতি হয়ে উঠতে পারে আরও ভয়ঙ্কর। এমনই আশঙ্কার কথা বলছেন চিকিৎসকরা।
মহারাষ্ট্র, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগড় এবং, পঞ্জাব। দেশের এই পাঁচটি রাজ্যে নতুন করে কোভিড-19-এর সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-19-এর এই সংক্রমণ বৃদ্ধি এদেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এই বিষয়ে এ রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের পাঁচটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ, জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর তরফে চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, "এই পাঁচটি রাজ্যে গবেষকরা যেটা চিন্তা করছেন, সেটা হল তিনটি স্ট্রেইন। এক, এইমসের ডিরেক্টর ভারতের যে স্ট্রেইনের কথা বলেছেন, সেটাই যথেষ্ট সংক্রামক। এটার জন্য একটা ওয়েভ আসছে। দুই, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের স্ট্রেইন। এই স্ট্রেইনগুলিও নতুন করে উদ্ভব হচ্ছে।"
চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের তরফে চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, "ভারতের যে রাজ্যগুলির সঙ্গে বহির্বিশ্বের সব থেকে বেশি যোগাযোগ রয়েছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে কেরল, মহারাষ্ট্র। এই রাজ্যগুলির সঙ্গে বাইরের সব থেকে বেশি যোগাযোগ। স্বাভাবিকভাবেই এই রাজ্যগুলির বাসিন্দারা এক্সপোজড হয়েছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই ওই সব রাজ্যে সংক্রমণ ফিরে আসছে। অবিলম্বে এটা থামিয়ে দিতে না পারলে বিপদের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।"
এই চিকিৎসক বলেন, "ভারতের স্ট্রেইন সংক্রামক। বাকি দু’টি স্ট্রেইন-ও সংক্রামক। যদিও ভ্যাকসিনেশন পুরোদমে চলছে। কিন্তু নতুন সংক্রমণের যে ওয়েভ আসছে, দেখা যাচ্ছে গত বছরের অগস্ট মাসের পর থেকে গত পাঁচ দিন ধরে এটা বাড়ছে। এর জন্য অবিলম্বে সাবধান হওয়া ভালো। কয়েক মাস আগেও যে বিষয়গুলি আমরা মানতাম, সেগুলি কঠোরভাবে আবার মেনে চলতে হবে। যেমন, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, স্যানিটাইজড করা। এ সব না হলে আমাদের এখানেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবে না।" যদিও, নতুন করে আবার যে সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে, তাকে এখনও সেকেন্ড ওয়েভ হিসাবে বলার সময় আসেনি। এ কথার পাশাপাশি চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, "তবে, জনস্বাস্থ্য গবেষকরা এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। কোভিড-19-এর সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভের আশঙ্কা এখনও থেকে যাচ্ছে। এর জন্য একজন চিকিৎসক হিসাবে আমি চিন্তিত।"
এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "কোভিড-19 এখন যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে, তাতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্ক করছেন যে সেকেন্ড ওয়েভ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনও কোনও দেশে ইতিমধ্যেই সেকেন্ড ওয়েভ এসেও গিয়েছে। আমাদের দেশে সেকেন্ড ওয়েভ আসার সম্ভাবনা নেই , এই বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সম্প্রতি আমাদের দেশের কয়েকটি রাজ্যে যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, এটা আমাদের অ্যালার্ম দিচ্ছে যে, সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে।" এই চিকিৎসক বলেন, "এই রকম পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা যেভাবে অনেকদিন ধরে বলেছিলেন, কোভিড-19 প্রতিরোধের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেটা আমাদের দেশের এবং রাজ্যের সরকার মেনে চলছে না। এর ফলে বিপদ বাড়ছে।"
আরও পড়ুন : কোরোনা বাড়ছে, বিস্ফোরণে জখমদের কাছে বেশি না যাওয়ার অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রীর
আপৎকালীন পরিস্থিতির কারণে দেশজুড়ে চলছে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনেশন। তবে, সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "ভ্যাকসিন নিয়ে বর্তমানে যে ধরনের গিমিক তোলা হয়েছে যে, ভ্যাকসিনের মাধ্যমে সব প্রতিরোধ হয়ে যাবে, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়। কারণ, ভারতের 140 কোটি মানুষকে খুব কম সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন দিতে পারলে, তবেই হয়তো খানিকটা সম্ভব হতে পারে। অন্যথায়, ভ্যাকসিনের মাধ্যমে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। কারণ, হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করতে পারবে না ভ্যাকসিন। কারণ, এত মানুষকে কম সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব নয়।"
চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা খুঁজে বের করা, দ্রুত রোগনির্ণয় করা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, এ সব করা না হলে যে কোনও সময়ে সেকেন্ড ওয়েভ চলে আসতে পারে যেভাবে ফার্স্ট ওয়েভ এসেছিল। সরকার যদি এখনও সতর্ক না হয় তা হলে সত্যিই নতুন সংক্রমণ আটকানো কঠিন হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাস্তবে সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে। তখন ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।"