কলকাতা, 29 মে : করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে জেরবার সারা বিশ্ব ৷ এদিকে, রাজ্যে আবার বাড়ল কার্যত লকডাউনের মেয়াদ ৷ বন্ধ জীবিকা, রুজি-রুটি ৷ মাথায় হাত খেটে খাওয়া লাখো মানুষের ৷ এই অবস্থায় চরম অনটনের মধ্যে দিন কাটছে অনাথ আশ্রমে শিশুদের ৷ যেসব প্রবীণদের চালচুলো নেই, যাঁরা অন্যের দয়ায় কোনও আশ্রমে ঠাঁই পেয়েছেন, আতান্তরে পড়েছেন তাঁরাও ৷ আশ্রম চালাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে কর্তৃপক্ষ তথা সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির ৷ সকলেরই দাবি, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত আশ্রমগুলি বাদে অন্য আশ্রমগুলির চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন কাটছে।
রাজ্যজুড়ে কার্যত লকডাউন কার্যকর হওয়ায় সব থেকে সমস্য়া দেখা দিয়েছে আশ্রমগুলিতে খাবার সরবরাহের কাজে ৷ অনাথ আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্য়ক্তিরা জানাচ্ছেন, অন্য সময়ে সমাজের নানা স্তরের মানুষ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছ থেকে মাঝেমধ্যেই রেশন ও অন্যান্য অনুদান আসত ৷ তবে এখন সেসব নেই বললেই চলে ৷ এর ফলে আশ্রমের তহবিলে টান পড়েছে ৷ অনলাইন টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও তাতে তেমন অভ্যস্ত নন অধিকাংশই ৷
আরও পড়ুন : করোনায় মৃত্যু রানাঘাটের তৃণমূল নেত্রী মধুমিতা বিশ্বাসের
দক্ষিণ বারাসতের একটি বৃদ্ধাশ্রমের প্রধান উপদেষ্টা করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের বৃদ্ধাশ্রমটি যেহেতু কিছুটা গ্রামের দিকে, তাই এখন অনুদান নিয়ে আর কেউই যাচ্ছেন না সেখানে ৷ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে যশ ঘূর্ণিঝড় ৷ গত বছর আমফানের সময়েও একই অবস্থা হয়েছিল ৷ এবারও তাই ৷ আমাদের বৃদ্ধাশ্রম প্রায় জলের তলায় চলে গিয়েছিল ৷ আগের লকডাউনের সময় এখানকার আবাসিকদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়াই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ ৷ এলাকার দোকানগুলি বন্ধ থাকায় শহর থেকে মুড়ি এবং বাতাসা কিনে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ পাশাপাশি, আমাদের দুরবস্থার কথা জানতে পেরে কিছু মানুষ আবাসিকদের কয়েক জনের খাওয়া-দাওয়ার খরচের দায়িত্ব নেন ৷’’
আর এবারের কার্যত লকডাউন পরিস্থিতি সম্পর্কে করুণা বলেন, ‘‘আবারও একটা লকডাউন ৷ আবারও একটা ঝড় ৷ এর ফলে এই কয়েক মাসে আমরা যে খাবার, পোশাক, ওষুধপত্র-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাড় করে রাখতে পেরেছিলাম, তার সবটাই জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ আবাসিকদের জামাকাপড়, বিছানা-সহ সব কিছুই ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ আবার সব নতুন করে সবটা শুরু করতে হবে ৷ তবে আমরা আর্থিকভাবে খুবই দুর্বল ৷ কীভাবে কী করব, এখনও বুঝে উঠতে পারছি না ৷’’
আর্থিক সমস্যার সঙ্গেই রয়েছে সংক্রমণের ভয় ৷ ঘূর্ণিঝড়ের পর যেভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বয়স্ক ও শিশুদের রাখা হচ্ছে, তাতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে ৷ করুণা বলেন, ‘‘ভাত, ডাল ও আলু সেদ্ধ জোগাড় করতেই প্রতিদিন নিদারুণ লড়াই করতে হচ্ছে ৷ এই অবস্থায় এঁদের জন্য ভালো খাবারের আশা করা নেহাতই দিবাস্বপ্ন ৷’’
আরও পড়ুন : করোনার ভয়ে দূরে পরিচিতরা, মৃতের শেষকৃত্যে এগিয়ে এলেন বিডিও
অন্যদিকে, দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ায় একটি অনাথ আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত এক উপদেষ্টা ভি সি শ্রীকান্তন বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় শিশুদের অন্যত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ আবাসিকদের কারও কারও আত্মীয় রয়েছেন ৷ তাদের সেখানেই পাঠানো হয়েছে ৷ আর যেসব শিশুদের তিন কুলে কেউ নেই, তাদেরই শুধুমাত্র হোমে রাখা হয়েছে ৷’’ তবে করোনা আবহে কার্যত লকডাউন জারি হওয়ায় অর্থাভাবে ধুঁকছে এই আশ্রমটিও ৷ বাচ্চাদের খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্ৰী জোগাড় করতে গিয়ে প্রবল সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে ৷