কলকাতা, 30 মে : সকালের আত্মবিশ্বাসী চোখমুখ আর ছিল না । CBI-এর একাধিক কর্তার সাড়ে 9 ঘণ্টা ধরে জেরার পর কার্যত বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল পুলিশ অফিসার অর্ণব ঘোষকে । চোখের ভাষায় তখন চিন্তার ছাপ স্পষ্ট । ম্যারাথন জেরাতেই সব শেষ হয়ে যায়নি তো ? আজ তাঁকে ফের আসতে হবে CGO কমপ্লেক্স । আবারও মুখোমুখি হতে হবে জেরার ।
সূত্রের খবর, একের পর এক প্রশ্নে অর্ণবকে রীতিমতো নাজেহাল করে দেন CBI কর্তারা । আসলে এই দিনটারই অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা । তৈরি ছিল নিখুঁত হোমওয়ার্ক । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা জানতেন, কিছুদিন ওই একই সংস্থায় ডেপুটেশনে কাজ করা অর্ণব হোমওয়ার্ক করেই আসবেন । থাকবে বুনোট ডিফেন্স । সূত্র জানাচ্ছে, সকালে CBI কর্তাদের একের পর এক বাউন্সার দক্ষতার সঙ্গেই সামলাচ্ছিলেন ওই পুলিশ অফিসার । পরে তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ, বয়ান সামনে আনতেই ডিফেন্সে কিছুটা চিড় ধরে । CBI কর্তারা তখনই ছুড়তে শুরু করেন মোক্ষম প্রশ্নগুলো ।
সূত্র জানাচ্ছে, অর্ণব ঘোষের কাছে জানতে চাওয়া হয় বেশ কিছু চিরকুটের কথা । প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তিকে ভাউচারে (পড়ুন চিরকুট) লিখে টাকা দিয়েছিলেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন । তিনি তাঁর জবানবন্দীতে জানিয়েছিলেন সে কথা । সারদার অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের বেশকিছু পদস্থ কর্তাকে জেরা করেও জানা গেছিল একই তথ্য । কিন্তু তদন্তে নেমে CBI একটিও চিরকুট খুঁজে পায়নি । সেগুলো গেল কোথায় ? CBI-এর সন্দেহ, রাজ্য সরকার গঠিত SIT সেই সব চিরকুট সরিয়ে দিয়েছে । সূত্র জানাচ্ছে, এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় অর্ণবের কাছে । তবে, অর্ণব কী বলেছেন তা জানাতে চাননি CBI আধিকারিকরা ।
তদন্ত চলাকালীন CBI জানতে পারে, ওই চিরকুটগুলি রাখা ছিল সল্টলেকে মিডল্যান্ড পার্কে সারদার মূল অফিসে । যেখানে অর্ণব ঘোষের নেতৃত্বে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল বেশ কিছু নথি । পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রভাবশালীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চালাচ্ছে CBI । সেই সূত্রে SIT-এর কাছে চাওয়া হয় নথি । বেশ কিছু নথি রাজ্য পুলিশ দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে । কিন্তু সেখানে চিরকুট ছিল না । সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের দেওয়া নথি ভালোভাবে খতিয়ে দেখে সেই সব চিরকুটের বিষয়ে সন্দেহজনক তথ্য পেয়েছেন CBI কর্তারা । সেই তথ্য পেশ করেই আজ অর্ণবকে জেরা করা হয় । আর তাতেই নাকি ডিফেন্সে চিড় ধরে যায় দুঁদে পুলিশ কর্তার । CBI-এর ধারণা, ওই চিরকুট লোপাট করেছে SIT । সেই বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠা করতেই উঠে পড়ে লেগেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে । প্রথমত প্রতিষ্ঠা করা যাবে, SIT নথি নষ্টের চেষ্টা চালিয়েছে । দ্বিতীয়ত, পুলিশ কর্তাদের চাপ দিয়ে যদি ওই নথি বের করা যায় তবে খোঁজ মিলতে পারে প্রভাবশালীদেরও ।