কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর : হিলি-বালুরঘাট রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ কেন স্থগিত রয়েছে, তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যকে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বুধবার এই সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ পাশাপাশি জানিয়েছে যে আগামী 29 নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৷
এদিন মামলার শুনানি কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের ডিভিশন বেঞ্চে ৷ গত জুলাই মাসে এই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন হিলির বাসিন্দা বীরেন্দ্রকুমার মাহাতো । তিনি আদালতের কাছে আর্জি জানান, যাতে হিলি থেকে বালুরঘাট রেল লাইন সম্প্রসারণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷
আরও পড়ুন : Calcutta High Court: আদালতের গুঁতোয় যোগ্যদের নিয়োগপত্র স্কুল সার্ভিস কমিশনের
এদিন শুনানিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির রাজেশ বিন্দালের ডিভিশন বেঞ্চে কেন্দ্র-রাজ্য দুই তরফের আইনজীবীরা জানান, এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও হাতে পাননি তাঁরা । তারপরই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নির্দেশ দেন যে আগামী 29 নভেম্বরের মধ্যে দু'পক্ষকেই তাঁদের বক্তব্য জানাতে হবে ।
মামলাকারী বীরেন্দ্রবাবুর মূল বক্তব্য, হিলি-বালুরঘাট রেল সম্প্রসারণের বিষয়টি পড়ে রয়েছে গত 12 বছর ধরে । রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে ৷ কিন্তু সব দলই পারষ্পরিক দোষারোপ করেন ৷ অথচ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ দেখান না । যার ফলে ভুগতে হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষকে ।
আরও পড়ুন : Mukul Roy: মুকুলের পিএসি চেয়ারম্যান নিয়োগ মামলা স্পিকারের কাছে ফেরত পাঠাল হাইকোর্ট
আদালতকে মামলাকারী জানিয়েছেন, এখানে রেল যোগাযোগ গড়ে উঠলে এলাকার মানুষের সামগ্রিক উন্নতির রাস্তা খুলে যাবে । স্বাধীনতার এত বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও রেল যোগাযোগ কী জিনিস, তা এলাকার লোকজন জানেন না । সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন এমনিতেই পিছিয়ে রয়েছেন । এই কাজ শেষ হলে এলাকার বেকার ছেলে-মেয়েদের রুটি-রুজির যেমন পথ তৈরি হতে পারে, তেমনই দেশের অন্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত সহজ হবে ।
আদালতে বীরেন্দ্রবাবুর আইনজীবী কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হিলি-বালুরঘাট রেল সম্প্রসারণের কাজ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় ৷ কিছু ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ হয়েছে ৷ কিছু ক্ষেত্রে হয়নি৷ দীর্ঘ 38 কিলোমিটার রেলপথ চালু হলে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য রাস্তা খুলে যাবে ৷ বালুরঘাট তথা দক্ষিণ দিনাজপুরের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হলে, এই রেলপথ অপরিহার্য ৷ তাই সরকার এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করুক ৷’’ এরপর এই প্রকল্পের কাজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট দিতে বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ৷ পাশাপাশি কেন্দ্রকে জানানো হয় যে তারা যেন 29 নভেম্বরের মধ্যে তাদের বক্তব্য জানায় ।
আরও পড়ুন : Bhabanipur Bye Election : মুখ্যসচিবের চিঠির কড়া সমালোচনা হাইকোর্টের, ভবানীপুর উপনির্বাচনে কোনও বাধা নেই
উল্লেখ্য, 2010 সালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালুরঘাট থেকে হিলি পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ প্রকল্প রূপায়ণের কথা ঘোষণা করেছিলেন । বালুরঘাট থেকে হিলি পর্যন্ত রেলপথের জন্য 410 একর জমি চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন ।
সেই জমির ম্যাপ অনুযায়ী, রেলপথ সম্প্রসারণের দিকে লক্ষ্য রেখে বালুরঘাট আত্রেয়ী ও যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য সেতুর কাজ শুরু হয় । কিন্তু তা আজও অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ।
আরও পড়ুন : COVID-19 : করোনার থাবায় বিশ্বের দরবারে ব্রাত্য কুশমণ্ডির মুখোশ শিল্প, চাষবাসে মন হস্তশিল্পীদের
এরপর তিন দফার বাজেটে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল এই প্রকল্পের জন্য । এরই মধ্যে 2011 সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ইস্তফা দেন রেলমন্ত্রক থেকে ৷ তার পরই প্রকল্পের গতি কমতে থাকে ৷ জমিজটের জন্য জেলা প্রশাসন রেলকে জমি হস্তান্তরিত না করায়, দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ থমকে রয়েছে বলে অভিযোগ ।