কলকাতা, 24 ডিসেম্বর : পৃথক রাজ্য গঠন নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বে পাহাড়ে উন্নয়নের লক্ষ্যেই তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দিয়েই একথা জানালেন জিটিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিনয় তামাং (Binay Tamang Joins TMC) ৷ তবে কি গোর্খ্যাল্যান্ডের দাবিতে আর সরব হবেন না গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এই প্রাক্তন নেতা (Binay Tamang on Gorkhaland) ? এদিনের দলবদলের অনুষ্ঠানে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে এমন কোনও প্রত্যক্ষ মন্তব্য না করলেও বিনয়ের বার্তা ছিল স্পষ্ট ৷ তাঁর সাফ কথা, পাহাড়ে উন্নয়ন চাই ৷ আর তার জন্য রাজ্যভাগ জরুরি নয় ৷ বরং পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা সেক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ৷ আর সেই লক্ষ্য পূরণ করতেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee: জিটিএ নির্বাচনের ইঙ্গিত, পাহাড়ে শীঘ্রই লাগু ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা
এদিন কলকাতার একটি হোটেলে বিনয় তামাংয়ের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও মলয় ঘটক ৷ দলবদল করেন কার্শিয়াংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক রোহিত শর্মাও ৷ এই কর্মসূচির মঞ্চ থেকেই এদিন বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন বিনয় ৷ তাঁর বক্তব্য, গোর্খাল্যান্ডের দাবির সঙ্গে পাহাড়বাসীর আবেগ জড়িয়ে রয়েছে ৷ কিন্তু, এই দাবির বাস্তবায়ন একটি সাংবিধানিক বিষয় ৷ অথচ, বিজেপি সেই দাবি পূরণের ‘ললিপপ’ দেখিয়েই পাহাড়ে ক্ষমতা বিস্তার করে চলেছে ৷ পাহাড় থেকে একের পর এক সাংসদ পেয়েছে তারা ৷ কিন্তু, পাহাড়ের মানুষের কোনও উন্নয়ন করেনি ৷
পাহাড়ের অর্থনীতি মূলত পর্যটননির্ভর ৷ অথচ গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের নামে বারবার অশান্ত হয়ে উঠেছে দার্জিলিং ৷ টানা বনধের জেরে একটা সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন পর্যটকরা ৷ স্কুল, কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পড়ুয়ারাও ৷ বিনয়রা এই পরিস্থিতির বদল চাইছেন ৷ আর সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কেই কার্যত ‘উন্নয়নের কাণ্ডারী’ হিসাবে বেছে নিয়েছেন তাঁরা ৷ বিনয় মনে করেন, এই মুহূর্তে বিজেপিকে ঠেকানো তাঁদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ৷ পাহাড় হোক বা দিল্লির মসনদ, বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তাই মমতার উপরেই আস্থা রাখছেন বিনয় ৷ এমনকী, চব্বিশের লোকসভা ভোটেও মমতাকেই মুখ করে বিজেপিবিরোধী শক্তিকে বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি ৷
অন্যদিকে, জিটিএ গঠনে তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও রাজ্যভাগের ভাবনা কোনও দিনই সমর্থন করেনি ঘাসফুল শিবির ৷ তাদের সেই অবস্থান যে এখনও বদলায়নি, বিনয় তামাংয়ের এদিনের বক্তব্যই তার প্রমাণ ৷ বরং জিটিএ-র অধীনে পাহাড়ের প্রশাসনিক কার্যকলাপ নির্ঝঞ্ঝাট করার পক্ষেই সওয়াল করেছেন তিনি ৷ প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে মলয় ঘটকের গলাতেও ৷ মন্ত্রী জানিয়েছেন, শীঘ্রই জিটিএ নির্বাচন করা হবে ৷ সেক্ষেত্রে দল এককভাবে লড়াই করবে, নাকি অন্য কারও সঙ্গে জোট বাঁধবে, সে বিষয়ে এখনও কোনও কিছু স্থির করা হয়নি ৷ সেই সিদ্ধান্ত আগামী দিনে নেবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তবে বিনয় তামাং তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পাহাড়ের রাজনীতিতে যে একটা বড়সড় পরিবর্তন আসবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই বলে মনে করেন মলয় ৷
আরও পড়ুন : Gorkhaland Row : কেন্দ্রের ডাকা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক বয়কটের সিদ্ধান্ত বিমল-অনীতদের
এই প্রসঙ্গে আর এক মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘পাহাড়বাসীর আশা পূরণের চেষ্টা করব আমরা ৷ বিজেপি পাহাড় এবং সমতলের মধ্যে বিভাজন ঘটাতে চায় ৷ সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘুর মধ্যে বিভাজন ঘটাতে চায় ৷ বিজেপির রাজনীতির মেরুদণ্ডই হল বিভাজন ৷’’ ব্রাত্যর বক্তব্য, একুশের নির্বাচনেই বাংলার মানুষ এই বিভাজনের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছেন ৷ বদলে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের উন্নয়নে আস্থা রেখেছেন তাঁরা ৷ আগামী দিনে পাহাড়েও সেই উন্নয়ন পৌঁছে যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন ব্রাত্য ৷