কলকাতা, 18 অক্টোবর : মৎস্যজীবীকে হেপাজতে নেওয়া নিয়ে ঠিক বলছে না বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী । একটা গল্প তৈরি করে ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করল BSF । আজ ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও অপহৃত মৎস্যজীবীকে এখনও পর্যন্ত ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়ে দিলেন BSF কর্তা রবি রঞ্জন ।
এদিকে, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, BGB-র হাতে আটক মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে চারঘাট থানায় মামলা করেছেন বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক সদস্য । মামলায় প্রণব মণ্ডলের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও আইন ভঙ্গ করে প্রজনন মরসুমে ইলিশ ধরার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে খবর । আজ সকালেই তাঁকে আদালতের নির্দেশে জেলে পাঠানো হয়েছে । যদিও BSF-র দাবি, গতকাল যে ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছিল, তাতে আজ প্রণবকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল । রবি রঞ্জন এ প্রসঙ্গে বলেন, "ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে BGB জানিয়েছিল, ওই মৎসজীবীকে তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে । আজ তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে কথা দেওয়া হয়েছিল । আমরা এখনও অপেক্ষা করছি ।"
ঘটনা গতকালের । জলঙ্গির তিন মৎস্যজীবী পদ্মায় মাছ ধরছিলেন । সেই সময় তাঁরা জলসীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে যান । তখনই তাঁদের আটক করে BGB। বিষয়টি জানানো হয় BSF-কে । পরে দু'পক্ষের মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং হয় । তখন দুই মৎস্যজীবীকে ছেড়ে দেওয়া হয় । কিন্তু একজনকে তারা ছাড়েনি । BSF-র দাবি, তাঁকে আজ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল । দুই মৎস্যজীবীকে নিয়ে কাটমারি চর সীমান্ত এলাকার দিকে ফিরছিল BSF । আচমকা পিছন দিক থেকে গুলি ছুটে আসে । সে সময় হেড কনস্টেবল বিজয়ভান সিংহের মাথায় গুলি লাগে । অন্য এক কনস্টেবল BGB-র ছোড়া গুলিতে আহত হন । তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয় ।
গত রাতে BGB র রাজশাহীর 1 ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিক সম্মেলন করেন । সেখানে তিনি বলেন অন্য "গল্প" । পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হয় একটি ছবি । তাঁর দাবি, "মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মা নদীতে অভিযানে যায় BGB। এই সময় বাংলাদেশের জলসীমার অনেকটাই ভিতরে মাছ ধরছিল তিন ভারতীয় মৎস্যজীবী । আটকের চেষ্টা করা হলে দু'জন পালিয়ে যান ।"
BGB-র এই বক্তব্যে প্রশ্ন তুলেছে BSF । তাদের তরফে দেওয়া হয়েছে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের একটি নৌকার ছবি । রবিরঞ্জনের প্রশ্ন "ভারতীয় মৎস্যজীবীরা যে নৌকা ব্যবহার করছিল তাতে কোনও ইঞ্জিন নেই । অথচ বলা হচ্ছে ইঞ্জিনবিহীন নৌকা দিয়ে মৎস্যজীবীরা নাকি পালিয়েছিল । BGB-র কাছে থাকে ইঞ্জিনসহ স্পিডবোট । এই স্পিডবোটের সঙ্গে ইঞ্জিনবিহীন নৌকা কোনওভাবেই এঁটে উঠতে পারবে না । অর্থাৎ এখানে গল্প তৈরি করেছে BGB ।"
জিয়াউদ্দিন মাহমুদ গতকালের সাংবাদিক বৈঠকে আরও বলেন, "ঘটনার কিছুক্ষণ পর 117 BSF ব্যাটেলিয়নের কাগমারি শিবির থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল অনুমতি ছাড়া শূন্যরেখা অতিক্রম করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢোকে । তারা BGB টহল দলের কাছে এসে আটক ভারতীয় মৎস্যজীবীকে ছেড়ে দিতে বলে । BGB টহল দল ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে ভারতীয় জেলেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে বলে জানায়, কিন্তু BSF-র সদস্যরা ভারতীয় নাগরিককে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।'' বাধা দিলে BSF-র সদস্যরা নাকি BGB টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন, দাবি জিয়াউদ্দিনের । আত্মরক্ষার জন্য BGB-র টহল দলও ফাঁকা গুলি ছোড়ে, এমনটাও দাবি করে তিনি জানান, BSF-র সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থান ত্যাগ করে চলে যান ।"
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত BGB-র দেওয়া ছবি দেখিয়ে BSF দাবি করেছে, "এটা পরিষ্কার যে আমরা ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের জন্য বাংলাদেশ গিয়েছিলাম । ওই ছবিই প্রমাণ করছে ।" অর্থাৎ মৎস্যজীবীদের ছিনিয়ে আনার যে তত্ত্ব সামনে এনেছে BGB, তা ঠিক নয় ।