কলকাতা, 12 ফেব্রুয়ারি : রাজ্যে কি এবার সাংবিধানিক সংকট হতে চলেছে ? শনিবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের একটি টুইট থেকে আপাতত সেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ৷ কারণ তিনি জানিয়েছেন, আপাতত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশন (Bengal Governor Jagdeep Dhankhar) স্থগিত করে দিলেন (bengal governor prorogue wb legislative Assembly from today) ৷ আজ, 12 ফেব্রুয়ারি থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হল ৷
প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী বিধানসভা অধিবেশন ডাকা এবং তাকে স্থগিত করা সবটাই রাজ্যপালের অনুমতি সাপেক্ষে । তবে এই কাজ রাজ্যপাল করে থাকেন সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে । সংবিধানের 174 ধারা অনুসারে রাজ্যপাল ইচ্ছে বা খুশি মতো অধিবেশন যেমন ডাকতে পারেন না, আবার তা স্থগিত করে দিতেও পারেন না । তবে এটা স্পষ্ট নয়, রাজ্যপাল এই কাজ মন্ত্রিসভার পরামর্শের ভিত্তিতে করলেন নাকি নিজের খেয়াল-খুশি মতো করেছেন ।
যদি খুশিমতো এই কাজ রাজ্যপাল করেন তাহলে তা অবশ্যই সংবিধানসম্মত নয় বলে মনে করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা । যদিও গোটা বিষয়টিকে তেমন আমল দিতে রাজি নন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । কারণ তিনি মনে করছেন, এটা একটি গতানুগতিক প্রক্রিয়া । এই নিয়ে উদ্বেগের তেমন কিছু নেই । সাধারণত অধিবেশন ডাকা ও স্থগিতের খবর রাজ্যপালকে রাজ্য সরকার এবং বিধানসভাকে জানাতে হয় । তিনি সেটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে দিয়েছেন । কেন তিনি এমনটা করলেন তা দেখতে হবে ।
তবে বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ কিন্তু এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন । তিনি জানিয়েছেন, অতীতে এভাবে 174-এর দুই ধারা কখনওই ব্যবহৃত হয়নি । ফলে সরকার চাইলেই তাদের খুশিমতো বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে পারবে না । এক্ষেত্রে আদালতই একমাত্র উপায়, যেখানে গিয়ে এর বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ পাওয়া যেতে পারে ।
একই বক্তব্য তৃণমূল নেতা তথা দমদমের সাংসদ সৌগত রায়ের । তিনি জানান, রাজ্যপাল বাংলায় সাংবিধানিক অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছেন । অতীতে এই ধরনের নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত কখনওই কোনও রাজ্যপাল নেননি । এখন এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের উন্নয়নের কাজ আটকে যাবে । বাজেট পেশ করা যাবে না । ফলে সরকার চাইলে আদালতে গিয়ে এর বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে পারেন ।
প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় রাজ্যপালের এই উদ্যোগকে অহেতুক উত্তেজনা তৈরির প্রয়াস বলে জানিয়েছেন । সংবিধান রাজ্যপালকে কখনওই মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়া বিধানসভা স্থগিত করে দেওয়ার ক্ষমতা দেয়নি । এক্ষেত্রে তিনি যদি এমনটা করে থাকেন, তা আসলে সংবিধান বিরোধী ।
-
WB Guv:
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) February 12, 2022 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
In exercise of the powers conferred upon me by sub-clause (a) of clause (2) of article 174 of the Constitution, I, Jagdeep Dhankhar, Governor of the State of West Bengal, hereby prorogue the West Bengal Legislative Assembly with effect from 12 February, 2022. pic.twitter.com/dtdHMivIup
">WB Guv:
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) February 12, 2022
In exercise of the powers conferred upon me by sub-clause (a) of clause (2) of article 174 of the Constitution, I, Jagdeep Dhankhar, Governor of the State of West Bengal, hereby prorogue the West Bengal Legislative Assembly with effect from 12 February, 2022. pic.twitter.com/dtdHMivIupWB Guv:
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) February 12, 2022
In exercise of the powers conferred upon me by sub-clause (a) of clause (2) of article 174 of the Constitution, I, Jagdeep Dhankhar, Governor of the State of West Bengal, hereby prorogue the West Bengal Legislative Assembly with effect from 12 February, 2022. pic.twitter.com/dtdHMivIup
পক্ষে-বিপক্ষে এরকম একাধিক মত রয়েছে । মোটের উপর রাজ্যপালের এই টুইট রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে একটা অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি করেছে । যদিও রীতিনীতি ও গণ্ডিতে এমন সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন । তার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জোরদার আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে । তবে মনে করা হচ্ছে বিধানসভার অধিবেশনে রাজ্য সরকার যেহেতু রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারই প্রেক্ষিতে হয়তো এমন পদক্ষেপ করলেন ধনকড় ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেখা গিয়েছে দিল্লিতে বাজেট অধিবেশন চলাকালীন রাজ্যপাল ইস্যুতে একাধিকবার সরব হয়েছে তৃণমূল । প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কাছে 'বেসরকারিভাবে' রাজ্যপালকে সরানোর আবেদন জানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা । এরই মাঝে রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে সরানোর দাবিতে সংসদে স্বতন্ত্র প্রস্তাব আনে তৃণমূল কংগ্রেস । 170 ধারায় রাজ্যসভায় এই প্রস্তাব আনা হয় । মূলত এর বিরুদ্ধে গিয়ে কি এই সাংবিধানিক অচলাবস্থা তৈরির উদ্যোগ নিলেন রাজ্যপাল, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন ।
আরও পড়ুন : TMC motion against Governor in RS : রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে রাজ্যসভায় প্রস্তাব তৃণমূলের