কলকাতা, 21 মার্চ : সম্পূর্ণ প্রতারণা করা হয়েছে । এভাবেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির ইস্তেহারের সমালোচনায় বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী । বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি এবং দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ রবিবার এই রাজ্যে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করলেন । যা দেখে বাম নেতার প্রশ্ন, "এটা কি ভারতবর্ষের নির্বাচনের ম্যানিফেস্টো প্রকাশ হচ্ছে । অমিত শাহ করছেন, দিলীপ ঘোষ করেননি । অমিত শাহ প্রকাশ করলেন, সেটা কি রাজ্যের নির্বাচনের মানসিকতায় ? না কেন্দ্রের নির্বাচনের মানসিকতায় ? কেন্দ্রীয় মনোভাবে যা যা বলেছিলেন তা কোনটাই করেননি । 15 লক্ষ টাকা দেবেন বলেছিলেন, দুকোটি বেকারের চাকরি হবে বলেছিলেন, সবই প্রতারণা । আজকে বললেন আশাকর্মীদের মাইনে বাড়ানো হবে । এটা কি শুধু এই রাজ্যেই হবে না পুরো দেশে হবে । এটা তো হতে পারে না । স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামোর উন্নয়নের কথা বলছেন, যা আরেকটি প্রতারণা । পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের আগে বাড়তি বলছেন । যার অঙ্ক মিলছে না । একটা এইমস গড়তে সাতবছর চলে গেল । আরও তিনটি এইমস করার কথা বলছেন । যা প্রতারণা ছাড়া কিছু নয় ।"
বামফ্রন্ট তাদের নির্বাচন ইস্তেহার ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য বিজেপি তাদের নির্বাচন ইস্তেহার প্রকাশ করল । সুজন চক্রবর্তী বিজেপির সমালোচনার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিশানা করেছেন । তাঁর মতে, "এই জায়গায় অমিত শাহ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুর মিলে যাচ্ছে । মুখ্যমন্ত্রী বলছেন বাংলা নিজের মেয়েকে চায় । মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মহিলা মহিলা একটা ভাব করছেন । উনি বাংলার মহিলা এতদিন ছিলেন না, হবেন । এখানে প্রতিযোগিতা চলছে । অমিত শাহ মহিলাদের জন্য এখন বলছেন । আসলে একই ছাচ থেকে একই সুর বেরোচ্ছে । চাকরিতে তেত্রিশ শতাংশ সংরক্ষণ । সাতবছর ধরে করেননি । অন্য রাজ্যে কি হয়েছে । এটা কি সারা দেশে হয়েছে । আপনি একশো শতাংশ সংরক্ষণ করতেই পারেন । বলতে তো ট্যাক্স লাগে না । সরকারের চাকরি নেই তো।চাকরি তুলে দিচ্ছে, নেগেটিভ যাচ্ছে । ফলে পুরোটাই বেঠিক হচ্ছে ।"
ইস্তেহারে অন্নপূর্ণা ক্যান্টিন শুরু করার কথা বিজেপি বলেছে । এই ঘোষণাতেও রাজ্য এবং কেন্দ্রের শাসকের একই সুর পাচ্ছেন সুজন চক্রবর্তী । বলছেন, "বিজেপি বলছে অন্নপূর্ণা ক্যান্টিন, কয়েকদিন আগে তৃণমূল মা ক্যান্টিন চালু করবে । আমি বলছি লকডাউনের সময়ে মানুষের খাদ্যের সংকটে বিজেপি, তৃণমূল, রাজ্য, কেন্দ্র সরকার কোথায় ছিল । তখন মানুষের কাছে শুকনো খাবার পৌছে দেওয়া, কমিউনিটি কিচেন, শ্রমজীবি ক্যান্টিন করেছে বামপন্থীরা । সারা ভারত এই বিকল্প মডেল দেখেছে । যখন করার ছিল তখন করেননি । আমি বলছি মা, অন্নপূর্ণা নামগুলোকে কলুষিত করবেন না । বামপন্থীরা মানুষের বিশ্বাস জয় করেছে । নকল করাটা ধরা পরে যাচ্ছে ।"
আরও পড়ুন : সরকারি চাকরিতে মহিলাদের সংরক্ষণের সংকল্প বিজেপির
ক্যাবিনেট চালু হলে সিএএ চালু করার কথা বলেছে বিজেপি । যা নিয়েও কটাক্ষ সুজন চক্রবর্তীর গলায় । তাঁর মতে, "প্রধানমন্ত্রী এতদিন যা বলছিলেন তাতে 2019-এ সিএএ চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল । 19, 20, 21 গেল, ক্যাবিনেট মিটিং হয়নি ? ক্যাবিনেট মিটিং প্রতি সপ্তাহে হয় । এর জন্য আটকে গেল ? অসমের ভোটের প্রভাব যাতে এখানে না হয় সেই কারণে বলছেন । অসমে সিএএ র বিরুদ্ধে অথচ বাংলায় পক্ষে। অথচ একটাই সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার । রাজ্যভেদে এটা হয় না, প্রতারণা করা হচ্ছে। আমি বলছি, বাংলায় যে মানুষ যুগ যুগ ধরে এখানে আছেন । সূর্যের আলোয়, এখানকার বাতাসে বড় হচ্ছেন, বসবাস করছেন তারা সকলেই নাগরিক । এখানে তারা ভোট দেন । নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন । কেড়ে নেওয়ার আইনের প্রস্তাব 2003 সালে করা হয়েছিল । আমাদের দাবি ওই আইন বাতিল করা হোক । জলে ফেলে দিয়ে টেনে তোলা, দেখানো হচ্ছে বাঁচালাম । এবার আমাকে ভোট দে । এই ধরনের মানসিকতা দিল্লির, রাজ্যের, যা প্রতারণা । আমরা বলছি কারো হিম্মত হবে না। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থাকলে কারো হিম্মত হত না সিএএ নিয়ে কলকাতায় এসে তরপাবার। যতই মোদি, শাহ বেনাগরিক করার কথা বললেও আমরা রুখে দেব ।"