ETV Bharat / city

"ত্রাণ নয়, কাজ চাই", বলছেন পানশালার শিল্পীরা - আবার পানশালা খুলুক চাইছেন শিল্পীরা

লকডাউন শিথিল হওয়ার পর হোটেল-রেস্তরাঁ খুললেও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হতে পারে এই অশঙ্কায় খোলেনি সিঙ্গিং বারগুলি৷ অন্যদিকে গ্রাম-মফঃস্বলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও লকডাউনের বাজারে বন্ধ৷ এই অবস্থায় অভাবের দিন কাটাচ্ছেন শহরের পানশালার শিল্পীরা৷ তবে, দান বা ত্রাণ নয়, কাজ চাইছেন কণ্ঠশিল্পী থেকে বাদ্যযন্ত্রীরা৷ তাঁদের অনুরোধ, এবার সিঙ্গিং বারগুলিকে খোলার অনুমতি দিক সরকার৷

Bar and stage artist of kolkata
পানশালার শিল্পীরা৷
author img

By

Published : Jun 14, 2020, 5:17 PM IST

Updated : Jun 22, 2020, 8:09 PM IST

কলকাতা, 14 জুন: গায়কের জীবন থেকে যদি গান বিদায় নেয়, তবে তার থেকে খারাপ কিছু হতে পারে না৷ অনেকটা সেই পরিস্থিতিই দেখা দিয়েছে ৷ কারণ, পেটে ভাত পড়লে তবেই তো কণ্ঠে গান আসবে, হাতে গিটার উঠবে৷ লকডাউনের বাজারে সেই ভাতটুকু জোগাড় করাই যে কঠিন চ্যালঞ্জ হয়ে উঠছে ওঁদের কাছে৷ ওঁরা কলকাতা শহরের বিভিন্ন বার-রেস্তরাঁর গায়ক-গায়িকা, বাদ্যযন্ত্রী ৷ গত আড়াই মাস ধরে চূড়ান্ত আর্থিক অনটনে দিন কাটাচ্ছেন৷ যেহেতু শিল্পী, ফলে চট করে অন্যদের মতো পেশা বদলানোয় মন সায় দিচ্ছে না৷ এমন অবস্থায় অভিমানী শিল্পীরা চাইছেন, মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতিতে যেমন সাধারণ রেস্তরাঁ-হোটেল-শপিং মল চালু হয়েছে, তেমনভাবেই সিঙ্গিং বারগুলিও এবার খুলে যাক৷ মোদ্দা কথা, কাজে ফিরতে চান ওঁরা৷

চলতি মাসের শুরু থেকে শিথিল হয়েছে লকডাউন৷ আড়মোড়া ভেঙে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে রাজ্য। খুলেছে বহু সরকারি-বেসরকারি অফিস। খুলছে দোকান, শপিং মল, হোটেল, রেস্তরাঁ। তবে, সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখার শর্ত রয়েছে সবখানে। উলটো দিকে, স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হতে পারে এই আশঙ্কায় যে সব পানশালা তথা রেস্তরাঁয় গানবাজনা হয়ে থাকে সেগুলিকে খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর এর ফলেই অভাবের দিন শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না শহরের পানশালার শিল্পীদের৷ এই গায়ক-গায়িকা, বাদ্যযন্ত্রীরা অনটনে পড়ে লকডাউনের মধ্যেই আর্থিক সহায়তার আর্জি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ যদিও তাতে কোনও লাভ হয়নি বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।

পানশালা ও স্টেজ ফাংশনের পরিচিত কণ্ঠশিল্পী পুষ্পিতা ভট্টাচার্য বলেন, "লকডাউনের আগে থেকে আমাদের মতো মহিলা শিল্পীদের অবস্থা শোচনীয়। যখন থেকে পানশালা ও রেস্তরাঁগুলিতে ডান্স শুরু হয়েছে, তখন থেকেই কণ্ঠশিল্পীদের চাহিদা কমছিল। কারণ, যাঁরা বারে আসেন তাঁরা গানের চেয়ে নাচ দেখতেই বেশি আগ্রহী। ওইসব নাচের সঙ্গে ল্যাপটপে মানানসই গান বাজানো শুরু হল। আমাদের অবস্থাও খারাপ হল। এখন দোসর হল লকডাউন। স্টেজ শো ও অন্যান্য অনুষ্ঠান করে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা উপায় পেয়েছিলাম, লকডাউনে সেটাও শেষ হয়ে গেল। এতদিন জমা পুঁজি ভাঙিয়ে খেয়েছি৷ এখন তাও শেষের পথে।"

লকডাউনে সংকটে পানশালার শিল্পীরা৷

এই অবস্থায় পানশালা খুলুক চাইছেন শিল্পীরা৷ তবু, সেগুলি খুললেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানে গানবাজনার কতটা সুযোগ থাকবে তা নিয়ে চিন্তিত তাঁরা৷ অন্যদিকে, গ্রাম মফঃস্বলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলি (শিল্পীদের ভাষায়-মাচা ফাংশন) ফের কবে চালু হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। এই অবস্থায় সরকারি সাহায্য পেলে উপকৃত হবেন বলে জানাচ্ছেন কণ্ঠশিল্পী বর্ণালী রায়চৌধুরি৷ তিনি বলেন, "ব্যাঙ্কে জমানো যা ছিল তা দিয়ে এতদিন সংসার টেনেছি। এবার তাও ফুরিয়ে এসেছে। সরকার যদি আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে সাহায্যের হাত বাড়ায় তাহলে উপকৃত হই।"

বাদ্যযন্ত্রী দীপক ঘোষ রায়ের কথায়, "খুলে গেছে টলিপাড়া। খুলে গেছে রেকর্ডিং স্টুডিওগুলি। সর্বত্রই সমাজিক দূরত্ব মেনে কাজ শুরু হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের কাজের জায়গাগুলিকেও ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হোক।"

তবে, শিল্পী স্বভাবসুলভ অভিমানে বাঘাযতীন মিউজিশিয়ান অ্যান্ড সিঙ্গারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মিঠু মুখোপাধ্যায় বলে দিলেন, "আমাদের ত্রাণ দিতে হবে না৷ কাজের সুযোগ করে দিক সরকার৷" তিনি আরও বলেন, "পরের প্রজন্ম যদি এই পেশায় আসতে চায় তবে তাদের বারণ করব। লকডাউন আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। বুঝতে পেরেছি, শিল্পীদের অবস্থানটা কোথায়। সরকারের কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ, আমাদের কোনও ত্রাণ বা দানের প্রয়োজন নেই। কাজ দিয়ে সাহায্য করুন।"

মানুষকে আনন্দ দেওয়া যাঁদের পেশা, তাঁরাই আজ দুঃখে আছেন!

কলকাতা, 14 জুন: গায়কের জীবন থেকে যদি গান বিদায় নেয়, তবে তার থেকে খারাপ কিছু হতে পারে না৷ অনেকটা সেই পরিস্থিতিই দেখা দিয়েছে ৷ কারণ, পেটে ভাত পড়লে তবেই তো কণ্ঠে গান আসবে, হাতে গিটার উঠবে৷ লকডাউনের বাজারে সেই ভাতটুকু জোগাড় করাই যে কঠিন চ্যালঞ্জ হয়ে উঠছে ওঁদের কাছে৷ ওঁরা কলকাতা শহরের বিভিন্ন বার-রেস্তরাঁর গায়ক-গায়িকা, বাদ্যযন্ত্রী ৷ গত আড়াই মাস ধরে চূড়ান্ত আর্থিক অনটনে দিন কাটাচ্ছেন৷ যেহেতু শিল্পী, ফলে চট করে অন্যদের মতো পেশা বদলানোয় মন সায় দিচ্ছে না৷ এমন অবস্থায় অভিমানী শিল্পীরা চাইছেন, মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতিতে যেমন সাধারণ রেস্তরাঁ-হোটেল-শপিং মল চালু হয়েছে, তেমনভাবেই সিঙ্গিং বারগুলিও এবার খুলে যাক৷ মোদ্দা কথা, কাজে ফিরতে চান ওঁরা৷

চলতি মাসের শুরু থেকে শিথিল হয়েছে লকডাউন৷ আড়মোড়া ভেঙে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে রাজ্য। খুলেছে বহু সরকারি-বেসরকারি অফিস। খুলছে দোকান, শপিং মল, হোটেল, রেস্তরাঁ। তবে, সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখার শর্ত রয়েছে সবখানে। উলটো দিকে, স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হতে পারে এই আশঙ্কায় যে সব পানশালা তথা রেস্তরাঁয় গানবাজনা হয়ে থাকে সেগুলিকে খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর এর ফলেই অভাবের দিন শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না শহরের পানশালার শিল্পীদের৷ এই গায়ক-গায়িকা, বাদ্যযন্ত্রীরা অনটনে পড়ে লকডাউনের মধ্যেই আর্থিক সহায়তার আর্জি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ যদিও তাতে কোনও লাভ হয়নি বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।

পানশালা ও স্টেজ ফাংশনের পরিচিত কণ্ঠশিল্পী পুষ্পিতা ভট্টাচার্য বলেন, "লকডাউনের আগে থেকে আমাদের মতো মহিলা শিল্পীদের অবস্থা শোচনীয়। যখন থেকে পানশালা ও রেস্তরাঁগুলিতে ডান্স শুরু হয়েছে, তখন থেকেই কণ্ঠশিল্পীদের চাহিদা কমছিল। কারণ, যাঁরা বারে আসেন তাঁরা গানের চেয়ে নাচ দেখতেই বেশি আগ্রহী। ওইসব নাচের সঙ্গে ল্যাপটপে মানানসই গান বাজানো শুরু হল। আমাদের অবস্থাও খারাপ হল। এখন দোসর হল লকডাউন। স্টেজ শো ও অন্যান্য অনুষ্ঠান করে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা উপায় পেয়েছিলাম, লকডাউনে সেটাও শেষ হয়ে গেল। এতদিন জমা পুঁজি ভাঙিয়ে খেয়েছি৷ এখন তাও শেষের পথে।"

লকডাউনে সংকটে পানশালার শিল্পীরা৷

এই অবস্থায় পানশালা খুলুক চাইছেন শিল্পীরা৷ তবু, সেগুলি খুললেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানে গানবাজনার কতটা সুযোগ থাকবে তা নিয়ে চিন্তিত তাঁরা৷ অন্যদিকে, গ্রাম মফঃস্বলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলি (শিল্পীদের ভাষায়-মাচা ফাংশন) ফের কবে চালু হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। এই অবস্থায় সরকারি সাহায্য পেলে উপকৃত হবেন বলে জানাচ্ছেন কণ্ঠশিল্পী বর্ণালী রায়চৌধুরি৷ তিনি বলেন, "ব্যাঙ্কে জমানো যা ছিল তা দিয়ে এতদিন সংসার টেনেছি। এবার তাও ফুরিয়ে এসেছে। সরকার যদি আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে সাহায্যের হাত বাড়ায় তাহলে উপকৃত হই।"

বাদ্যযন্ত্রী দীপক ঘোষ রায়ের কথায়, "খুলে গেছে টলিপাড়া। খুলে গেছে রেকর্ডিং স্টুডিওগুলি। সর্বত্রই সমাজিক দূরত্ব মেনে কাজ শুরু হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের কাজের জায়গাগুলিকেও ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হোক।"

তবে, শিল্পী স্বভাবসুলভ অভিমানে বাঘাযতীন মিউজিশিয়ান অ্যান্ড সিঙ্গারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মিঠু মুখোপাধ্যায় বলে দিলেন, "আমাদের ত্রাণ দিতে হবে না৷ কাজের সুযোগ করে দিক সরকার৷" তিনি আরও বলেন, "পরের প্রজন্ম যদি এই পেশায় আসতে চায় তবে তাদের বারণ করব। লকডাউন আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। বুঝতে পেরেছি, শিল্পীদের অবস্থানটা কোথায়। সরকারের কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ, আমাদের কোনও ত্রাণ বা দানের প্রয়োজন নেই। কাজ দিয়ে সাহায্য করুন।"

মানুষকে আনন্দ দেওয়া যাঁদের পেশা, তাঁরাই আজ দুঃখে আছেন!

Last Updated : Jun 22, 2020, 8:09 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.