কলকাতা, 18 ফেব্রুয়ারি : চলতি বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য়াঙ্কের বেসরকারিকরণের ঘোষণার পর থেকেই বিপন্ন হয়ে পড়েছে এ রাজ্যের ব্য়াঙ্ক শিল্প । অভিযোগ ব্য়াঙ্ক সংগঠনগুলির নেতৃত্বের । তাদের দাবি, 2021-22 অর্থবর্ষের বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা শুনে মনোবল হারিয়েছেন ব্য়াঙ্কের কর্মীরা । লাগাতার তাঁরা আন্দোলন এবং অবস্থান বিক্ষোভ করছেন শহরের বিভিন্ন জায়গায় । কয়েকদিন আগে অফিস পাড়াতেও বণিকসভার অফিসের সামনে মোমবাতি হাতে ব্য়াঙ্ক বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান কর্মীরা ।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানিয়েছেন, দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য়াঙ্ককে বেসরকারিকরণ করা হবে । সেইসঙ্গে, এলআইসি-সহ বিভিন্ন সংস্থাতেও 74 শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ করা হবে । এরপরই ব্য়াঙ্ক আধিকারিক এবং কর্মচারীদের সংগঠনগুলি ক্ষোভে ফেটে পড়ে । দেশ এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে পোক্ত রাখতে ব্য়াঙ্কগুলিকে বাঁচাতে মরিয়া অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন ।
দেশের প্রায় 80 কোটি মানুষ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য়াঙ্কের ওপর নির্ভরশীল । দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য়াঙ্ককে বেসরকারি হাতে তুলে দিলে সংশ্লিষ্ট দু’টি ব্য়াঙ্কেরই গ্রাহকের পরিমাণ কমে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় দাস ।
বৃহস্পতিবার সঞ্জয় দাস এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ব্য়াঙ্ক শিল্পকে বিপন্ন করে তুলেছে । সাধারণ কর্মচারী থেকে ব্য়াঙ্কের গ্রাহক, সকলের মনেই দ্বিধা তৈরি হয়েছে । সরকারের অর্থনীতির মেরুদণ্ড রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য়াঙ্কগুলির বেসরকারিকরণ হলে সরকারি প্রকল্পগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে । কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী জনকল্যাণ যোজনা থেকে এ রাজ্যের কন্যাশ্রীর মতো বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের কাজ মুখ থুবড়ে পড়বে । কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের প্রকল্পের কাজে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য়াঙ্কগুলিই এগিয়ে এসেছে সবার আগে । এমনকী নোট বাতিলের সময়েও এই ব্য়াঙ্কগুলির বিশেষ ভূমিকা ছিল । যাঁরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য়াঙ্কে কাজ করছেন, আগামী দিনে তাঁরা কীভাবে কাজ করবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ৷’’
আরও পড়ুন: তেলুগু ভূমি কি ভিএসপি-র বেসরকারিকরণ মেনে নেবে?
এই পরিস্থিতিতে গ্রাহক পরিষেবাও বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা সঞ্জয় দাসের ৷ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ব্য়াঙ্ক বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে ৷ অথচ যাঁরা ঋণ নিয়ে পালিয়ে গেলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ব্যবস্থা নিল না । পরোক্ষে পলাতকদের সুবিধাই দিল কেন্দ্রীয় সরকার ।’’
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় দাস জানান, ‘‘ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ না করে কর্মীসংখ্যা বাড়িয়ে আরও ভালো পরিষেবা দেওয়া দরকার গ্রাহকদের । রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য়াঙ্ক থেকে শিক্ষা ঋণ দেওয়া হয় । ব্যাঙ্কগুলির বেসরকারিকরণ হলে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে । রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য়াঙ্ক গ্রাহক পরিষেবা দেয় । নিজেদের লাভের কথা ভাবে না ৷’’
