ETV Bharat / city

Balai Dey: বাঙাল হলেও আমি সবার আগে মোহনবাগানী, বলছেন জীবনকৃতি বলাই দে - বাঙাল হলেও আমি সবার আগে মোহনবাগানী

29 জুলাই মোহনবাগান দিবসে বলাই দে-র হাতে তুলে দেওয়া হবে জীবনকৃতি সম্মান (Balai Dey to get Lifetime Achievement award on Mohun Bagan Day this year)। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন তিনি।

Balai Dey
জীবনকৃতি বলাই দে
author img

By

Published : Jul 15, 2022, 11:07 PM IST

কলকাতা, 15 জুলাই: "সবুজ-মেরুন জার্সি আমার জীবনের সবকিছু। পূর্ব পাকিস্তান থেকে এখানে এসেছিলাম। ইস্টবেঙ্গল আমার প্রথম ক্লাব হলেও জীবনের সবকিছু প্রাপ্তি মোহনবাগানে। তাই এবছরের যে জীবনকৃতি সম্মান ক্লাব আমাকে দিচ্ছে তা সমস্ত সম্মানের উপরে ৷" অনাবিল আনন্দ ঝরে পড়ছিল সত্তরোর্ধ্ব বলাই দে-র গলায়। 29 জুলাই মোহনবাগান দিবসে তার হাতে তুলে দেওয়া হবে জীবনকৃতি সম্মান (Balai Dey to get Lifetime Achievement award on Mohun Bagan Day this year)। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ময়দানে সোনালি বিকেলে দর্শকভরা গ্যালারির সামনে ফুটবল নৈপুণ্য প্রদর্শনের মধ্যে প্রশংসা এবং নিন্দা দুই জুটতো। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে সদস্য-সমর্থকের আবেগের রেশ আজও স্পর্শ করে আছে বলাই দে-র মনে। আবেগে বুজে আসা গলায় বলাই দে বলেন, "জানেন কাদের সঙ্গে খেলেছি। তারা যেমন বড় ফুটবলার আবার বড় মানুষও। প্রতিপক্ষ দলে খেললেও একটা স্পোর্টিং মেন্টালিটি, বন্ধুত্বপূর্ণ সহবস্থান ছিল। গত দুই বছরে সেই সব বন্ধুদের অনেকেই চলে যেতে দেখলাম। আমার সম্মান উৎসর্গ করছি সেই সব হারিয়ে ফেলা বন্ধুদের ৷"

হাওড়া সালকিয়ার রাস্তা পেরিয়ে লিলুয়ার ভট্টনগর মীরপাড়ার শক্তি সংঘের উলটোদিকের দোতলা বাড়ি বলাই দে-র ঠিকানা। 1946 সালের 11 অক্টোবর ফরিদপুরের কোটালিয়া পাড়ার গুয়াখোলা গ্রামে বলাই দে-র জন্ম। 1961 সালে মাত্র 15 বছর বয়সে খুলনা হিরোজের হয়ে খেলা শুরু। ঢাকা মহমেডান, খুলনা টাউনের হয়ে খেলার সুবাদে পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান। পরের বছর 1965 সালে কলকাতায় আত্মীয় বাড়িতে ঘুরতে এসে স্থানীয় ক্লাবের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন। সেখান থেকেই বিএনআর কর্তাদের চোখে পড়েন। 425 টাকা মাসিক মাহিনাতে বিএনআর-এ যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পান। এই সময় ছোট্ট সমস্যার কথা ধরিয়ে দেন ইস্টবেঙ্গলের প্রবাদপ্রতীম কর্তা জ্যোতিষ গুহ। যেহেতু বলাই দে পূর্ব পাকিস্তানের ফুটবলার সেই কারণে ফিফার অনুমতি লাগবে। যা বিএনআর নিয়ে আসতে পারবে না। এই অবস্থায় জ্যোতিষ গুহ প্রস্তাব দেন তিনি এই অনুমতি নিয়ে এসে দেবেন। বদলে বলাই দে-কে ইস্টবেঙ্গলে খেলতে হবে। লাল-হলুদের এই প্রস্তাবে রাজি হন তিনি বলাই দে। খেলার জন্য মোট 6 হাজার টাকা দেওয়া হয়। সঙ্গে ভাইয়ের চাকুরি। এক মরশুম ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষা করেন।

তৃপ্ত বলাই দে বলেন, "সেইসময় থঙ্গরাজ, সনৎ শেঠ ইস্টবেঙ্গলের হয়ে নিয়মিত খেলছেন। আমি কিছু কিছু ম্যাচ খেলছি। এই অবস্থায় নতুন মরশুমের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসে এরিয়ান। ইস্টবেঙ্গলের সম পরিমাণ টাকা দিতে না পারলেও নিয়মিত সুযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। 1967 সালে যোগ দিয়েছিলাম এরিয়ানে। সেই বছর খুব ভালো খেলার সুবাদে পড়ের মরশুমের জন্য প্রস্তাব আসে মোহনবাগানের থেকে। 1968-71 এটাই সেরা সময়। মোহনবাগানের জার্সিতে খেলার সুবাদেই 1969 সালে ভারতীয় দলের ডাক পেয়েছিলাম। সেদিক থেকে বলা যেতেই পারে দুই দেশের জার্সি চাপানোর কৃতিত্ব রয়েছে আমার ৷" সবুজ-মেরুন জার্সিতে কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্ড, ডুরান্ড কাপ, রোভার্স কাপ, বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জিতেছেন তিনি। পূর্ব পাকিস্তানে ক্লাব ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার ক্রিকেট নৈপুণ্যের প্রশংসা করেছিলেন হানিফ মহম্মদ। সেই সব স্মৃতি ছিয়াত্তর বছরের মানুষটির কাছে পরম পাওয়া।

আরও পড়ুন: বকেয়া না-মেটালে লিগ খেলতে রাজি নয় মোহনবাগান

রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান, জেনারেল মানেক শ, জেনারেল ভুট্টোর কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। বলাই দে বলছেন, "জীবনে বহু সম্মান পেয়েছি। 1974 সাল পর্যন্ত ক্লাব ফুটবল খেলেছি কৃতিত্বের সঙ্গে। সরে আসার আগে শেষ দুই বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলেছিলাম। অফিস ফুটবল খেলেছি 88 সাল পর্যন্ত। আজও মাঠে গেলে সবাই ছুটে আসে। এটাই প্রাপ্তি। তবে সবার ওপরে মোহনবাগানের জীবনকৃতি সম্মান। এটা আমার জীবনের সেরা।" পাশাপাশি সবুজ-মেরুন জার্সিতে খেলার কারণেই স্টেট ব্যাংকের চাকরি পেয়েছিলেন, তাই বাঙাল হলেও মনে প্রাণে তিনি মোহনবাগানী ৷ জানান ছিয়াত্তরের বলাই দে ৷

কলকাতা, 15 জুলাই: "সবুজ-মেরুন জার্সি আমার জীবনের সবকিছু। পূর্ব পাকিস্তান থেকে এখানে এসেছিলাম। ইস্টবেঙ্গল আমার প্রথম ক্লাব হলেও জীবনের সবকিছু প্রাপ্তি মোহনবাগানে। তাই এবছরের যে জীবনকৃতি সম্মান ক্লাব আমাকে দিচ্ছে তা সমস্ত সম্মানের উপরে ৷" অনাবিল আনন্দ ঝরে পড়ছিল সত্তরোর্ধ্ব বলাই দে-র গলায়। 29 জুলাই মোহনবাগান দিবসে তার হাতে তুলে দেওয়া হবে জীবনকৃতি সম্মান (Balai Dey to get Lifetime Achievement award on Mohun Bagan Day this year)। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ময়দানে সোনালি বিকেলে দর্শকভরা গ্যালারির সামনে ফুটবল নৈপুণ্য প্রদর্শনের মধ্যে প্রশংসা এবং নিন্দা দুই জুটতো। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে সদস্য-সমর্থকের আবেগের রেশ আজও স্পর্শ করে আছে বলাই দে-র মনে। আবেগে বুজে আসা গলায় বলাই দে বলেন, "জানেন কাদের সঙ্গে খেলেছি। তারা যেমন বড় ফুটবলার আবার বড় মানুষও। প্রতিপক্ষ দলে খেললেও একটা স্পোর্টিং মেন্টালিটি, বন্ধুত্বপূর্ণ সহবস্থান ছিল। গত দুই বছরে সেই সব বন্ধুদের অনেকেই চলে যেতে দেখলাম। আমার সম্মান উৎসর্গ করছি সেই সব হারিয়ে ফেলা বন্ধুদের ৷"

হাওড়া সালকিয়ার রাস্তা পেরিয়ে লিলুয়ার ভট্টনগর মীরপাড়ার শক্তি সংঘের উলটোদিকের দোতলা বাড়ি বলাই দে-র ঠিকানা। 1946 সালের 11 অক্টোবর ফরিদপুরের কোটালিয়া পাড়ার গুয়াখোলা গ্রামে বলাই দে-র জন্ম। 1961 সালে মাত্র 15 বছর বয়সে খুলনা হিরোজের হয়ে খেলা শুরু। ঢাকা মহমেডান, খুলনা টাউনের হয়ে খেলার সুবাদে পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান। পরের বছর 1965 সালে কলকাতায় আত্মীয় বাড়িতে ঘুরতে এসে স্থানীয় ক্লাবের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন। সেখান থেকেই বিএনআর কর্তাদের চোখে পড়েন। 425 টাকা মাসিক মাহিনাতে বিএনআর-এ যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পান। এই সময় ছোট্ট সমস্যার কথা ধরিয়ে দেন ইস্টবেঙ্গলের প্রবাদপ্রতীম কর্তা জ্যোতিষ গুহ। যেহেতু বলাই দে পূর্ব পাকিস্তানের ফুটবলার সেই কারণে ফিফার অনুমতি লাগবে। যা বিএনআর নিয়ে আসতে পারবে না। এই অবস্থায় জ্যোতিষ গুহ প্রস্তাব দেন তিনি এই অনুমতি নিয়ে এসে দেবেন। বদলে বলাই দে-কে ইস্টবেঙ্গলে খেলতে হবে। লাল-হলুদের এই প্রস্তাবে রাজি হন তিনি বলাই দে। খেলার জন্য মোট 6 হাজার টাকা দেওয়া হয়। সঙ্গে ভাইয়ের চাকুরি। এক মরশুম ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষা করেন।

তৃপ্ত বলাই দে বলেন, "সেইসময় থঙ্গরাজ, সনৎ শেঠ ইস্টবেঙ্গলের হয়ে নিয়মিত খেলছেন। আমি কিছু কিছু ম্যাচ খেলছি। এই অবস্থায় নতুন মরশুমের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসে এরিয়ান। ইস্টবেঙ্গলের সম পরিমাণ টাকা দিতে না পারলেও নিয়মিত সুযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। 1967 সালে যোগ দিয়েছিলাম এরিয়ানে। সেই বছর খুব ভালো খেলার সুবাদে পড়ের মরশুমের জন্য প্রস্তাব আসে মোহনবাগানের থেকে। 1968-71 এটাই সেরা সময়। মোহনবাগানের জার্সিতে খেলার সুবাদেই 1969 সালে ভারতীয় দলের ডাক পেয়েছিলাম। সেদিক থেকে বলা যেতেই পারে দুই দেশের জার্সি চাপানোর কৃতিত্ব রয়েছে আমার ৷" সবুজ-মেরুন জার্সিতে কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্ড, ডুরান্ড কাপ, রোভার্স কাপ, বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জিতেছেন তিনি। পূর্ব পাকিস্তানে ক্লাব ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার ক্রিকেট নৈপুণ্যের প্রশংসা করেছিলেন হানিফ মহম্মদ। সেই সব স্মৃতি ছিয়াত্তর বছরের মানুষটির কাছে পরম পাওয়া।

আরও পড়ুন: বকেয়া না-মেটালে লিগ খেলতে রাজি নয় মোহনবাগান

রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান, জেনারেল মানেক শ, জেনারেল ভুট্টোর কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। বলাই দে বলছেন, "জীবনে বহু সম্মান পেয়েছি। 1974 সাল পর্যন্ত ক্লাব ফুটবল খেলেছি কৃতিত্বের সঙ্গে। সরে আসার আগে শেষ দুই বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলেছিলাম। অফিস ফুটবল খেলেছি 88 সাল পর্যন্ত। আজও মাঠে গেলে সবাই ছুটে আসে। এটাই প্রাপ্তি। তবে সবার ওপরে মোহনবাগানের জীবনকৃতি সম্মান। এটা আমার জীবনের সেরা।" পাশাপাশি সবুজ-মেরুন জার্সিতে খেলার কারণেই স্টেট ব্যাংকের চাকরি পেয়েছিলেন, তাই বাঙাল হলেও মনে প্রাণে তিনি মোহনবাগানী ৷ জানান ছিয়াত্তরের বলাই দে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.