কলকাতা, 18 জানুয়ারি: কলকাতা শহরের বেশ কিছু বড় রেস্তরাঁর কর্মীদের ATM প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত থাকার যোগসূত্র পেল পুলিশ । ক্রেতা-কর্তৃপক্ষের অজান্তেই রেস্তরাঁ থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে গ্রাহকের ATM কার্ডের তথ্য । রেস্তরাঁর ওয়েটারদের হাতেই ঘুরছে স্কিমার যন্ত্র । অভিযোগ, কর্মীদের অনেকেই হাত মিলিয়েছে ATM প্রতারকদের সঙ্গে ।
ATM প্রতারকদের কাছ থেকে মোটা টাকার কমিশনের বিনিময়ে তারা ক্রেতার বিশ্বাসের সুযোগ নিচ্ছে । ইতিমধ্যেই বাইপাসের ধারে একটি বিরিয়ানির রেস্তরাঁসহ একগুচ্ছ নামী রেস্তরাঁর নাম পেয়েছে পুলিশ ৷ এসব রেস্তরাঁ থেকে পাচার হচ্ছে ATM কার্ডের তথ্য ।
বিল মেটানোর জন্য অনেক জায়গাতেই কর্মীদের হাতে ATM কার্ড তুলে দেন ক্রেতারা । কেউ কেউ পিনও বলেন বিশ্বাস করে ৷ খাবার টেবিল থেকে বিল মেটানোর কাউন্টারের যাওয়ার মধ্যেই হাতের কারসাজিতে অত্যন্ত ছোট স্কিমিং ডিভাইস ATM কার্ড সোয়াইপ করছে কোনও কোনও ওয়েটার, অভিযোগ এমনই ৷ তাতে ATM কার্ডের সমস্ত তথ্য চলে যাচ্ছে ওই স্কিমিং মেশিনে । আর মাঝের কোনও সময় পিন নম্বর লিখে রাখছে কাগজে । তারপর তা তুলে দিচ্ছে গয়া গ্যাংয়ের হাতে ।
গয়ার মুদাসার খান এবং ইরফানউদ্দিনকে জেরা করে এমনই বিস্ফোরক তথ্য পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। তারা গত 8 মাস ধরে এই কাজ করছিল বলে জানিয়েছে পুলিশকে । তবে শুধু কলকাতা নয়, তারা হাত মিলিয়েছে হায়দরাবাদ, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মত শহরের বেশ কিছু রেস্তরাঁর ওয়েটারদের সঙ্গেও । সেখান থেকে তথ্য নিয়ে কলকাতায় ফিরে তারা তুলে নিয়েছে টাকা । আবার কলকাতায় যেসব কার্ড স্কিমিং করা হয়েছে সেই টাকা তোলা হয়েছে বিহার কিংবা অন্য কোন জায়গা থেকে। কাল রাতের দার্জিলিং মেলে তারা যাচ্ছিল উত্তর-পূর্বের মেঘালয়। শিলংয়ের কোনও ATM থেকে টাকা তোলার পরিকল্পনা ছিল তাদের । পুলিশের চোখে ধুলো দিতেই এই ব্যবস্থা ।
এই বিষয়ে প্রথমে পুলিশ চারটি অভিযোগ পায় । শুরু হয় তদন্ত ৷ এরপর ধৃতদের ল্যাপটপ থেকে 300 টি ATM- এর তথ্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়া উদ্ধার হয়েছে 38 টি ক্লোন করা ATM কার্ড, স্কিমার, ল্যাপটপ এবং রাইটার যন্ত্র। ধৃতরা দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ ৷ গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ইউটিউব দেখেই এই পদ্ধতি রপ্ত করে তারা ৷ নামী সংস্থা থেকে অর্ডার দিয়ে বানায় dx3 স্কিমার যন্ত্র । এর দাম পড়েছে 6000 টাকা ৷
কলকাতা পুলিশের পরামর্শ, সম্প্রতি যারা ওয়েটারদের হাতে ATM কার্ড দিয়ে পিন নম্বর বলেছেন, তাঁরা অবিলম্বে পিন বদলান ৷ প্রতারকদের নতুন ফন্দি রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে কলকাতা পুলিশকে। কলকাতা শহরের কোন কোন রেস্তরাঁর কর্মীরা কমিশনের বিনিময়ে এই প্রতারক দলের সঙ্গে কাজ করছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷