ETV Bharat / city

Terry Morris: আসানসোলের উত্তাল রক ব্যান্ড থেকে আজ বিশ্ব সঙ্গীত দরবারে টেরি মরিস

শুধুই কয়লা আর লোহার রুক্ষ শহর নয় । আসানসোলের (Asansol) অলিন্দেও একদা বেজে উঠত গিটারের ঝংকার । পাড়ায় পাড়ায় ব্যান্ড কনসার্টে পপ কিংবা কাউন্ট্রি মিউজিক । আজ সে সবই ম্লান । তবু সেই আসানসোল থেকে আজ বিশ্ব সঙ্গীতের দরবারে টেরি মরিস (Terry Morris) । ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় টেরির সঙ্গে সেই পুরনো ইতিহাস ছুঁয়ে দেখলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি তারক চট্টোপাধ্যায় ।

asansol-terry-morris-takes-rock-band-to-world-music-platform
Terry Morris: আসানসোলের উত্তাল রক ব্যান্ড থেকে আজ বিশ্ব সঙ্গীত দরবারে টেরি মরিস
author img

By

Published : Aug 9, 2022, 4:51 PM IST

আসানসোল, 9 অগস্ট : মফস্বলের পাড়ায় পাড়ায় কাঁধে গিটার নিয়ে ঘুরছে একদল যুবক-যুবতী । হালফিলে এই চিত্র বড় পরিচিত আসানসোলবাসীদের কাছে । কিন্তু তারপর কী হচ্ছে ? বাংলা ব্যান্ডের উত্তাল সময়ে আসানসোলেও হুজুগে বেশ কিছু বাংলা ব্যান্ড হয়েছিল বটে । কিন্তু সেসব অল্প ক’দিনেই ভেঙে গিয়েছে ।

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
প্রথম ব্যান্ড ‘দ্য হেলস্টোনস’

তবু নস্টালজিয়ার ঝুলিতে আছে আসানসোলের (Asansol) এক সোনালী সময় । 60-70 দশকের কাউন্ট্রি মিউজিক, রক অ্যান্ড রোল ও পপ ব্যান্ড । চেলিডাঙা, বুধার আসেপাশ-সহ আসানসোলের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পাড়াগুলোতে গড়ে উঠেছিল বেশ কয়েকটি কাউন্ট্রি, পপ ব্যান্ড ।

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
পরের ব্যান্ড দ্য ট্রিপ

সেই ব্যান্ডগুলির অনেকেই আজ আর এই পৃথিবীতে নেই । আবার অনেকেই বিশ্ব সঙ্গীতের দরবার ছুঁয়ে ফেলেছে । তেমনই একজন টেরি মরিস । একদা ভারতীয় টেরি মিশ্র আজ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে টেরি মরিস (Terry Morris) নামে পরিচিত । প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড ‘দ্য ইকোস’ (The Echoes)-এর সদস্য টেরি । গিটার ও তাঁর গানে সেদেশে পরিচিত নাম । দেশে-বিদেশে প্রচুর কনসার্ট করেন । অ্যালবামও রয়েছে ।

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
টেরি মরিস

টেরি আসানসোলের সেই ঘুপচি পাড়া থেকে আজ অনন্য কৃতিত্ব সাধন করেছেন মৌলিক গানবাজনায় । অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের নিয়ে তাঁর বিখ্যাত কমিউমিটি গান ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়ানস ফরএভার’ (Anglo Indians Forever) তাঁকে বিশ্বের অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের কাছে সমাদৃত করেছে । ইতিমধ্যেই দুবাই থেকেও টেরির মিউজিক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে । হাজার হাজার মানুষ সেই অ্যালবাম কিনেছেন ।

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
টেরি মরিস

টেরি মরিসের জন্ম বিহারের পাটনার খাগৌলে । পারিবারিক পদবী ছিল ‘মিশ্র’ । বাবা ছিলেন ভারতীয়, মা ছিলেন ব্রিটিশ উচ্চ শিক্ষিতা মহিলা । ছোট থেকে মায়ের সংস্পর্শে সাহেবী কায়দায় বড় হয়ে ওঠা টেরির । চাকরি সূত্রে মাইথনের পাশে ঝাড়খণ্ডের কুমারডুবিতে চলে আসেন টেরির বাবা । সঙ্গে টেরির মা এবং ছোট্ট টেরি । কয়েক বছরের মধ্যেই টেরির মা মাইথনে প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল তৈরি করেন । সেই স্কুলের নাম ছিল ভ্যালি স্কুল (Valley School) । সেখানেই জীবনের প্রথম পড়াশুনোর পাঠ টেরির । পরবর্তী কালে আসানসোলের সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুলে (St. Vincent High & Technical School) আবাসিক ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন তিনি । এরপরেই সঙ্গীতের দুনিয়ায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ও জীবনের অনন্য পথ চলা শুরু ।

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
টেরি মরিস

একদিকে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ‘কার ও টেগোর’ কোম্পানির প্রথম কয়লা উত্তোলন । তারই স্বার্থে প্রথমে রানিগঞ্জ ও পরে আসানসোলে রেলপথের সূচনা । আসানসোল রেল ডিভিশন গড়ে ওঠা । পূর্ব রেলে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলের মুখ্য প্রশাসনিক ভবন গড়ে ওঠে আসানসোলে । প্রচুর সাহেবদের আগমন ঘটে শহরে । বদলে যায় শহরের সংস্কৃতি ।

অন্যদিকে পরবর্তীতে স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের শিল্প স্থাপনে বার্নপুর, কুলটিতে আধুনিক জনপদ গড়ে ওঠে । আসানসোলে ইস্ট ইন্ডিয়া রেল তৈরি করে ‘ইউরোপিয়ান ইন্সটিটিউট’ বা ডুরান্ড ইন্সটিটিউট । সেখানে শুরু হয় রক, কাউন্ট্রি মিউজিকের কনসার্ট । আসানসোলে এসেই টেরি মরিস আকর্ষিত হয়ে পড়েন মিউজিকের প্রতি । তিনি বলেন, ‘‘খ্রিস্টান ব্রাদার হ্যারিসনের কাছে প্রথম গিটারের পাঠ নেওয়া আমার । এছাড়া গিটার ও গানের জন্য সেন্ট ভিনসেন্ট হাই ও
টেকনিক্যাল স্কুলের ব্যান্ড মাস্টার বার্নার্ড লিনকনের কাছেও চলতে থাকে প্রশিক্ষণ । 12 বছর বয়সেই আমি প্রথম গান কম্পোজ করি ।"

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
স্ত্রী এলাইনের সঙ্গে টেরি মরিস

সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুলেই গড়ে ওঠে ব্যান্ড ‘দ্য হেলস্টোনস’ (The Hailstones) । টেরি মরিস নিজগুণেই সেই ব্যান্ডের লিডার হয়ে ওঠেন । সেই সময় ইউরোপিয়ান ইন্সটিটিউট বা ডুরান্ড ইন্সটিটিউটে প্রচুর কনসার্টে অংশ নিয়েছে টেরি পরিচালিত সেই ব্যান্ড । পাশাপাশি অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের নৃত্যের অনুষ্ঠানেও টেরি মরিস একজন মিউজিসিয়ান ও গায়ক হিসেবে যোগ দিয়েছেন । কিশোর থেকে যুবক হওয়ার পথে ‘দ্য ট্রিপ’ নামে আরও একটি ব্যান্ডের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিলেন টেরি মরিস ।

বিটলস (Beatles)-সহ বিভিন্ন ব্যান্ডের গান তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে । কাউন্ট্রি গায়ক মারলে হ্যাগার্ড (Merle Haggard), জনি ক্যাস (Johnny Cash) তাঁর আইডল হয়ে যায় । রক অ্যান্ড রোল, পপ, কাউন্ট্রি মিউজিকে বুঁদ হয়ে যান টেরি মরিস । 60 ও 70-এর দশকে প্রচুর নিজেদের কম্পোজিশন তৈরি করেন টেরি । তখন থেকেই দেশের বিভিন্ন কোনায় টেরির নাম ছড়াতে শুরু করে ।

1971 সালে গ্র‍্যাজুয়েশনের পর বিয়ে করেন টেরি মরিস । দুই সন্তান হয় তাঁদের । সেই সময় লোকো কোয়ার্টারে থাকতেন তাঁরা । স্বামী স্ত্রী দু’জনেই ইস্কো কারখানায় চাকরিতে যোগ দেন । বেশ কয়েকবছর চাকরি করেছিলেন তাঁরা । এরপর টেরি আসানসোল এজি চার্চ স্কুলের (A.G. Church School) তত্বাবধায়ক বা কেয়ারটেকার হিসেবেও কাজে যোগ দেন ।

কিন্তু গান বাজনা থেমে থাকেনি । ঠিক এই সময়ে আসানসোলে বেশ কয়েকটি ওয়েস্টার্ন ব্যান্ডের আত্মপ্রকাশ ঘটে । ‘দ্য রক রিভাইভাল’ (The Rock Revival) নামে একটি ব্যান্ডে লিড সিঙ্গার ও গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন টেরি । বেশ কয়েকবছর সেই ব্যান্ডের সঙ্গে সঙ্গীত চর্চায় বুঁদ হয়ে থাকেন তিনি । এই সময় প্রচুর পপ গান তৈরি করেন টেরি । 1982 সালে পাকাপাকি ভাবে ভারত ছেড়ে চলে যান তিনি । প্রথমে ইংল্যান্ড । পরবর্তী কালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ।

সেখানে টেরি'র স্ত্রী একজন সফল ব্যবসায়ী নারী । টেরি রয়ে গিয়েছেন সঙ্গীতের দুনিয়ায় । গোটা বিশ্বে আজ তাঁর লক্ষ লক্ষ ফ্যান । অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড ‘দ্য ইকোস’-এর সদস্য টেরি । দেশে বিদেশে প্রচুর কনসার্ট করেন। দুবাই থেকে 2011 সালে টেরির অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছিল । সেই অ্যালবাম হাজার হাজার মানুষ কিনেছিলেন ।

বিশ্ব সঙ্গীতে আজ পরিচিত মুখ টেরি মরিস । কিন্তু আজও ভুলতে চান না তাঁর প্রিয় শহর আসানসোলকে । আর তাই সেই নস্টালজিয়া থেকেই তিনি লিখেছিলেন ‘দ্য স্ট্রিট অফ আসানসোল’ গানটি । যা ভাইরাল হয়ে যায় । আজও আসানসোলের নাম শুনলে আবেগে ভাসেন টেরি ।

ইটিভি ভারতকে তিনি বললেন "আসানসোলের অনেক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ আছে আজও । সেই যোগ আমি আমৃত্যু রাখতে চাই । জীবনের অন্যতম প্রিয় শহর আসানসোল । যে শহর আমার অনেক কিছু জানে । যে শহরে আমার শেকড় আছে । ভালোবাসি আসানসোলকে ।''

আরও পড়ুন : এক মঞ্চে শহরের 'কিশোরকুমার'রা সংবর্ধিত, নস্টালজিয়ায় ভাসল আসানসোল

আসানসোল, 9 অগস্ট : মফস্বলের পাড়ায় পাড়ায় কাঁধে গিটার নিয়ে ঘুরছে একদল যুবক-যুবতী । হালফিলে এই চিত্র বড় পরিচিত আসানসোলবাসীদের কাছে । কিন্তু তারপর কী হচ্ছে ? বাংলা ব্যান্ডের উত্তাল সময়ে আসানসোলেও হুজুগে বেশ কিছু বাংলা ব্যান্ড হয়েছিল বটে । কিন্তু সেসব অল্প ক’দিনেই ভেঙে গিয়েছে ।

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
প্রথম ব্যান্ড ‘দ্য হেলস্টোনস’

তবু নস্টালজিয়ার ঝুলিতে আছে আসানসোলের (Asansol) এক সোনালী সময় । 60-70 দশকের কাউন্ট্রি মিউজিক, রক অ্যান্ড রোল ও পপ ব্যান্ড । চেলিডাঙা, বুধার আসেপাশ-সহ আসানসোলের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পাড়াগুলোতে গড়ে উঠেছিল বেশ কয়েকটি কাউন্ট্রি, পপ ব্যান্ড ।

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
পরের ব্যান্ড দ্য ট্রিপ

সেই ব্যান্ডগুলির অনেকেই আজ আর এই পৃথিবীতে নেই । আবার অনেকেই বিশ্ব সঙ্গীতের দরবার ছুঁয়ে ফেলেছে । তেমনই একজন টেরি মরিস । একদা ভারতীয় টেরি মিশ্র আজ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে টেরি মরিস (Terry Morris) নামে পরিচিত । প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড ‘দ্য ইকোস’ (The Echoes)-এর সদস্য টেরি । গিটার ও তাঁর গানে সেদেশে পরিচিত নাম । দেশে-বিদেশে প্রচুর কনসার্ট করেন । অ্যালবামও রয়েছে ।

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
টেরি মরিস

টেরি আসানসোলের সেই ঘুপচি পাড়া থেকে আজ অনন্য কৃতিত্ব সাধন করেছেন মৌলিক গানবাজনায় । অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের নিয়ে তাঁর বিখ্যাত কমিউমিটি গান ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়ানস ফরএভার’ (Anglo Indians Forever) তাঁকে বিশ্বের অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের কাছে সমাদৃত করেছে । ইতিমধ্যেই দুবাই থেকেও টেরির মিউজিক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে । হাজার হাজার মানুষ সেই অ্যালবাম কিনেছেন ।

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
টেরি মরিস

টেরি মরিসের জন্ম বিহারের পাটনার খাগৌলে । পারিবারিক পদবী ছিল ‘মিশ্র’ । বাবা ছিলেন ভারতীয়, মা ছিলেন ব্রিটিশ উচ্চ শিক্ষিতা মহিলা । ছোট থেকে মায়ের সংস্পর্শে সাহেবী কায়দায় বড় হয়ে ওঠা টেরির । চাকরি সূত্রে মাইথনের পাশে ঝাড়খণ্ডের কুমারডুবিতে চলে আসেন টেরির বাবা । সঙ্গে টেরির মা এবং ছোট্ট টেরি । কয়েক বছরের মধ্যেই টেরির মা মাইথনে প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল তৈরি করেন । সেই স্কুলের নাম ছিল ভ্যালি স্কুল (Valley School) । সেখানেই জীবনের প্রথম পড়াশুনোর পাঠ টেরির । পরবর্তী কালে আসানসোলের সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুলে (St. Vincent High & Technical School) আবাসিক ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন তিনি । এরপরেই সঙ্গীতের দুনিয়ায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ও জীবনের অনন্য পথ চলা শুরু ।

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
টেরি মরিস

একদিকে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ‘কার ও টেগোর’ কোম্পানির প্রথম কয়লা উত্তোলন । তারই স্বার্থে প্রথমে রানিগঞ্জ ও পরে আসানসোলে রেলপথের সূচনা । আসানসোল রেল ডিভিশন গড়ে ওঠা । পূর্ব রেলে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলের মুখ্য প্রশাসনিক ভবন গড়ে ওঠে আসানসোলে । প্রচুর সাহেবদের আগমন ঘটে শহরে । বদলে যায় শহরের সংস্কৃতি ।

অন্যদিকে পরবর্তীতে স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের শিল্প স্থাপনে বার্নপুর, কুলটিতে আধুনিক জনপদ গড়ে ওঠে । আসানসোলে ইস্ট ইন্ডিয়া রেল তৈরি করে ‘ইউরোপিয়ান ইন্সটিটিউট’ বা ডুরান্ড ইন্সটিটিউট । সেখানে শুরু হয় রক, কাউন্ট্রি মিউজিকের কনসার্ট । আসানসোলে এসেই টেরি মরিস আকর্ষিত হয়ে পড়েন মিউজিকের প্রতি । তিনি বলেন, ‘‘খ্রিস্টান ব্রাদার হ্যারিসনের কাছে প্রথম গিটারের পাঠ নেওয়া আমার । এছাড়া গিটার ও গানের জন্য সেন্ট ভিনসেন্ট হাই ও
টেকনিক্যাল স্কুলের ব্যান্ড মাস্টার বার্নার্ড লিনকনের কাছেও চলতে থাকে প্রশিক্ষণ । 12 বছর বয়সেই আমি প্রথম গান কম্পোজ করি ।"

Asansol Terry Morris takes rock band to world music platform
স্ত্রী এলাইনের সঙ্গে টেরি মরিস

সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুলেই গড়ে ওঠে ব্যান্ড ‘দ্য হেলস্টোনস’ (The Hailstones) । টেরি মরিস নিজগুণেই সেই ব্যান্ডের লিডার হয়ে ওঠেন । সেই সময় ইউরোপিয়ান ইন্সটিটিউট বা ডুরান্ড ইন্সটিটিউটে প্রচুর কনসার্টে অংশ নিয়েছে টেরি পরিচালিত সেই ব্যান্ড । পাশাপাশি অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের নৃত্যের অনুষ্ঠানেও টেরি মরিস একজন মিউজিসিয়ান ও গায়ক হিসেবে যোগ দিয়েছেন । কিশোর থেকে যুবক হওয়ার পথে ‘দ্য ট্রিপ’ নামে আরও একটি ব্যান্ডের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিলেন টেরি মরিস ।

বিটলস (Beatles)-সহ বিভিন্ন ব্যান্ডের গান তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে । কাউন্ট্রি গায়ক মারলে হ্যাগার্ড (Merle Haggard), জনি ক্যাস (Johnny Cash) তাঁর আইডল হয়ে যায় । রক অ্যান্ড রোল, পপ, কাউন্ট্রি মিউজিকে বুঁদ হয়ে যান টেরি মরিস । 60 ও 70-এর দশকে প্রচুর নিজেদের কম্পোজিশন তৈরি করেন টেরি । তখন থেকেই দেশের বিভিন্ন কোনায় টেরির নাম ছড়াতে শুরু করে ।

1971 সালে গ্র‍্যাজুয়েশনের পর বিয়ে করেন টেরি মরিস । দুই সন্তান হয় তাঁদের । সেই সময় লোকো কোয়ার্টারে থাকতেন তাঁরা । স্বামী স্ত্রী দু’জনেই ইস্কো কারখানায় চাকরিতে যোগ দেন । বেশ কয়েকবছর চাকরি করেছিলেন তাঁরা । এরপর টেরি আসানসোল এজি চার্চ স্কুলের (A.G. Church School) তত্বাবধায়ক বা কেয়ারটেকার হিসেবেও কাজে যোগ দেন ।

কিন্তু গান বাজনা থেমে থাকেনি । ঠিক এই সময়ে আসানসোলে বেশ কয়েকটি ওয়েস্টার্ন ব্যান্ডের আত্মপ্রকাশ ঘটে । ‘দ্য রক রিভাইভাল’ (The Rock Revival) নামে একটি ব্যান্ডে লিড সিঙ্গার ও গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন টেরি । বেশ কয়েকবছর সেই ব্যান্ডের সঙ্গে সঙ্গীত চর্চায় বুঁদ হয়ে থাকেন তিনি । এই সময় প্রচুর পপ গান তৈরি করেন টেরি । 1982 সালে পাকাপাকি ভাবে ভারত ছেড়ে চলে যান তিনি । প্রথমে ইংল্যান্ড । পরবর্তী কালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ।

সেখানে টেরি'র স্ত্রী একজন সফল ব্যবসায়ী নারী । টেরি রয়ে গিয়েছেন সঙ্গীতের দুনিয়ায় । গোটা বিশ্বে আজ তাঁর লক্ষ লক্ষ ফ্যান । অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড ‘দ্য ইকোস’-এর সদস্য টেরি । দেশে বিদেশে প্রচুর কনসার্ট করেন। দুবাই থেকে 2011 সালে টেরির অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছিল । সেই অ্যালবাম হাজার হাজার মানুষ কিনেছিলেন ।

বিশ্ব সঙ্গীতে আজ পরিচিত মুখ টেরি মরিস । কিন্তু আজও ভুলতে চান না তাঁর প্রিয় শহর আসানসোলকে । আর তাই সেই নস্টালজিয়া থেকেই তিনি লিখেছিলেন ‘দ্য স্ট্রিট অফ আসানসোল’ গানটি । যা ভাইরাল হয়ে যায় । আজও আসানসোলের নাম শুনলে আবেগে ভাসেন টেরি ।

ইটিভি ভারতকে তিনি বললেন "আসানসোলের অনেক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ আছে আজও । সেই যোগ আমি আমৃত্যু রাখতে চাই । জীবনের অন্যতম প্রিয় শহর আসানসোল । যে শহর আমার অনেক কিছু জানে । যে শহরে আমার শেকড় আছে । ভালোবাসি আসানসোলকে ।''

আরও পড়ুন : এক মঞ্চে শহরের 'কিশোরকুমার'রা সংবর্ধিত, নস্টালজিয়ায় ভাসল আসানসোল

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.