কলকাতা, 20 মে : সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করলেও যাতে গ্রেফতার করতে না পারে, তার জন্য হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চে দৌড়েও কোনও সুরাহা পেলেন না রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Any Bench of Calcutta HC Refuses to give Protection Partha Chattarjee to Avoid CBI Arrest) ৷ কলকাতা হাইকোর্টের কোনও বেঞ্চেই সুরক্ষা পেলেন না তিনি । গত 18 মে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) সিঙ্গল বেঞ্চের দেওয়া নির্দেশ পরিবর্তন করল না ডিভিশন বেঞ্চ । তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Bengal Minister Partha Chatterjee) মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর যে ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি, তা এই মুহূর্তে বাধ্যতামূলক নয় বলেই মনে করেছে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি আনন্দ মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ৷
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ৷ আদালতের নির্দেশে তিনি সিবিআইয়ের কাছে হাজিরাও দিয়েছেন ৷ তাঁকে আবার তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ব্যুরো ৷ কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ ছিল প্রয়োজনে পার্থকে হেফাজতে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সিবিআই ৷
শুক্রবার সেই নিয়ে সুরক্ষা চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৷ ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র প্রশ্ন তোলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মামলার পক্ষভুক্ত না করেই কি করে সিঙ্গেল বেঞ্চ সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয় ? সিঙ্গেল বেঞ্চ নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে নির্দেশ দিয়েছে । তাই অবিলম্বে এই নির্দেশ বাতিল করা উচিত ডিভিশন বেঞ্চের ।’’
আরও পড়ুন : Adhir Slams Partha : পার্থ চোর প্রমাণিত হয়েছে, এখন রাজ্যের টাকায় সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে : অধীর
একই সঙ্গে তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো নিয়ে সিঙ্গল বেঞ্চের বক্তব্যও তুলে ধরেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘এমনকি তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথাও বলেছেন বিচারপতি । সিঙ্গল বেঞ্চ কি করে এই নির্দেশ দেন ! তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়ার সত্ত্বেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সমাজের চোখে নিচে নামিয়ে দেওয়া প্রচেষ্টা করা হয়েছে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে ।’’
এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর সতীর্থর হয়ে আদালতে সওয়াল করেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের কোনও বক্তব্য না শুনেই কোনও সময় না দিয়েই তাঁকে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল ! এই ভাবে আদালত নির্দেশ দিতে পারে নাকি ? বাগ কমিটির রিপোর্ট এবং মামলাকারীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়া যায় ? সিঙ্গল বেঞ্চ কিছু খতিয়ে না দেখেই নির্দেশ দিয়েছে । পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহযোগিতা করতে তৈরি । কিন্তু সুরক্ষা দেওয়া হোক । যাতে আমার বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয় ।’’
অন্যদিকে মামলাকারীদের পক্ষে বিকাশ ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, ‘‘নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে । যে কমিটি তৈরি হয়েছিল, তারাই এই নিয়োগে মূল ভূমিকা পালন করেছে । প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীই এই কমিটি সুপারিশ করেছিল । ফলে এখানে পরিষ্কার ৷’’
অন্যদিকে সিঙ্গল বেঞ্চের শুনানি হয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে ৷ সেখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়াল করেন ৷ তিনি সেখানে বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় মামলায় কোনও পক্ষ নয় । কিন্তু আপনার নির্দেশের জন্য সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে । সিবিআইকে আপনি নির্দেশ দিয়েছেন প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে । যে কমিটি নিয়োগ করা হয়েছিল, সেখানে নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ ৷ কিন্তু বাগ কমিটিতে কোথাও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম নেই ।’’
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিন্তু কমিটিতে যে সদস্যরা ছিলেন, তাঁরা সরাসরি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তাঁকেই রিপোর্ট করতে হত । আমি এখন নির্দেশ দেব শিক্ষা দফতরকে ফাইল আদালতে জমা করতে যাতে বিষয়টি পরিষ্কার হয় ।’’
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর সম্পত্তির হিসেব আদালতে জমা করতে হবে গরমের ছুটির পর । আমি চোখ বুজিয়ে কোনও বাচ্চার মতো নির্দেশ দিইনি । আমি সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে তারপর নির্দেশ দিয়েছি ।’’
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কল্যাণকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি জানেন তাঁর (পার্থ চট্টোপাধ্যায়) সারমেয় পুষতে কত খরচ হয় ?’’ তখন কল্যাণ বলেন, ‘‘কিন্তু বিচার পাওয়ার অধিকার সবার আছে। ওঁর সম্পত্তি সম্পর্কে আমার ধারণা নেই ।’’
এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, ‘‘ওঁর এত আয় কোথা থেকে হয় ? রাজনৈতিক নেতাদের এত সম্পত্তি কোথা থেকে হয় ?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সেদিন রাতে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি । মধ্যরাতে কলকাতা হাইকোর্টের 8 জন অফিসার তাঁদের কাজ করছেন হাসি মুখে । তাঁদের ভঙ্গিটাই এই রকম ছিল যে আমরা কাজ করছি । আমার কলকাতা হাইকোর্টের কর্মী অফিসারদের সম্পর্কে ধারণাই বদলে গিয়েছে । রাত 2 টোর সময় হাসতে হাসতে তাঁরা বাড়ি গিয়েছেন ।’’
এর পর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় সিবিআইয়ের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করতে তৈরি । সুরক্ষা দেওয়া হোক যাতে তাঁকে গ্রেফতার না করা হয় ।’’ বিচারপতি বলেন, ‘‘সম্ভব নয় ।’’ একই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, এখন থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মামলায় যুক্ত করা হল ।
অন্যদিকে এসএসসির কমিটির তিন সদস্য সুকান্ত আচার্য, প্রবীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ও টি পাঁজা তাঁদের সম্পত্তির হিসাব আদালতে জমা দিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : CBI Summons Partha : আগামী সপ্তাহে ফের পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তলব সিবিআইয়ের