কলকাতা, 29 অক্টোবর : অর্থমন্ত্রী থেকে অর্থ দফতরের উপদেষ্টা হতে পারেন অমিত মিত্র (Amit Mitra) ৷ অর্থ দফতর নিজের হাতেই রাখতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷
রাত পোহালেই খড়দা বিধানসভার ভোট । 2011 এবং 2016 বিধানসভার নির্বাচনে খড়দা থেকেই জিতেছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র । একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অর্থমন্ত্রী হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাননি এই প্রবীণ অর্থনীতিবীদ । ফলে নভেম্বরের শুরুতে অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে । এই অবস্থায় রাজ্যের পরবর্তী অর্থমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে । নবান্ন সূত্রে খবর, মন্ত্রিত্ব গেলেও অর্থ দফতরের দায়িত্ব থেকে এখনই অব্যাহতি মিলছে না অমিত মিত্রের । যতদূর জানা যাচ্ছে, নভেম্বরের শুরু থেকে তাঁকে অর্থ দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা করে রাখা হতে পারে । এক্ষেত্রে অর্থ দফতর চলবে তাঁর পরামর্শ মেনেই ।
এখন প্রশ্ন, তাহলে নতুন অর্থমন্ত্রী হবেন কে ! যতদূর খবর, রাজ্যে নতুন করে অর্থমন্ত্রী কাউকে করা হবে না । সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা দফতরের সংখ্যা আরও একটি বাড়তে পারে । কারণ এক্ষেত্রে অর্থ দফতরের দায়িত্ব নিজের হাতেই রাখতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী ।
মমতা যত প্রজেক্ট নিয়েছেন, সবটাই হাতের তালুর মতো জানতেন অমিত ৷ অর্থনীতির এই ছাত্রের বিদেশি ডিগ্রিও আছে । গোটা দেশে ইতিমধ্যেই প্রশংসিত তাঁর কাজ । তিনি বণিকসভা ফিকির (FICCI) চেয়ারম্যানও ছিলেন ৷ পাশাপাশি বিভিন্ন বণিকসভার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন । কাজেই তাঁকে উপদেষ্টা রেখেই বাজেট ইত্যাদি কাজ হবে বলে ধারণা ।
এবার প্রশ্ন, অর্থ দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর মুখ্যমন্ত্রী যদি সামলানও, কিন্তু সর্বক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে তো চাই । প্রথমে ভাবা হয়েছিল শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম । কিন্তু তাঁকে ফের নতুন দায়িত্ব দিতে চান না মুখ্যমন্ত্রী, এমনটাই সূত্রের খবর । উঠে এসেছে পুর এবং নগরোন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নাম । তিনি হয়তো এই দফতরের প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন । চন্দ্রিমা আইনজীবী হিসাবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন । তিনি কর বা ট্যাক্সের কাজ যথেষ্ট ভাল বোঝেন । এরই মধ্যে কেন্দ্রের ডাকা জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে চন্দ্রিমা প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ৷ তাঁর কাজে মমতা যথেষ্ট খুশি । সুতরাং অর্থ দফতরের সর্বক্ষণের দায়িত্ব তিনি পেতে পারেন ।
অমিত মিত্র 2011 সাল থেকেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে এসেছেন । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক বেশ মসৃণ । শিল্পপতি হওয়ার দৌলতে দেশে তাঁর একটি পরিচিতিও আছে । ফিকির প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল পদ্মশ্রী সম্মানেও সম্মানিত হয়েছেন । কিন্তু তার বাইরেও তাঁর একটা পরিচয় আছে । তাঁর মা বেলা মিত্র ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইঝি । নেতাজির দাদা সুরেশচন্দ্র বসু ছিলেন তাঁর বাবা । বেলাদেবী জড়িত ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর সঙ্গে । অর্থমন্ত্রীর বাবা হরিদাস মিত্র যেমন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, তেমনই ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যও । স্বাভাবিকভাবেই অমিত মিত্রকে প্রথম থেকেই খুব পছন্দ করতেন মমতা । কেন্দ্রে তিনি যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন অমিত মিত্রের পরামর্শেই তিনি দেশের রেল বাজেটে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলে বেশ কিছু হাসপাতাল ও রেলের কারখানা গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন ৷
অমিত মিত্র যখন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হন তখন রাজ্য কার্যত দেনায় ডুবেছিল । ধারাবাহিক আর্থিক সমস্যার মধ্যেও কিন্তু অর্থমন্ত্রী হিসাবে তিনি একের পর এক সরকারি প্রকল্প কার্যকর করেছেন সফল ভাবেই । ঋণের বহর বাড়লেও, এপর্যন্ত চালু হওয়া সবক'টি সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে বেশিরভাগ মানুষের কাছে কিছু না কিছু সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে । একদিকে রাজ্যের অর্থসঙ্কট, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ, সামাজিক প্রকল্পে বিপুল বরাদ্দ এবং দৈনন্দিন অর্থনীতি- এত কিছুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে অর্থনীতি পরিচালনা করায় অমিতের ওপর মমতার আস্থা আরও বেড়েছে । তাই অমিতকে বাদ রেখে রাজ্যের অর্থনীতি পরিচালনার ভার অন্য কারও ওপর ছাড়তে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী । সেই কারণেই অমিতকে রাজ্যের আর্থিক উপদেষ্টা করে অর্থ দফতরের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই হিসাবে দেশে তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হবেন যিনি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলাবেন ৷ অর্থাত্ জন্ম হতে চলেছে আরও একটা ইতিহাসের ।
আরও পড়ুন : leander Paes joins TMC : লিয়েন্ডারকে দলে টেনে গোয়া সফরে বড় চমক মমতার