চণ্ডীগড়, 23 জুলাই : পরীক্ষা হয়নি ৷ তা সত্ত্বেও উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ নিয়ে বাড়ছে বিতর্ক ৷ সৌজন্যে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের (West Bengal Council of Higher Secondary Education) সভানেত্রী মহুয়া দাস (Mahua Das) ৷ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে উচ্চমাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করেন তিনি ৷ আর সেখানেই ঘটে বিপত্তি ৷ মহুয়া জানান, এবার উচ্চমাধ্যমিকে সর্বাধিক 499 নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে মুসলিম কন্যা রুমানা সুলতানা ৷ মেয়েটি যে ইসলাম ধর্মাবলম্বী, একথা বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করেন মহুয়া ৷ আর তাতেই হতবাক রাজ্য়ের আমজনতা থেকে বিশিষ্টরা ৷ একজন কৃতীর পরিচয় তার শিক্ষা, তার সাফল্য ৷ কিন্তু সেসব ছাপিয়ে মহুয়া যেভাবে মেয়েটির ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করলেন, তা ভাল চোখে দেখছেন না এ রাজ্যের মানুষ ৷ এমনকী, বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির সলতে পাকানোর কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে টুইটারে (Twitter) সরব হয়েছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান তথা রাজ্য বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য (Amit Malviya) ৷
গোটা ঘটনায় সরাসরি মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন অমিত ৷ তাঁর মতে, সংসদ সভানেত্রীর এই আচরণ তোষণের রাজনীতির চরম উদাহরণ ৷ শুক্রবার অমিত তাঁর টুইট বার্তায় লেখেন, ‘‘দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় এক ছাত্রীর ধর্মীয় পরিচয়ের নিরিখে তার শিক্ষাগত সাফল্যকে যেভাবে খাটো করলেন বোর্ডেরই এক আধিকারিক, তাতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বাংলায় তোষণের রাজনীতি সীমা ছাড়িয়ে গেল ৷ তিনি (ওই আধিকারিক) বারবার উল্লেখ করলেন, ওই মেয়েটি মুসলিম ! এই শিক্ষার্থীদের আর কত কী সহ্য করতে হবে ?’’
আরও পড়ুন : বাংলার সংস্কৃতির উন্নতির কথা তৃণমূলের ইস্তাহারে নেই, অভিযোগ অমিত মালব্যর
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, অমিতের প্রশ্ন অন্যায্য নয় মোটেই ৷ যেভাবে একজন পরীক্ষার্থীর ধর্ম উল্লেখ করেছেন মহুয়া, তাতে আদতে সেই সম্প্রদায়কেই সামগ্রিকভাবে খাটো করা হয়েছে ৷ ভাবখানা এমন, যেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী কেউ এমন সাফল্য পেতে পারেন না ! অথচ বাস্তব কিন্তু তা বলে না ৷ সমাজের নানা ক্ষেত্রে, সাহিত্য থেকে সংস্কৃতি, প্রশাসন থেকে সরকার, সর্বত্রই এ রাজ্য তথা দেশে ইসলাম ধর্মবলম্বীদের সাফল্যের খতিয়ান যথেষ্ট দীর্ঘ ৷
রাজনৈতিক বিশ্লেকদের একাংশ মনে করছেন, একজন সরকারি আধিকারিক, যিনি কিনা মানুষ গড়ার কারিগরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন, তাঁর মুখে এমন মন্তব্যে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি না হওয়াটাই অস্বাভাবিক ৷ বাংলায় বিধানসভার ভোটপর্ব মিটেছে এখনও ছ’মাস হয়নি ৷ সেই ভোটে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম এজেন্ডা ছিল বিজেপি তথা গেরুয়াবাহিনীর উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ ৷ বাংলার মানুষ যে এখনও ধর্মীয় ভেদাভেদে অভ্যস্ত নন, ভোটের ফলই তার প্রমাণ ৷ সেখানে এমন ঘটনা সেই ভোটাররা কখনই ভালভাবে মেনে নেবেন না ৷
আরও পড়ুন : শুধু বোমা শিল্পই বেড়েছে মমতার রাজ্যে, টুইটে কটাক্ষ অমিত মালব্যর
অন্যদিকে, এই ঘটনা হিন্দুপন্থীদের হাতেও অস্ত্র তুলে দেবে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের ৷ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণ বা আরও স্পষ্ট করে বললে মুলিম তোষণের অভিযোগ নতুন নয় ৷ বিজেপি বরাবরই এই ইস্য়ুকে হাতিয়ার করতে চেয়েছে ৷ করোনা আবহে এনআরসি, সিএএ-র মতো বিষয়গুলি সাময়িকভাবে ধামাচাপা পড়ে গেলেও সমস্য়া কিন্তু মেটেনি ৷ সেখানে ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি দিতে পারে, এমন যেকোনও ঘটনাই অনভিপ্রেত ৷
বিজেপির অভিযোগ, অন্য সম্প্রদায়ের ভিড় বাড়ায় ভারতের নানা প্রান্তে নাকি হিন্দুরা বিপন্ন ! অধিকাংশ দেশবাসীকে সেই তত্ত্ব বিশ্বাস করাতে পারলে আগামী দিনে ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিজেপির অনুকূলে যাবে ৷ চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে যা বিজেপি বিরোধীদের কাছে মোটেও কাম্য নয় ৷ এমন একটা পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সভানেত্রীর মন্তব্য যে বিজেপি লুফে নেবে, তা বলাই বাহুল্য ৷ অমিতের টুইটও তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ৷ একইসঙ্গে সরকারি আধিকারিকের এমন আচরণকে সমর্থনও করছেন না তাঁরা ৷ কারণ, এতে যে শুধুমাত্র রাজনীতির গন্ধ আছে, তাই নয় ৷ সেইসঙ্গে, এমন ঘটনা কিশোর মনেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে ৷